#কলকাতা: সকাল ১১:২৫ মিনিট। একটা হোয়াটসঅ্যাপ টেক্সট। আর তারপরেই বদলে গেল গোটা চিত্রনাট্য। মঙ্গলবার রাতেই তৃণমূল শিবিরের বক্তব্য ছিল, শুভেন্দুর সাথে আলোচনা হয়েছে সদর্থক। যদিও সুর-তাল-ছন্দ কাটল বুধবার সকালেই। যখন শুভেন্দু অধিকারীর টেক্সট এল, "একসঙ্গে কাজ করা সম্ভব নয়।" এরপরেই বদলে গিয়েছে তৃণমূলের চেহারা। শুভেন্দু পর্বে মধ্যস্থতাকারী সৌগত রায় জানাচ্ছেন, আর আলোচনার সম্ভাবনা এখন নেই।
সৌগত রায়ের বক্তব্য, গতকাল যা যা আলোচনা হয়েছিল। সেই আলোচনার সত্যনিষ্ঠ সবকিছুই জানিয়েছি। এখন যদি কেউ তার ব্যক্তিগত মত বদল করে সেটা একেবারেই তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত।" যদিও শুভেন্দু অধিকারী সরাসরি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি। ১৪ ঘণ্টার মধ্যেই ছন্দপতন। ‘সব সমস্যা মিটে গিয়েছে। তৃণমূলেই থাকছেন শুভেন্দু অধিকারী।’ মঙ্গলবার রাতে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ও প্রশান্ত কিশোরের বৈঠকের পর তৃণমূল কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সাংসদ সৌগত রায় এমনটাই দাবি করেছিলেন। এমনকী, তিনি জানান তাঁর ফোন থেকেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে কথাও বলেন শুভেন্দু।
রাতের নাটকীয় ঘটনার সুর কাটল বুধবার দুপুরেই। এদিন নেতা সৌগত রায়কে হোয়াটস অ্যাপে এসএমএস বা হোয়াটসঅ্যাপ টেক্সট-এর মাধ্যমে শুভেন্দু নিজের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিলেন। ‘আমার বক্তব্যের এখনও সমাধান করা হয়নি। সমাধান না করেই আমার ওপর সব চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ৬ ডিসেম্বর আমার সাংবাদিক সম্মেলন করে সব জানানোর কথা ছিল। কিন্তু তার আগেই আপনারা প্রেসকে সব জানিয়ে দিলেন। ফলে একসাথে কাজ করা মুশকিল। আমাকে মাফ করবেন।’
শুভেন্দু যে দলের বর্তমান শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের প্রতি অসন্তুষ্ট, তা তিনি আগেই জানিয়েছিলেন। নন্দীগ্রাম দিবসে সভায় দাঁড়িয়ে শুভেন্দু বলেন, ‘আমি প্যারাসুটেও নামিনি, লিফটেও চড়িনি, ধাপে ধাপে এই জায়গায় আন্দোলনের মধ্য দিয়ে পৌঁছেছি’। একের পর এক কর্মসূচি গ্রহণ করেন তৃণমূলের ব্যানার-পতাকা ছাড়াই।এবং দলনেত্রীর নাম পর্যন্ত উচ্চারণ করেননি। জেলায় জেলায়, পাহাড় থেকে জঙ্গলমহল, 'দাদার অনুগামী' পোস্টার দেখতে পাওয়া গিয়েছে গত এক মাসে।পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমের মন্তব্যের কড়া উত্তর দেন শুভেন্দু অধিকারী। সংঘাত চরমে ওঠে গত ১০ নভেম্বর, নন্দীগ্রাম দিবসে।
একদিকে যখন ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির ব্যানারে কর্মসূচি করছেন শুভেন্দু অধিকারী। তখন শুভেন্দু সভাস্থল থেকে কিছুটা দূরে তৃণমূলের ব্যানারে কর্মসূচি করছেন ফিরহাদ হাকিম, দোলা সেন’রা। শুভেন্দু অধিকারীর কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে তাঁর সম্পর্কে তির্যক মন্তব্য করছেন শ্রীরামপুরের সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়, অখিল গিরি। ব্যক্তিগত পর্যায়ে এই আক্রমণ মেনে নিতে পারেননি শুভেন্দু অধিকারী। ফলে গত শুক্রবার ৩ দফতরের মন্ত্রিত্ব এবং বিভিন্ন সংস্থার দায়িত্ব ছাড়েন শুভেন্দু। এরপরই রাজ্য রাজনীতিতে শুভেন্দুকে ঘিরে বইতে শুরু করে জল্পনার স্রোত।
শুভেন্দুর সঙ্গে সমস্যা বাড়তে শুরু করার পর থেকেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চালিয়ে যান দলের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায়। তার চেষ্টাতেই এবং দলের আরও একজন সাংসদ সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যস্থতায় মঙ্গলবার শুভেন্দুর উত্তর কলকাতার একটি বাড়িতে বৈঠকে বসেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় প্রশান্ত কিশোর এবং শুভেন্দু অধিকারী। বৈঠক শেষে সংবাদমাধ্যমের কাছে সৌগত রায় দাবি করেন সব সমস্যা মিটে গিয়েছে। শুভেন্দু দলেই আছেন। যে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় প্রায় প্রতিদিনই শুভেন্দুর উদ্দেশ্যে কটাক্ষ মন্তব্য করছিলেন, মঙ্গলবার রাতের নাটকীয় বৈঠকের পর তাঁরও সুর যা ছিল, বুধবার দুপুরে সব সুর-তাল কেটে গেল।
ABIR GHOSHAL
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Sougata Roy, Suvendu Adhikari