#কলকাতা: ২০২১ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষা কবে হবে ?এখন এই প্রশ্নই রাজ্যের ১০ লক্ষ ছাত্রছাত্রীদের কাছে। সূত্রের খবর, ফেব্রুয়ারি মাসে মাধ্যমিক হওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই বললেই চলে। সে ক্ষেত্রে ফেব্রুয়ারি মাসের বা মার্চের প্রথম দিকে মাধ্যমিক না হলে অনেকটাই পিছিয়ে গিয়ে বিধানসভা ভোটের পর হতে পারে ২০২১ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষা।
স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, সম্প্রতি স্কুল শিক্ষা সচিবের সঙ্গে মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কার্তিক চন্দ্র মান্না এবং সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদার একটি বৈঠক করেন মাধ্যমিক পরীক্ষা কবে নেওয়া যেতে পারে এবং সিলেবাস সংক্রান্ত বিষয় নিয়ে। সেই বৈঠকে স্কুল শিক্ষা দফতরের তরফের নির্দিষ্টভাবে কোনও সময়সীমা বা সিলেবাস সম্পর্কে কিছু বলা হয়নি বলেই সূত্রের খবর। যদিও ইতিমধ্যেই কতটা সিলেবাস এর ওপর সিবিএসই এর দশম ও দ্বাদশ এর পরীক্ষা এবং আইসিএসই এর কতটা সিলেবাস এর উপর দশম ও দ্বাদশ এর পরীক্ষা তা ইতিমধ্যেই জানিয়ে দিয়েছে দুই বোর্ড।
সে ক্ষেত্রে মাধ্যমিক পরীক্ষা ফেব্রুয়ারি মাসে না হওয়ার একাধিক কারণ উঠে আসছে।
১) কতটা সিলেবাস এর ওপর ২০২১ সালের মাধ্যমিক পরীক্ষা হবে সে বিষয়ে এখনো পর্যন্ত স্পষ্ট নয়।
২) যদি সে ক্ষেত্রে সিলেবাস এর পরিবর্তন হয় ছাত্র-ছাত্রীদের ন্যূনতম একটি সময়সীমা দিতে হবে প্রস্তুতি নেওয়ার জন্য। সে ক্ষেত্রে পাঁচ-ছয় মাস দেওয়াটা একান্ত দরকার বলেই মনে করছেন স্কুল শিক্ষা দফতরের আধিকারিকদের একাংশ।
৩) সাধারণত মাধ্যমিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের দিন এই আগামী বছরের মাধ্যমিক পরীক্ষার সূচি ঘোষিত হয়ে যায়। কিন্তু গত দু'বছর ধরে তা নাহলেও ন্যূনতম সাত থেকে আট মাস সময় রেখে পরীক্ষা সূচি ঘোষিত হয়েছে। কিন্তু এ বছর অক্টোবর মাসের প্রথম সপ্তাহ হয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত পরীক্ষা সূচি ঘোষিত করা যায়নি। তাই ছাত্র-ছাত্রীদের ন্যূনতম পাঁচ থেকে ছয় মাস সময় দিতে গেলেও ফেব্রুয়ারি মাসে কোনও ভাবেই পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয়।
৪) সূত্রের খবর এখনও পর্যন্ত যা তথ্য উঠে এসেছে তাতে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি,মার্চ এই তিন মাসে দশম শ্রেণির ক্লাস নেওয়া হয়েছে ৩৫% সিলেবাসের। যদিও আবার ফেব্রুয়ারি মাসের মাঝামাঝি থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত মাধ্যমিক এবং উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা থাকার কারণে অনেক স্কুল বন্ধ ছিল।ফলতো সেই স্কুলগুলিতে ক্লাসরুমে এই ৩৫% সিলেবাস শেষ করা যায়নি। আর তাই এই কম সিলেবাস এর উপরে কি করে মাধ্যমিক নেওয়া সম্ভব তা নিয়ে শিক্ষাবিদদের একাংশ অবশ্য সংশয় প্রকাশ করছেন।
৫) মাধ্যমিক পরীক্ষার ন্যূনতম ৬০ দিন আগে বিভিন্ন স্কুল টেস্ট পরীক্ষা নেয় ছাত্র-ছাত্রীদের মূলত মাধ্যমিকের জন্য কতটা প্রস্তুতি নিতে পেরেছে ছাত্রছাত্রীরা তা যাচাই করার জন্য। কিন্তু এক্ষেত্রে এখনও পর্যন্ত টেস্ট পরীক্ষা নেওয়া কবে হবে সেই বিষয়ে স্কুল গুলোর কাছে নির্দিষ্টভাবে কোনও রূপরেখা নেই। কারণ মাধ্যমিকের সিলেবাস চূড়ান্ত হয়নি।
৬) যদি সিলেবাস পরিবর্তন করে কমানো হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে মাধ্যমিকের প্রশ্নপত্র ছাপাতে হবে এবং শুধু ছাপানো নয় প্রশ্নপত্র তৈরি করতে হবে। স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে খবর, মাধ্যমিক পরীক্ষার জন্য মোট এক কোটিরও বেশি প্রশ্নপত্র ছাপাতে হয়। সেক্ষেত্রে প্রশ্নপত্র তৈরি থেকে শুরু করে ছাপানো পুরো কাজটি শেষ করতে সময় লাগে তিন থেকে চার মাস।
৭) অনলাইনে ক্লাস গ্রামাঞ্চলের স্কুলগুলিতে কার্যত সাফল্য পায়নি অন্তত স্কুল শিক্ষা দফতরের কাছে এমনটাই তথ্য। আর তাই অনলাইন ক্লাস এর উপর নির্ভর করে সিলেবাসের বাকি অংশের পরীক্ষা নিতে খুব একটা রাজি নয় পর্ষদের সঙ্গে যুক্ত শিক্ষকদের একাংশ।
৮) যদিও বর্তমান করোনা পরিস্থিতিতে স্কুল কবে খুলবে এরাজ্যে সে বিষয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও সুনির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে নেই রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর। সে ক্ষেত্রে যদি পুজোর পর স্কুল খুলে তাহলে দুই থেকে তিন মাস ক্লাস করে তবেই সিলেবাসের কিছুটা অংশ শেষ করে পরীক্ষা নিতে চায় বিশেষজ্ঞদের একাংশ।
তাই সব মিলিয়ে ফেব্রুয়ারি মাসে মাধ্যমিক হওয়ার সম্ভাবনা কার্যত নেই বললেই চলে অন্তত এমনটাই খবর রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে। সেক্ষেত্রে রাজ্যে বিধানসভা ভোটে রয়েছে। সে ক্ষেত্রে যদি ভোট এপ্রিল-মে মাসে হয় তাহলে বিধানসভা ভোটের পরেই রাজ্যে মাধ্যমিক পরীক্ষা হওয়ার সম্ভাবনা অন্তত এমনটাই খবর রাজ্য স্কুল শিক্ষা দফতর সূত্রে। যদিও এই বিষয়ে প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি মধ্যশিক্ষা পর্ষদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কার্তিক চন্দ্র মান্না ও সিলেবাস কমিটির চেয়ারম্যান অভীক মজুমদারের কাছ থেকে।
সোমরাজ বন্দ্যোপাধ্যায়