#বীরভূম: 'পাকা কথা' প্রায় হয়েই গিয়েছিল। ঠিক হয়েছিল, ঘাসফুল ছেড়ে তিনি পা বাড়াচ্ছেন পদ্মের দিকেই। কিন্তু শেষ মুহূর্তে তৃণমূল সাংসদ তথা যুব তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি সান্ধ্য় বৈঠকেই সিদ্ধান্ত বদল করেছিলেন বীরভূমের তৃণমূল সাংসদ শতাব্দী রায়। ফের আস্থা রেখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপর। কিন্তু 'কঠিন' ভোটের আগে দলের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের দিনই বেশ কিছুটা 'অন্য়' সুরে কথা বলতে দেখা গেল বীরভূমের তারকা সাংসদকে। তারাপীঠে পুজো দিয়ে অবশ্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূয়সী প্রশংসাও করেছেন তিনি।
শুক্রবার শতাব্দী বলেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই তৃতীয় বারের জন্য় বাংলার মুখ্য়মন্ত্রী হবেন। মানুষের আশা-ভরসা আছে তাঁর উপর। তাই তাঁর মুখ্য়মন্ত্রিত্ব ফেরা নিয়ে কোনও সংশয় নেই।' এরপরই দলত্য়াগীদের নিয়ে প্রশ্ন ধেয়ে আসে সম্প্রতি বিক্ষুব্ধ থেকে ফের দলের অনুগত হয়ে ওঠা শতাব্দীর দিকে। আর তারই উত্তরে অনেকটাই সুর নরম করতে দেখা যায় তাঁকে। বলেন, 'অনেকের মনেই রাগ, অসন্তোষ ছিল। দলীয় নেতারা তাঁদের সঙ্গে কথা বলতে পারতেন। বোঝাতে পারতেন।' কিন্তু তাতে কি কাজ হতো? শুভেন্দু অধিকারী, রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়েরদের সঙ্গে বারবার বৈঠকেও কোনও রফাসূত্র বের করতে ব্য়র্থ হয়েছে তৃণমূল। তাই আলোচনা করে দলবদল আটকানো কতটা সম্ভব? এবার অবশ্য় শতাব্দীর নিশানায় সেই দলত্য়াগীরাই। তাঁর জবাব, 'যাঁরা দলের এই দুঃসময়ে ছেড়ে গিয়েছেন, তাঁরা ঠিক করেননি।'
ভোটের বাকি নেই একমাসও। দলবদল অবশ্য় অব্য়াহত রয়েছে। কিন্তু নবান্নের কুর্সি দখলের যুদ্ধে আর দলত্য়াগীদের গুরুত্ব দিতে নারাজ তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। তাই দলত্য়াগীদের নিয়ে এদিন শতাব্দী সুর নরম করলেও বিষয়টিকে লঘু করে দেখানোরই চেষ্টা করেছেন রাজ্য়ের শিশু ও নারীকল্য়াণ মন্ত্রী শশী পাঁজা। শুক্রবার তৃণমূল ভবনে মন্ত্রীর সংক্ষিপ্ত প্রতিক্রিয়া, 'বড় দল আমাদের। বড় পরিবারে এমনটা হতেই পারে। শতাব্দী দি'র এমনটা মনে হতেই পারে। মাঝে তাঁরও ক্ষোভ হয়েছিল। এখন তিনি ভালো ভাবে কাজ করছেন। এমন ঘটনাকে তৃণমূল আর গুরুত্ব দিচ্ছে না।' তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষও বলেন, 'এতদিন দলে থেকে সমস্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করে যাঁরা দল ছাড়লেন, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা যে করা হয়নি, তা তো নয়। সাংসদ, মন্ত্রী, একাধিক চেয়ারম্য়ান পদ পেয়েও দল ছেড়েছেন অনেকে, এঁরা দলের ক্ষতি করতেই বদ্ধপরিকর ছিল। দল তাঁদের যথেষ্ট সম্মান দিয়েছে। শতাব্দীর কথায় আলাদা কোনও তাৎপর্য খুঁজে পাচ্ছি না।'
এককথায় বলা যেতে পারে, বাংলার জন্য় আজ 'সুপার ফ্রাইডে'। নীলবাড়ি দখলের লক্ষ্যে শুক্রবারই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করতে চলেছে শাসক-বিরোধী সকলেই। সূত্রের খবর, বিজেপি ও বাম-কংগ্রেস-আব্বাস সিদ্দিকির জোট প্রথম দু'দফার প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করলেও তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায় ২৯৪ আসনেই এদিন নাম ঘোষণা করে দিতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে শতাব্দীর মতো নেত্রীর মুখে দলত্য়াগীদের নিয়ে নরম সুর শাসক দলের জন্য় কিছুটা বিড়ম্বনার তো বটেই। যদিও দলের বিরুদ্ধে মুখ খুলে মাস দেড়েক আগেই দিল্লি গিয়ে পদ্মশিবিরে নাম লেখানোর বিষয়ে একপ্রকার নিশ্চিত হয়েই গিয়েছিলেন শতাব্দী। এরপরই সমস্য়া মেটাতে আসরে নামেন অভিষেক। পুরস্কৃত করা হয় শতাব্দীকে। দলের রাজ্য কমিটির সহ সভাপতি করা হয় তাঁকে। সমস্ত অভিমান ভুলে শতাব্দী এরপর স্পষ্ট করে বলে দেন, 'তৃণমূলেই ছিলাম, আছি, থাকব। তৃণমূলই আগামী ভোটে জিতবে।' এদিনও তৃণমূলের জেতা বা মমতার মুখ্য়মন্ত্রী পদে তৃতীয়বার বসা নিয়ে কোনও সংশয় প্রকাশ না করলেও কেন দলত্য়াগীদের বিষয়ে অনেকটা নরম হলেন শতাব্দী, সেই বিষয়টাই ভাবাচ্ছে তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্বকে।