রাজ্যের সব পরিবারকে স্বাস্থ্য সাথীর আওতায় আনার কথা ঘোষণা করেছে রাজ্য সরকার৷ বিনামূল্যে ৫ লক্ষ টাকার সরকারি স্বাস্থ্য বিমা নিয়ে আমজনতার মধ্যে দারুণ আগ্রহ তৈরি হয়েছে৷ কিন্তু রাজ্যের বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিং হোমগুলির যে স্বাস্থ্য সাথী নিয়ে অনীহা রয়েছে, সরকারের সঙ্গে বৈঠকে তা স্পষ্ট করে দিল তারা৷ উল্টে স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে পরিষেবা দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে একগুচ্ছ দাবি জানিয়েছে বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিং হোমের প্রতিনিধিরা৷
সোমবার সল্ট লেকের স্বাস্থ্য ভবনে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড নিয়ে বিশেষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাজ্যের স্বাস্থ্যসচিব নারায়ন স্বরূপ নিগম, স্বাস্থ্য অধিকর্তা অজয় চক্রবর্তী সহ স্বাস্থ্য দফতরের উচ্চ পদস্থ আধিকারিকরা বৈঠকে ছিলেন। দু' দফায় এই বৈঠক হয়। প্রথমে রাজ্যের ছোট,মাঝারি নার্সিং হোম, বেসরকারি হাসপাতালগুলির সঙ্গে বৈঠক হয়৷ দ্বিতীয় দফায় মূলত কলকাতার কর্পোরেট এবং বড় বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে আলোচনা হয়।
গত কয়েকদিন ধরেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অভিযোগ উঠছিল যে, স্বাস্থ্য সাথী কার্ড বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিং হোমে গ্রহণ করা হচ্ছে না৷ সেই বিষয়ে বৈঠকে বিস্তারিত আলোচনা হয়। পাড়ার ছোট, মাঝারি নার্সিংহোমগুলিকে কীভাবে এই স্বাস্থ্য সাথীর অন্তর্ভুক্ত করা যায়, সে বিষয়েও আলোচনা হয়েছে।
সোমবার সকাল পর্যন্ত গোটা রাজ্যে নতুন স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে মাত্র ৩০১ জনের চিকিৎসা হয়েছে। স্বাস্থ্য সাথী কার্ড গ্রহণ না করার লিখিত অভিযোগ হয়েছে ১২টি। এর বাইরে কলকাতা এবং শহরতলি থেকে আরও বহু অভিযোগ উঠে আসছে এই স্বাস্থ্য সাথী কার্ডে কোনও পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে না বলে।মূলত কলকাতার নামী দামি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে এই কার্ড গ্রহণ না করার অভিযোগ উঠে এসেছে। রাজ্যের বিভিন্ন জেলা, শহরতলির নার্সিংহোমে এই কার্ড গ্রহণ করা হচ্ছে না বলেও অভিযোগ।
বৈঠকে বেসরকারি হাসপাতাল- নার্সিং হোমের প্রতিনিধিরা বলেন, স্বাস্থ্যসাথীতে সরকারের বেঁধে দেওয়া প্যাকেজ রেটে পরিষেবা দিতে গেলে বড় বেসরকারি হাসপাতাল থেকে শুরু করে ছোট, মাঝারি নার্সিংহোমগুলিও চূড়ান্ত সমস্যায় পড়বে। স্বাস্থ্যসাথী প্রকল্পে সরকারের তরফে প্রাপ্য টাকা বেশি দিন ফেলে রাখলেও স্বাস্থ্য পরিষেবা লাটে উঠবে। কারণ টাকা পেতে দেরি হলে হাসপাতাল চালানো অত্যন্ত কঠিন হয়ে উঠবে।
সরকার নির্ধারিত চিকিৎসার প্যাকেজ রেট বাড়াতে হবে, সরকারের কাছ থেকে বকেয়া টাকা পনেরো দিন থেকে এক মাসের মধ্যে মিটিয়ে দিতে হবে বলেও দাবি জানানো হয়েছে৷
