#কলকাতা: নানা বয়সের ছোটদের ও তাদের মা-বাবাদের কমিউনিটি 'উড়ান'। একসঙ্গে কাজ করা, সহমর্মিতা, বন্ধুত্ব, পারস্পরিক যোগাযোগ, উপস্থাপনা, স্কুলে যা যা শেখা হয়না সেইসব দক্ষতা, ক্যাম্প/কর্মশালার মধ্যে দিয়ে গড়ে তোলে 'উড়ান'। ছোটদের জন্য ছোটদের লেখা। আঁকা বইও নিয়মিত প্রকাশ করে কলকাতার এই কমিউনিটি।
লকডাউনে বিরক্ত ঘরবন্দি ছোটদের জন্য উড়ান গত তিনমাসে করেছে নানা হাতেকলমে অনলাইন কর্মশালা। কার্টুন আঁকা, রান্না করা, পপ আপ বই তৈরি, গুগল ম্যাপিং। কখনও সাহিত্য সভা, আবার কখনও বা যেমন খুশি সাজো। কোভিড ও আমফান দূর্গতদের পাশেও দাঁড়িয়েছে উড়ান কমিউনিটি। গ্রীষ্ম ও শীতকালে গ্রাম ও শহরের ছোটদের নিয়ে প্রতি বছর দূরে কোথাও আয়োজন করা হয় ক্যাম্প। তবে করোনা আবহে এবারে আর একসঙ্গে হওয়ার উপায় নেই, তাই ষষ্ঠ সামার ক্যাম্পও এখন চলছে অনলাইনে। নানারকম হাতে কলমে শেখা, একসঙ্গে হৈ হুল্লোড় করে কিছু করা, প্রশ্নোত্তর - এই সব দিয়ে এবছরের অনলাইন কর্মশালা সাজিয়েছেন উড়ানের পরিচালক মালিনী মুখোপাধ্যায় ও অংশুমান দাশ।
কলকাতা ছাড়াও মাসকাট ও লন্ডন থেকেও ৩০ জন খুদে যোগ দিয়েছে এই অভিনব অনলাইন ক্যাম্পে। কী আছে এই বিশেষ ক্যাম্পে ? আছে ফিল্ম তৈরি শেখা , সবাই মিলে একসঙ্গে বানানো হবে একটা ছোট্ট সিনেমা। গল্প, স্ক্রিপ্ট লেখা, শ্যুটিং সব হাতে কলমে শেখানোর উদ্যোগ। কার্টুন আঁকার কায়দা কানুন শিখেও ভীষণ উৎসাহ পেয়েছে ছোট্ট অনোহিতা৷ বায়না ধরেছে আবার আসবে ক্যাম্পে। ক্রিয়েটিভ থিংকিং-এর ধাঁধা, মাথা ঘামানোর ওয়ার্কশপে অংশ নিয়ে বেজায় খুশি পড়ুয়ারা। কর্মশালায় অংশ নিয়ে তাদের আক্ষেপ, 'এরকম ক্লাস রোজ রোজ স্কুলে কেন হয় না'।
শহরের নামজাদা ব্যঙ্গচিত্রকর উদয় দেব যেমন শেখালেন ফেলে দেওয়া জিনিষ দিয়ে চলমান পুতুল, দেশলাই বাক্স দিয়ে বাঘ, পেপার কাপ দিয়ে সিংহ। অন্যদিকে জার্মানি-কিরঘিজস্তান-কেনিয়া-বাংলাদেশ থেকে অনলাইনে উড়ানের বন্ধুরা শিখিয়েছেন রান্না। ছোটদের সঙ্গে আড্ডা হয়েছে নানা দেশের খাদ্য সংস্কৃতি নিয়েও। ফ্রান্সিসকা স্ক্যাফল শিখিয়েছেন ইতালিয়ান পাস্তা। কিরঘিজস্থান থেকে শাখনোজা কুরবানলিয়েভা শেখালেন প্লুভ। যেখানে বোঝা গেল আমাদের পোলাওয়ের সঙ্গে কী মিল! নিজের বাগান থেকে সবজি তুলে গিতুয়ান্জা গাছিয়ে শেখালেন কেনিয়ার খাবার মুকিমো।
বর্তমান পরিস্থিতিতে সবটাই হল অনলাইনে। প্রযুক্তিকে হাতিয়ার করে গল্প হল তাঁর বাগান নিয়ে। আর বাংলাদেশ থেকে সুদীপা বড়ুয়া শেখালেন হালিম। ছোটদের সঙ্গে বাবা মায়েদেরও দেখা গেল সমান উৎসাহ। উদ্যোগের প্রশংসা করে অভিভাবকরা বললেন "এই ব্যতিক্রমী ওয়ার্কশপে আমাদের সন্তানরা অন্যদের সঙ্গে কথা বলে, অনেক কিছু হাতে কলমে শিখে, অনেক কিছু অজানাকে জেনে ওরা আজ অনেকটাই অবসাদ মুক্ত। কার্যত চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি থাকতে থাকতে ওদের জীবনকে একঘেয়েমি গ্রাস করেছিল'। সবমিলিয়ে খাঁচাবন্দি পাখিদের উড়িয়ে দিলে ওরা যেমন আনন্দে আত্মহারা হয়, 'উড়ান' - এর উড়ানে চেপে ছোটরাও আজ ভীষণই খুশি।