কলকাতা: বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিককে জেলে ভরে দেওয়ার তৃণমূলের অভিযোগ অস্বীকার করল বিজেপি। এদিন বিধানসভায় শুভেন্দু অধিকারীর বিরুদ্ধে স্বাধীকার ভঙ্গের নোটিশ সরকারি ভাবে গৃহীত হওয়ার পর বিজেপি পরিষদীয় দলের মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা বলেন, "এমন কোনও কথা বিরোধী দলনেতা বলেননি। উল্টে, সেচমন্ত্রীই শুভেন্দু অধিকারীর বাবা শিশির অধিকারীর রাজনৈতিক অবস্থান নিয়ে কটাক্ষ করেছেন। সেই কারণে আমরা বিরোধী দলনেতার সঙ্গে আলোচনা করে সেচমন্ত্রীর বিরুদ্ধে স্বাধীকার ভঙ্গের মতো কোনও নোটিশ দেওয়ার কথা বিবেচনা করছি।"
তৃণমূলের অভিযোগ, শুক্রবার বিধানসভায় পঞ্চায়েত দফতরের বাজেট ডিমান্ড আলোচনায় সময় সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিককে এক মাসের মধ্যে জেলে ভরে দেওয়ার হুমকি দেন শুভেন্দু অধিকারী। তার পরেই সেচমন্ত্রী স্পিকারের দৃষ্টি আকর্ষন করে বলেন, ''স্যার, আমাকে জেলে ভরে দেবে বলে হুমকি দিচ্ছেন বিরোধী দলনেতা। আমি নিরাপত্তার অভাব বোধ করছি।" সেচমন্ত্রীর দাবিকে সমর্থন করে স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ও বলেন, "আমিও শুনেছি। শুভেন্দু বাবুর এমন কথা বলা উচিত নয়। আপনি যদি মনে করেন বিরোধী দলনেতার বিরুদ্ধে স্বাধীকার ভঙ্গের নোটিশ দেবেন। দিতে পারেন। আমি বিবেচনা করে দেখব।"
এর পর গতকালই শাসক দলের তরফে সেই প্রস্তাব জমা পড়ে স্পিকারের কাছে। আজ সেই প্রস্তাবকে বিধানসভায় পেশ করার অনুমতি দেন স্পিকার। তাঁর নির্দেশে আজ বিধানসভায় সেই প্রস্তাব পেশ করেন পার্থ ভৌমিক। প্রস্তাব গ্রহণ করে স্পিকার বলেন, "প্রিভিলেজ কমিটি এই অভিযোগ খতিয়ে দেখে বিধানসভার পরবর্তী অধিবেশনের শেষ হওয়ার আগে রিপোর্ট দেবে।"
এর পরেই আজ এই ইস্যুতে বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা বলেন, "স্বাধীকার ভঙ্গের নোটিশের কোনও অর্থ নেই। আমি নিজে সেই সময় বিরোধী দলনেতার পাশেই ছিলাম। উনি এমন কোনও মন্তব্য করেননি।" উল্টে মনোজের অভিযোগ, "সেচমন্ত্রী পার্থ ভৌমিক শুভেন্দু অধিকারীর বাবার নাম করে বলেছেন, শিশির বাবু কোন দলে? শিশির অধিকারী একজন সাংসদ। তাঁর সঙ্গে বিধানসভার কোনও সম্পর্ক নেই। তাঁকে টেনে এহেন মন্তব্য করার জন্য আমরা সেচমন্ত্রীর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া যায় তা ভাবছি।"
গতকালই হাউসে এই বিতর্ক বাঁধার পর, বাইরে তা নিয়ে কোনও মন্তব্য করেননি শুভেন্দু। ঘনিষ্ট মহলে শুভেন্দু নাকি বলেছেন, বিধানসভায় করা কোনও বক্তব্য রেকর্ড না হলে, তার ভিত্তিতে প্রিভিলেজ গ্রাহ্য হয় না। সূত্রের মতে, পার্থ ভৌমিকের সঙ্গে তর্কাতর্কির সময়ে শুভেন্দু মাইক্রোফোনে বলেননি। ফলে তা রেকর্ড হওয়ার কথা নয়।
যদিও, মনোজ টিগ্গার এই মন্তব্যে স্পিকার বলেন, ''আমি তো নিজে শুনেছি। সে কথা আমি বিধানসভাতেও বলেছে। এটা বিধানসভার রেকর্ডেই রয়েছে। তাছাড়া, প্রিভিলেজ নোটিশের ভিত্তিতে আমি যখন বিধানসভায় সিদ্ধান্ত ঘোষণা করি, তখন বিজেপির সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন। তাঁরা প্রিভিলেজ নোটিশের কোনও বিরোধিতাও করেন নি। তখন ওরা অস্বীকার করলে বিবেচনা করা যেত।"
আরও পড়ুন, প্ল্যান 'বি' রণকৌশলেই বিধানসভার গেটে SFI, বুঝতেও পারেনি পুলিশ
আরও পড়ুন, গ্রামে গ্রামে ১২ হাজার কিমি রাস্তা, সাত দফা প্রচারের কৌশল বলল নবান্ন
পরিষদীয় মন্ত্রী শোভনদেবও বলেন, "মাইক্রোফোনে রেকর্ড না হলেও, স্পিকার যদি অভিযোগকে মান্যতা দেন, তাহলে তা গ্রাহ্য।" গতকাল, এই ঘটনার পর, আজ বিধানসভায় আসেননি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। বিজেপি পরিষদীয় দল সূত্রে জানা গেছে, এই ইস্যুতে শুভেন্দু অধিকারীর সঙ্গে আলেচনা করে সোমবার পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে। সোমবার বিধানসভার চলতি অধিবেশনের শেষ দিনে উপস্থিত থাকার কথা মুখ্যমন্ত্রীর। সেই আবহে শুভেন্দুর হুমকি বিতর্ক নতুন মাত্রা পেতে পারে।
অরূপ দত্ত
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: BJP, Suvendu Adhikari