চিকিৎসার গুণমান এবং রোগী স্বার্থ সুরক্ষিত করতে একমাত্র ক্রিটিক্যাল রোগী তথা বিশেষ ধরনের চিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য সাথীর কার্ড ব্যবহারেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে৷ সারাবাংলা প্রোগ্রেসিভ হসপিটাল এন্ড নার্সিং হোম অ্যাসোসিয়েশন এ দিনের এই বৈঠককে স্বাগত জানালেও তাদের নির্দিষ্ট দাবিদাওয়া না মানলে এই স্বাস্থ্য সাথী কার্ড গ্রহণ করা সম্ভব হবে না বলে পরিষ্কার জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রোগ্রেসিভ হসপিটাল অ্যান্ড নার্সিংহোম অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান শেখ আলহাজউদ্দিন বলেন, স্বাস্থ্যসচিব তাদের সমস্ত দাবি মেনে নেবেন বলে আশ্বাস দিয়েছেন। সরকারের নির্ধারিত প্যাকেজ অনুযায়ী, সন্তান প্রসবের জন্য প্যাকেজের মূল্য রাখা হয়েছে ৭ হাজার টাকা৷ গল ব্লাডার স্টোন অস্ত্রোপচারের রেট ১০ হাজার টাকা৷ অন্যান্য অস্ত্রোপচারের খরচও অনেকটাই কম বেঁধে দেওয়া হয়েছে বলে বেসরকারি হাসপাতাল- নার্সিং হোমের কর্তাদের অভিযোগ৷
এত কম টাকায় বেসরকারি হাসপাতাল, নার্সিংহোম গুলির পক্ষে পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয় বলে সরকারি আধিকারিকদের জানানো হয়েছে। ফলে তাদের দাবি না মানলে আগামী দিনে স্বাস্থ্য সাথী কার্ড প্রত্যাখ্যান করার আরও বেশি হিড়িক পড়বে বেসরকারি হাসপাতাল নার্সিং হোমগুলি স্পষ্টই জানিয়েছে। তবে সরকার দাবি মেনে নিলে কোনও বেসরকারি হাসপাতাল নার্সিং হোম স্বাস্থ্যসাথী নিয়ে আসা রোগীকে ফেরত পাঠাবে না বলেও আশ্বস্ত করেছে তারা।
অ্যাসোসিয়েশন অফ হসপিটালস অফ ইস্টার্ন ইন্ডিয়া-র সভাপতি রূপক বড়ুয়া জানান, ‘‘সরকার নির্ধারিত প্যাকেজ মূল্য বাড়ানোর বিষয়ে আমাদের সদস্যদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা উচিত। প্রয়োজনে সরকার তৃতীয় পক্ষকে নিয়েও কমিটি গঠন করতে পারে। তাঁর আরও দাবি, প্রায় সমস্ত বেসরকারি হাসপাতালই সুপার স্পেশ্যালিটি মানের পরিষেবা দিয়ে থাকে। তাই উচ্চতর চিকিৎসার প্রয়োজন, এমন রোগীদেরই সেখানে পাঠালে ভাল হয়। সাধারণ রোগের চিকিৎসার জন্য সমস্ত মানুষ যদি বেসরকারি হাসপাতালে চলে আসে তবে পরিষেবায় অনেকটাই সমস্যা হবে।"
বহু সময়ই অভিযোগ উঠছে সরাসরি না হলেও কৌশলে স্বাস্থ্য সাথীর অন্তর্ভুক্ত রোগীকে বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল এবং নার্সিং হোমগুলি থেকে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে। বৈঠকে বেসরকারি হাসপাতালগুলিকে স্বাস্থ্য দপ্তরের তরফ থেকে স্পষ্ট জানানো হয়েছে, আগামী দিনে রোগী প্রত্যাখ্যানের বিষয়টিতে সতর্ক থাকতে হবে। কোনও মতেই রোগীকে ফেরানো চলবে না।
Avijit Chanda
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।