#কলকাতা: রাত পোহালেই দোল। সপ্তাহের শুরুতেই দোল আর হোলির ছুটি। দেদার হুল্লোড় আর খানাপিনা। একেবারে, আভি তো পার্টি শুরু হুইয়ে হ্যায়......কিন্তু খাদ্য রসিকদের আসরে একেবারে নো-এন্ট্রি চিকেনের। ফলে রাতারাতি বদলে গেল রঙ পার্টির মেনু। চিকেনের বদলে সেখানে সহজ এন্ট্রি পেয়ে গিয়েছে মাটন। দৌড়ে পিছিয়ে নেই ভেটকি, তপসে বা পমফ্রেট। পকেটে একটু বেশি টান পড়ছে বটে, কিন্তু করোনা চিকেন ভয়ে এমনই অবস্থা পার্টি গ্যাং এর।
বেশ কিছুদিন ধরেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ঘোরা ফেরা করছে চিকেন নিয়ে নানা রকম গল্প। যার আঁচ গিয়ে পড়েছে পাত্র-পাত্রীর পরিবারেও। ফলে ছাদনাতলায় দাঁড়ানোর আগে কপাল ঘামছে ক্যাটারিং মেনু বদলের জন্য। বাবা-মা তাই অতিথি আপ্যায়নের সঙ্গে মন্ত্রিতদের মনে করিয়ে দিচ্ছেন, নো-টেনশন, চিকেন নেই মেনুতে। কলকাতা বা শহরতলির একাধিক ক্লাবে বা আবাসনে শুরু হতে চলেছে হোলির আসর। আসর মানে চুটিয়ে আবির খেলা। সেখানে রঙের প্রবেশ যেমন নিষেধ। তেমনই চৌকাঠ পেরোনোর সুযোগ নেই চিকেনের। ফলে রান্নার ঠাকুর মশাই ব্যস্ত কচি পাঁঠার মাংস বা ভেটকি-পমফ্রেট ফ্রাই বা পনীর পকোড়া তৈরি করতে।
কিন্তু কেন? "এটা ঠিক, চিকিৎসকরা বলছেন বটে চিকেন নিয়ে যা ছড়াচ্ছে তা একটা গুজব। কিন্তু যারা দেখুন আনন্দ করতে আসছে বা আমরা যারা চুটিয়ে মজা করব তারা কেউ এই রিস্কটা নিতে চাইনা। কেমন একটা খুঁতখুঁত করবে মনটা।" জানাচ্ছিলেন ইন্দ্র। ইন্দ্রদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপের মেম্বার প্রায় দেড়শো জন। তার মধ্যে আশি শতাংশ একটা বিষয়ে সহমত, এনজয় উইদাউট চিকেন। শুধু এটাই নয় শহরতলির বিভিন্ন আবাসনেও এখন বসে দোলের আসর। চলে এক সাথে খাওয়া দাওয়া। তারাও তাদের মেনু থেকে সযত্নে বাদ দিয়েছেন চিকেন রোস্ট, চিকেন ড্রাম স্টিক। তারা আপন করে নিয়েছেন ভেটকি বা পারসে'কে।
মুরগি বদলে মাটন খাওয়াতে পকেটেও পড়েছে কোপ। রবিবার থেকে লম্বা লাইন মাটনের দোকানে। সেখানে দাম কমিয়ে বড়জোড় পাওয়া যাচ্ছে চার থেকে পাঁচ জন ক্রেতা। ফলে দোলের আগে মাথায় হাত চিকেন বিক্রেতাদের। দু-সপ্তাহ আগে মাণিকতলা বাজারে গোটা চিকেন কেজি প্রতি ১২০-১৩০ টাকায় মিলছিল। এখন অবশ্য তা কেজি প্রতি ৮০ থেকে ৯০ ঘোরাফেরা করছে। পোল্ট্রি ফেডারেশনের দুঃখ তাদের ক্ষতির হিসেব কোটি টাকায় চলে গিয়েছে।
তবে সবচেয়ে বিপাকে পড়েছেন ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিতে চলা অভিভাবকরা। চলতি মাসের মাঝামাঝি অবধি রয়েছে বিয়ের তারিখ। ফলে দু'মাস আগেই ছকে নেওয়া ছিল মেনু। হঠাৎ করেই চিকেন নিয়ে গুজব উঠে যাওয়ায় মেনুর বদল আর পকেটের রেস্ত কিভাবে সামলাবেন তাই বুঝে উঠতে পারছেন না তারা। একই অবস্থা ক্যাটারিং সংস্থাগুলোর। সল্টলেকের নামী ক্যাটারার সমর দাস। সমর বাবু জানাচ্ছেন, "মেনু বদল শুনতে ভালো লাগে। কিন্তু আমাদের উপকরণ জোগাড় আর খরচ এই দুটো মাথায় রাখতে হয়। অনেকেই মেনু বদলের জেরে যে টাকা লাগছে সেটা দিতে চাইছেন না বলছেন অ্যাডজাস্ট করতে। তাতে আমাদের ব্যবসায়িক ক্ষতি হচ্ছে।" একই কথা বলছেন জেলার ক্যাটারিং সংস্থার মালিকরাও। তবে বহু জেলায় চিকেন নিয়ে যা রটেছে তা গুজব বোঝানো গেলেও মন গলছে না অনেকেরই। তবে এরই মধ্যে কিছুটা স্বস্তি হোটেল অ্যাসোসিয়েশনের। প্রথম এক সপ্তাহ তাদের ক্ষতি হয়েছে। বিক্রি হয়নি রান্না করা খাবার। এখন তারা পরিমাণ কমিয়ে দিয়েছেন। বদলে মাটন-মাছের আইটেম বাড়িয়ে দিয়েছেন। হোটেল ও রেস্তোরাঁ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্য সুরেশ পোদ্দার জানাচ্ছেন, "আমাদের হোটেলগুলি বুঝিয়েছে। তার পরে যারা খেতে চাইছে তারা খাবেন। যারা খাবেন না তাদের জন্য অন্য খাবার আছে।" ফলে দোল হোক বা বিয়েবাড়ি চিকেন এখন "নো এন্ট্রি"
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Corona Virus