#কলকাতা: কুমার তন্ময়, মিস পৌষালী, সুবীর কুমার, মাস্টার অনিল। এমন নামেই পরিচিত ওরা। শহর তো বটেই শহরের ছাড়িয়ে জেলা মায় রাজ্যের বাইরেও ওদের কদর, ওদের চাহিদা তাক লাগায়। ওরা কন্ঠী শিল্পী। ওদের কেউ কিশোর কুমারের গলায় গান করেন। কারও গলায় অবিকল মহম্মদ রফির টান।
মেদিনীপুর, বীরভূম থেকে কোচবিহার কিংবা জলপাইগুড়ি। গানের আসর মানেই ডাক পড়ে তন্ময় চক্রবর্তী শুভ সেনগুপ্তদের। বক্স আর্টিস্ট মঞ্চ নেওয়ার আগে ভিড় টানার দায়িত্বটা ওদেরই। বছরে ৯০ থেকে ১০০ টা অনুষ্ঠান হেসে-খেলে পায় ওরা। অনুষ্ঠান পিছু আয় তিন থেকে চার হাজার টাকা। কলকাতার বাইরে হলে সেটা কখনো ৭/৮ হাজারও হয়! কিশোর, আশাদের গলা ধার করে দর্শকদের মন ভোলানোতেই পেট চলত রাজা ভট্টাচার্যদের। দর্শকরা খুশি হতেন। ওদেরও দিন গুজরান হত।
সবকিছু বদলে দিয়েছে গত কয়েকটা মাস। মার্চ থেকে দেশ জুড়ে লকডাউন। কন্ঠীদেরও রুটি-রুজিতে তালা। গত সাড়ে তিন মাস না আছে কোন স্টেজ শো! না আছে স্টুডিও ডাবিং! এমনিতেই বারো মাসে কাজ আসে বেছে বেছে। অক্টোবর থেকে ফেব্রুয়ারি আর পয়লা বৈশাখ থেকে টেনেটুনে জুন-জুলাই। লকডাউনে এবার সব বন্ধ। যাদের গলায় ভর করে লতা, রফি, কিশোররা আজও আজও ঘুরে বেড়ান গ্রাম থেকে মফস্বলে! রুজির সঙ্কটে অবস্থা সঙ্গিন সেই সব কন্ঠী শিল্পীদের।
আনলক পর্বেও ওদের দিকে তাকায়নি কেউ। ব্যর্থ হয়েছে চিঠি, দরখাস্ত, দরবার। তাই উইকেন্ডে খোলা আকাশের নিচে কলকাতার রাজপথকেই প্রতিবাদের মঞ্চ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন এই শহরের কণ্ঠী-শিল্পীরা। রাহুল দেব বর্মনের জন্মদিনে ফুটপাতে কি-বোর্ড, ড্রাম, সিন্থেসাইজার, হ্যান্ড-সনিক সাজিয়ে গানের পসরা। প্রতিবাদের নয়া ভাষা। উপস্থাপক-গায়ক অনিল তিওয়ারি বলছিলেন,"আমাদের কথা তো কেউ ভাবল না। লাইনে দাড়িয়ে হাত পাততে পারব না। শিল্পী সত্ত্বায় বড় লাগে যে!" আশাকন্ঠী পৌষালী বলছিলেন,"ছোটবেলা থেকে মঞ্চে গেয়ে আসছি। অন্য পেশায় যেতে পারব না। কিন্তু কী ভাবে দিন কাটছে, বোঝাতে পারব না।"
হোক না কন্ঠী! তবু শিল্পী তো! প্রতিবাদের ধরনেও তাই মৌলিকত্ব। রাজপথের ধুলো ঝড় মন ভাঙ্গে, তবু গলায় সুর থেমে থাকে না ওদের। তন্ময় রায়, তন্ময় চক্রবর্তীদের গলাতেই যে রয়ে গেছেন কিশোর কুমার, মহম্মদ রফিরা।
PARADIP GHOSH