#রায়পুর: এ যেন আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপ। মাস শেষে বেতনের সময় হলেই জ্বলে উঠবে প্রদীপ, মিলবে বেতন। আর তারপর স্কুলের খোঁজ করতে গেলেই ম্যাজিক। কোথায় স্কুল! স্কুল তো নেই। স্কুলের ভবন নেই। স্কুলের পড়ুয়া নেই। শুধু আছেন ৩ জন শিক্ষক। আর আছে তাঁদের বেতন। ২০১৩ সালে চাকরিতে যোগদানের পর থেকে নিয়মিত বেতন পাচ্ছেন তাঁরা। ৯ বছরেও সেই নিয়মে ছেদ নেই। ক্লাস হল না। চক ডাস্টারের ছোঁয়া পেল না ব্ল্যাকবোর্ড। অথচ ৩ শিক্ষক দিব্যি মাস শেষে মায়না পেয়ে গেলেন! রায়পুর জুনিয়র হাইস্কুলের এ'হেন ঘটনায় তাজ্জব গ্রামের বাসিন্দারাও।
দক্ষিণ ২৪ পরগনার বারুইপুর মহকুমার সোনারপুর থানার চম্পাহাটি পোস্ট অফিসের অন্তর্গত রায়পুর গ্রাম। সবুজে ঘেরা একটা জনপদ। গ্রামে ৪ টি স্কুল থাকলেও দিনভর ঘুরেও মিলল না 'রায়পুর জুনিয়র হাইস্কুল'-এর হদিশ। অথচ কাগজে-কলমে ২০১১ সাল থেকে স্কুলটি রয়েছে শিক্ষা দপ্তফতরের হিসেবে। ২০১৩ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশন নিয়োগ সুপারিশপত্র দেয় স্কুলের ৩ জন শিক্ষককে। ২০১৩ সালেই ৩ জন শিক্ষক, গণিতের পঙ্কজ কুমার দাস, ইতিহাসের প্রকাশ সর্দার এবং ইংরেজির দেবলীনা সেন নিযুক্ত হন রায়পুর জুনিয়র হাইস্কুলে।
ষষ্ঠ শ্রেণীর পড়ুয়া দীপ বিশ্বাস, সেও জানাচ্ছে তাঁদের গ্রামে রায়পুর জুনিয়র হাইস্কুল বলে কোনও বিদ্যালয় নেই। গ্রামের একমাত্র হাইস্কুল রায়পুর জিতেন্দ্র বিদ্যামন্দির। মাধ্যমিক পর্যন্ত পড়ানো হয় সেখানে। সেই স্কুলের পরিচালন সমিতির অন্যতম সদস্য সুকান্ত মণ্ডলের কথায়, '' রায়পুর প্রাথমিক বিদ্যালয়কে উন্নত করে জুনিয়র হাইস্কুল করার কথা শুনেছিলাম। তবে বাস্তবে তার কোনও অস্তিত্ব আজ পর্যন্ত খুঁজে পাইনি আমরা।''
পরীক্ষায় সফল হয়ে শিক্ষক পদে যোগ দিয়েছেন এই ৩ শিক্ষক। আপাতত তাঁরা নিজেদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কায়। খোদ তাঁদের আইনজীবী উজ্জ্বল রায়ও বিস্মিত এমন স্কুলের কথা জেনে। স্থানীয় স্কুল এসআই কীভাবে নির্দেশ দিয়ে কাছাকাছি অন্য স্কুলে ৩ শিক্ষককে ক্লাস করাচ্ছেন, সেই নিয়েও প্রশ্ন তাঁর।
সবুজে ঘেরা জনপদের নতুন আশ্চর্যের শুরুটা ২০১১ সালে। ২০১১ সাল থেকে এখনও পর্যন্ত রায়পুর জুনিয়র হাইস্কুলে ঘটে চলা ঘটনাক্রম দেখে নিন একনজরে
--২২ জুন ২০১১ সালে নতুন এই উচ্চ প্রাথমিক স্কুলের জন্য প্রভিশনাল রেকগনিশন দায় নেয় রাজ্যের মধ্যশিক্ষা পর্ষদ।
--সাব-ইন্সপেক্টর স্কুল, সোনারপুর সার্কেল(SE) দক্ষিণ ২৪ পরগনাকে স্কুলের অ্যাড হক কমিটির সদস্য সম্পাদক বানিয়ে স্কুল বাড়ি নির্মাণে হাত লাগাতে বলে।
--এডুকেশন ডিরেক্টরেট ২৬ অগাস্ট ২০১১ স্কুলের জন্য ৩ জন শিক্ষক এবং ১ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী পদের অনুমোদন দেয়।
--২০১৩ সালে স্কুলের জন্য ৩ জন শিক্ষক নিযুক্ত করার জন্য সুপারিশ করে স্কুল সার্ভিস কমিশন।
--এরপরই ৩ জন শিক্ষক নিযুক্ত হয়। গণিতে নিযুক্ত হন পঙ্কজ কুমার দাস, ইতিহাসে প্রকাশ সরদার এবং ইংরেজির দেবলীনা সেন ।
--৩১ জানুয়ারি ২০১৪ সালে স্কুল ইন্সপেক্টর সোনারপুর সার্কেল জেলা স্কুল পরিদর্শককে চিঠি দিয়ে জানায়, রায়পুর জুনিয়র হাইস্কুল নির্মাণ প্রক্রিয়া শুরু না হওয়ার কথা। কারণ হিসেবে বলা হয়, পাশাপাশি স্কুল রায়পুর জিতেন্দ্র বিদ্যামন্দিরের করা মামলার কথা।
--৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ সালে জেলা স্কুল পরিদর্শককে চিঠি দিয়ে রাইপুর জুনিয়র হাইস্কুলের টিচার ইনচার্জ অনুরোধ করেন শিক্ষকদের অনলাইন অনুমোদন দেওয়ার জন্য।
--ফেব্রুয়ারি ২০১৫, সর্বশিক্ষা মিশনের আধিকারিকরা পরিদর্শন করেন এবং অনুসন্ধান রিপোর্টে জানান কোনও স্কুল বাড়ি নির্মাণ হয়নি।
--স্কুলবাড়িহীন, পড়ুয়াশূন্য স্কুলের অ্যাডহক কমিটি ৩১ জুলাই, ২০১৫ সালে সিদ্ধান্ত নেয় স্কুল নির্মাণে যাবতীয় অর্থ ফেরত দেওয়ার।
--২ মার্চ ২০২১ সালে অ্যাসিস্ট্যান্ট ইনস্পেক্টর অফ স্কুল, জেলা স্কুল পরিদর্শককে রিপোর্ট দিয়ে জানান, স্কুলের কোনও বাড়ি নেই। স্কুলের জন্য বরাদ্দ অর্থ ফেরত এসেছে এবং এই নতুন স্কুল তৈরির কোনও সম্ভাবনাও নেই। যে তিনজন শিক্ষক নিযুক্ত হয়েছিলেন, তাঁদের কাছেপিঠে স্কুলে কাজ দেওয়ার কথা বলা হলেও, বাস্তবে দেখা গিয়েছে সেই সমস্ত স্কুল ইতিমধ্যেই শিক্ষকে সম্পৃক্ত।
ARNAB HAZRA
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Sonarpur