#কলকাতা: পুজো আসছে। আর মাত্র কয়েকটা মাত্র দিনের অপেক্ষা। করোনা আবহে এবারে বাজেট কমিয়ে ছোট করে পুজোর কথা ভাবছে শহরের বিগ বাজেট পুজো কমিটিগুলি। কিন্তু সে সবের গণ্ডি ছাড়িয়ে অন্যপথে হাঁটছে দমদম তরুণ দল। তাদের পুজো এবারে 'মানব পুজো', 'মানবতার পুজো'। দুর্গা বন্দনায় 'আমি থেকে আমরা' হয়ে ওঠার গল্প...
তরুণ দলের পুজো করোনা আবহে এবার আরও বড়। কারণ তার পরিধি এবারে সুবিশাল। শহর ছেড়ে এবার গ্রামে পাড়ি দিয়েছে দমদমের ৪৩তম বছরে পা দেওয়া তরুণ দলের পুজো। কমিটি একটাই, কিন্তু হচ্ছে তিনটে পুজো। শুনতে অবাক লাগলে, এটাই সত্যি। ২০১৯ সালে প্রায় ৭০ লক্ষ টাকা বাজেট থাকলেও, ২০২০ সালে নানা প্রাকৃতিক বিপর্যয় এবং অতিমারীর জেরে তা প্রায় প্রধেক হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সেই অর্ধেক টাকাকেই দু-ভাগ্যে ভাগ করে হচ্ছে তিনটি পুজো। অর্থাৎ, একটা অংশ খরচ হচ্ছে দমদম তরুণ দলের পুজোয়। বাকি অংশ খরচ হবে গ্রামের দুটি পুজোতে।
বসিরহাটের হিঙ্গলগঞ্জের ছোট সাহেবখালি গ্রাম। সেখানে ৩১০টি পরিবারের ৯৭৫ জন মানুষের বাস। করোনা, আমফান, লকডাউন-একের পর এক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত সকলেই। কোনও পরিবারের-বেলা খাওয়া জুটছে না, আবার কারও বাড়ির চাল উড়েছে ঝড়ে। এখনও তাঁরই সঙ্কুলার হয়নি। জমিতে নোনা জল ঢুকে চাষের অবস্থা শোচনীয়। সব মাথা তুলে দাঁড়ানোই মানুষগুলোর কাছে বড় চ্যালেঞ্জ। এমন অবস্থায় গত ৩০ মে ছোট সাহেবখালির মানুষের কাছে ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে পৌঁছন দমদম তরুণ দলের ৪০ জন সদস্য। কথায় কথায় জানতে পারেন, সাহেবখালিতে প্রতি বছর ছোট করে দুটি পুজোর আয়োজন করেন গ্রামবাসীরা। কিন্তু এবারে নিজেদের জীবনই সঙ্কটের মধ্যে তাই পুজো হবে না।
তরুণ দলের সম্পাদক বিশ্বজিৎ প্রসাদ বলেন, "আমরা পুজোপাগল। তাই ঠিক যেমন ওঁদের অসহায়তা চোখে দেখা যাচ্ছিল না, ঠিক তেমনই পুজো হবে না শুনে মন খারাপ হয়ে যায়। ত্রাণ সামগ্রী তুলে দেওয়ার পরে স্থানীয় পুজো কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলি। তাঁরা জানায় পুজো করা কোনওভাবেই সম্ভব নয়। ফিরে এসে রাতারাতি সিদ্ধান্ত নি, ওঁদের পুজোটাও হবে। প্যান্ডেল থেকে প্রতিমা নির্মাণ-প্রতিটি পদক্ষেপে পাশে থাকবে দমদম তরুণ দল। সেই মতোই শুরু হয় কথাবার্তা। এখন কাজ এগিয়েছে অনেকটা।"
বিশ্বজিৎ জানিয়েছেন, পুজোয় আমরা নতুন জামা পরব, ওঁরা পরবে না তা হয়না। তাই ক্লাবের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি গ্রামের সবাইকে নতুন জামা-কাপড় দেওয়া হবে। পুজোর আগেই সেই সব পৌঁছে দেওয়া হবে গ্রামের প্রতিটি মানুষের হাতে। এ দিকে, প্রতিবছর নবমীর দিন তরুণ দল পংতিভোজের আয়োজন করে। এবারে তা হচ্ছে না। তার বদলে, ক্লাব সদস্যদের একটা বড় অংশ সেদিন ছোট সাহেবখালি গ্রামে পৌঁছে যাবেন। সেখানেই গ্রামের সকলকে খাওয়ানোর পরিকল্পনা করেছেন তাঁরা। অর্থাৎ উৎসব পালন হবে সেখানেই।
দমদম তরুণ দলের মণ্ডপ সেজে উঠছে একেবারে গ্রাম্য পরিবেশে। ঠিক যেমন হবে ছোট সাহেবখালির পুজো, অনেকটা সেভাবেই। শিল্পী দেবতোষ করের ভাবনায় সেজে উঠছে মণ্ডপ। একেবারে পরিবেশবান্ধব সামগ্রী, একচালা সাবেকি প্রতিমা, আলো-আঁধারিতে সেজে উঠবে আবহ। থিমের পোশাকই নাম 'উমা বাটি'। তবে তরুণ দলের পুরো পুজোর আমেজটাই এবারে সাবেখালি গ্রামে। শুধুমাত্র শহরের মানুষের জন্য এখানে মণ্ডপ সাজানো হচ্ছে, তবে তাঁদের উৎসব পালন হবে গ্রামেই।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: durga-puja-2020