কলকাতা: প্রধানমন্ত্রী কৃষি বিমা যোজনা গ্রহণ করেনি নরেন্দ্র মোদির গুজরাতও। শনিবার, বিধানসভায় কৃষি বাজেট বিতর্কে বিরোধীদের তোলা অভিযোগের জবাবে মোদির গুজরাতকে দৃষ্টান্ত করলেন কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়। শোভনদেব বলেন, "শুধু আমাদের রাজ্যই নয়, সারা দেশে গজরাত সহ মোট ১০ টি রাজ্য ও ৫ টি কেন্দ্রশাসিত এলাকা প্রধানমন্ত্রী কিষান বিমা যোজনার অন্তর্ভুক্ত নয়৷"
২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনে রাজ্যের কৃষক সম্প্রদায়কে পাশে পেতে রাজ্যের শাসকদল তৃণমূলের বিরুদ্ধে এই প্রচারকে সামনে এনেছিল বিজেপি। বিজেপির অভিযোগ ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শুধুমাত্র নিজের 'ইগো' চরিতার্থ করতে প্রধানমন্ত্রীর নামাঙ্কিত পিএম কিষান বিমা যোজনা গ্রহণ না করে রাজ্যের ৭৩ লক্ষ গরিব কৃষককে কেন্দ্রীয় সরকারের দেওয়া ফসল বিমার সুযোগ থেকে বঞ্চিত করেছে। ২১-এর নির্বাচনের পর রাজ্য যদিও, কেন্দ্রের এই বিমায় রাজ্যের ৩১ লক্ষ কৃষকের নাম নথিভুক্ত করেছে। কিন্তু, এখনও প্রায় ৪২ লক্ষ কৃষক কেন্দ্রীয় বঞ্চনার শিকার৷ কেবলমাত্র রাজনৈতিক কারণে।
সামনেই পঞ্চায়েত ভোট। গ্রাম বাঙলার এই ভোটে রাজ্যের কৃষক সমাজের একটা বড় প্রভাব রয়ছে। সম্ভবত, সে কথা মাথায় রেখেই শনিবার বিধানসভায় কৃষি বাজেট সংক্রান্ত আলোচনায় কৃষিমন্ত্রী নিজেই টেনে আনলেন কৃষকদের ফসল বিমা সংক্রান্ত বিতর্ক। বিজেপির উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, "আমাদের বিরোধী বিজেপি প্রায়ই অভিযোগ করে কৃষক স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে একমাত্র পশ্চিমবঙ্গই নাকি প্রধানমন্ত্রী কিষান বিমা যোজনা গ্রহণ করেনি। আসল কথাটা হল, ওরা জানেন না শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয় দেশের ১০ টি রাজ্য ও ৫ টি কেন্দ্র শাসিত অঞ্চলও এই প্রকল্প গ্রহণ করেনি। সবচেয়ে বড় কথা যে গুজরাট ওদের মডেল, সেই নরেন্দ্র মোদির গুজরাতও কিন্তু এই বিমার আওতার বাইরে। তাহলে গুজরাতও কৃষক স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে চলেছে, এটা কি ওরা মেনে নেবেন?"
শোভনদেবের এই প্রশ্নের কোনও স্পষ্ট জবাব মেলেনি বিজেপির তরফে। বিধানসভার বাইরে, বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গার সাফাই, "এই তথ্য ওঁরা কোথায় পেলেন তা ওঁরা বলতে পারবেন। তবে, আগে ওঁরা গুজরাতের হারে রাজ্য সরকারি কর্মচারিদের মহার্ঘ ভাতাটা দিন।"
যদিও, মন্ত্রী শোভনদেব রীতিমতো ১০টি রাজ্যের নামের তালিকা দিয়েই তার দাবি করেছেন। শোভনদেবের দাবি, এই তালিকা ও তার সব তথ্যই কেন্দ্রের দেওয়া। তালিকাভুক্ত ১০ টি রাজ্য হল, পশ্চিমবঙ্গ, বিহার,ঝাড়খণ্ড, মেঘালয়, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড, অরুণাচলপ্রদেশ, তেলেঙ্গানা,পাঞ্জাব ও গুজরাত।
রাজ্য কৃষি দফতরের দাবি, মূলত দু তিনটি কারণে এই কেন্দ্রীয় বিমা গ্রহণ করেনি রাজ্য। প্রথমত, কেন্দ্রীয় বিমায় ফসলের বিমার একটা অংশ কৃষককে মেটাতে হয়। কিন্তু, আমাদের রাজ্যে কৃষকদের বিমার টাকা রাজ্য সরকারই মেটায়। দ্বিতীয়ত, প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে ফসলের ক্ষতি হলে সেই অর্থ ৬০ দিনের মধ্যে কৃষকের অ্যাকাউন্টে দিতে হবে এটাই রাজ্যের আইন। সেক্ষেত্রে, অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে উপগ্রহ সমীক্ষার মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহ করে কৃষকের হাতে ৩০ থেকে ৪৫ দিনের মধ্যে টাকা পৌঁছে দেয় কৃষি দফতর। সর্বোপরি কেন্দ্রীয় বিমার যোগ্য হতে লাগে নানা শর্ত। সেখানে রাজ্যের বিমায় কৃষক এবং তাঁর জমি থাকাটাই একমাত্র বিবেচ্য। সে কারণে, কেন্দ্রীয় বিমার ফাঁদে রাজ্যের কৃষকদের আমরা বিব্রত করতে চাই না।
বিজেপির মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গার অভিযোগ করেন, "রাজ্য বীজ উৎপাদন ও বন্টনে সমতা রক্ষা করতে পারছে না। সারের দামও নিয়ন্ত্রণে নেই। সে কারণে কৃষকদের চাষ করে ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।" বিরোধীদের এই সমালোচনার জবাবে মন্ত্রী বলেন, "আমরা আলুর বীজ উৎপাদনে স্বয়ম্ভর না হলেও, অনেকটাই অগ্রগতি হয়েছে। একদিনে হয় না। কিন্তু, আলু, পেঁয়াজের মত দু একটি ফসল বাদে অনেক ক্ষেত্রেই আমরা নিজেদের বীজের প্রয়োজন মিটিয়ে ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড, অসমের মত রাজ্যে রফতানি করছি।"
কৃষিতে রাজ্যের সাফল্যের পরিসংখ্যান দিয়ে মন্ত্রী শোভনদেব বলেন, "আপনারা প্রায়ই বলেন, আমরা পিছিয়ে পড়ছি। কিন্তু, কেন্দ্র সরকারই এই রাজ্যকে টানা ৬ বার কৃষিরত্ন সম্মান দিয়েছে। দেশের সর্বশ্রেষ্ট কৃষি বিজ্ঞান কেন্দ্র এ রাজ্যের কেচবিহারে। উৎপাদনশীলতার নিরিখে আমরা দেশের মধ্যে প্রথম। আর কৃষিঋণের ক্ষেত্রে আমরা সারা দেশে সর্বনিম্ন। এসবের জন্য আপনাদের গর্বিত বোধ করা উচিত। দেশের স্বার্থে রাজ্যের কৃষিতে উৎপাদনশীলতা আরো বাড়াতে কৃযি গবেষণা ও উন্নত প্রযুক্তি দরকার। রাজ্যের স্বার্থে বিরোধীদেরও উচিত তাতে শামিল হওয়া।"
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।