#কলকাতা: সুভাষিণীর স্নেহের আঁচলে আজ গড়ে উঠেছে হাসপাতাল। স্বামীকে চিকিৎসার অভাবে হারিয়েছিলেন। আর তেমন করে বিনা চিকিৎসায় যাতে গরীব মানুষকে মরতে না হয়, তাই পণ করেছিলেন, বাঁচার মন্ত্র খুঁজবেন তিনি। ২৩ বছর বয়সে নিজের সন্তানদের মানুষ করার ভার তিনি তুলে নিয়েছিলেন নিজেরই হাতে।
স্বামীর মৃত্যুর পর নাকি মাত্র পাঁচ পয়সা আয় করতে সুভাষিণী মিস্ত্রী। খাওয়া দাওয়া, থাকার জন্য খরচ হত চার পয়সা, আর দৈনিক এক পয়সা করে তিনি জমাতেন। এরপর শাকসবজি বিক্রি করতে শুরু করলে একটু আয়ের পরিমাণ বাড়লেও কখনওই নিজের বিলাসিতার কারণে বাজে খরচ তিনি করেননি। মায়ের কাঁধে ভর করেই চার সন্তানের পড়াশোনার যাত্রা শুরু। সত্যি, অসম্ভবকে সম্ভব করেছিলেন তিনি। সন্তান অজয়কে ডাক্তার করে গড়ে তুলেছিলেন। আর তারপর শুরু হয়েছিল অন্য এক স্বপ্ন সত্যি করার লড়াই। সেই স্বপ্ন সাকার করতেই তিলে তিলে জমানো অর্থে শুরু হয় হাসপাতাল বানানোর কাজ।
সেই হিউম্যানিটি হাসপাতাল এখন গরিব মানুষের চিকিৎসার কাজ করে চলেছে প্রতিনিয়ত, সেই হাসপাতালের স্বপ্ন নাকি শুরু হয়েছিল একটা ছোট্ট কুঁড়ে ঘরে। তার পর বহরে বাড়তে বাড়তে এখন হাসপাতালে চিকিৎসা পান অনেক মানুষ। শুধু তাঁর চিকিৎসক সন্তান নন, হাসপাতালে অনেক অন্য চিকিৎসকও বিনামূল্যে গরিব মানুষের কাছে পৌঁছে দেন চিকিৎসা। নিজের সন্তানকে সুশিক্ষায় বড় করে তোলা তো বটেই, সুভাষিণী এখন যেন অনেক গরিব মানুষেরও মাতৃস্থানীয়। কারণ তাঁদের জীবন বাঁচে এই হাসপাতালের চিকিৎসাতেই।
পার্ক সার্কাস সেতুর নীচে সবজি নিয়ে বসার দিনগুলো এখনও সুভাষিণীর মনে পরে কি না, জানা নেই, হয়ত পরে। কারণ মাতৃত্বের দায়িত্ব পালনে সেই দিনগুলোর কঠিন লড়াই তাঁকে আজ এমন এক স্থানে বসিয়েছে, যেখান থেকে তিনি রক্তের সন্তানের পাশেও জুটিয়ে নিয়েছেন অনেক সন্তান। যাঁর স্নেহচ্ছায়া অবিরাম প্রাণে ভরসা জোগায় অসংখ্য সন্তানসম গরিব মানুষকে।
পদ্মশ্রী সম্মানে তাঁকে ভূষিত করেছে ভারত। তবু বছর দুয়েক আগে সাংবাদিকদের সামনে সুভাষিণী বলেছেন, ‘আমার কাজ শেষ হয়েছে, এবার আরও বেশি কর্মী নিয়ে দুই হাসপাতালকেই ২৪ ঘণ্টা পরিষেবা দেওয়ার মতো করে গড়ে তুলতে হবে। কোনও একদিন সেই কাজ হবে। আশা করি সরকার সাহায্য করবে।’ দু’বছর আগে সুভাষিণীর কথাতেও ছিল আরও একটু কিছু করার চেষ্টা।
মায়েরা বোধহয় এমনই হন। সুভাষিণীর মতো দাঁতে দাঁত চেপে লড়াই করার শক্তি যাঁদের থাকে, তাঁরা হয়ে ওঠেন উদাহরণ।