#কলকাতা: করোনা সংকটের জেরে লকডাউনে অনেকেরই উপার্জন বন্ধ হয়েছে৷ খাবারও কিনতে পারছেন না অনেকে৷ যাঁদের ক্রয়ক্ষমতা রয়েছে, তাঁদের অধিকাংশই আশঙ্কায় যতটা সম্ভব বেশি করে খাবার মজুত করে রাখছেন৷ আবার এমন অনেক নাগরিকরা আছেন যারা ঘরে এই মুহূর্তে চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি। বিশেষ করে প্রবীণ নাগরিক যাদের ছেলেমেয়েরা থাকেন বাইরে। ভরসা বলতে বাড়ির 'কাজের লোকেরা' । কিন্তু বর্তমান সময়ে ওরাও পাশে নেই। ওরাও রযেছেন নিজেদের বাড়িতে বন্দি৷ অগত্যা প্রবীণ নাগরিকদেরই এখন বেরোতে হচ্ছে বাজারে। বাজার হাট করতে ঘরের বাইরে বেরোতে শারীরিক কারণে এই মুহূর্তে অক্ষম অনেকেই । এই পরিস্থিতিতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিল দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম পুজো উদ্যোক্তা মুদিয়ালি ক্লাব।
করোনার প্রকোপ কমাতে দেশ জুড়ে চলছে লকডাউন। গোটা দেশ স্তব্ধ। বন্ধ যোগাযোগ ব্যবস্থা। রেল, সড়ক, আকাশ পথ পুরোপুরি বন্ধ। দেশবাসীকে সংক্রমণ থেকে বাঁচতে গৃহবন্দি থাকার আর্জি জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী থেকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বাজারঘাট, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দোকান খোলা থাকছে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত। সমস্যায় পড়েছেন বহু মানুষ । যাদের প্রতিদিনের আয়ে সংসার চলতো, সেইসব রিকশাওয়ালা, ভ্যান চালক, টোটো চালক, শ্রমিকদের ঘরে চরম খাবারের সংকট। কাজ নেই। তাই রোজগারও নেই। কী খাবেন আর কীভাবে সংসার চালাবেন? এই দুশ্চিন্তা তাড়া করে বেড়াচ্ছে প্রতি মূহূর্তে। ছোট্ট দুধের শিশুর মুখেই বা কী তুলে দেবেন? বাইরে করোনার কোপ। আর ঘরে খাবার নেই। এক উভয় সংকটের মধ্যে রয়েছে অনেকেই।
এই সময়ে এলাকার গরিব, দুঃস্থদের পাশে দাঁড়াতে মানবিকতার নজির গড়েছেন অনেকেই। সেই তালিকায় পুলিশকর্মী থেকে শুরু করে বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা , আবার কেউ বা ব্যক্তিগত উদ্যোগেই ত্রাতার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। লকডাউন চলাকালীন খাদ্য সামগ্রী সহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী বিপন্ন মানুষজনের কাছে পৌঁছে দিচ্ছেন। মুদিয়ালি এলাকার যে সমস্ত প্রবীণ নাগরিক যারা বাজারহাট করতে বের হতে পারছেন না বিশেষ করে তাঁদের জন্য অভিনব উদ্যোগ গ্রহণ করেছে কলকাতা শহরের নামজাদা ক্লাব গুলির মধ্যে অন্যতম মুদিয়ালি ক্লাব। স্থানীয় বাসিন্দাদের সহযোগিতায় স্থানীয় একটি আবাসনের নীচের একটি ঘরে গড়ে তোলা হয়েছে 'অস্থায়ী বাজার'।
বাজার থেকে আলু পিঁয়াজ সহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস মজুত করে এখানে রাখা হয়েছে । লকডাউন চলাকালীন আলু, পিঁয়াজ থেকেে অন্যান্য নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম এখন বেশ চড়া। কিন্তু মুদিয়ালির এই বাজার থেকে মিলছে সেই সমস্ত সামগ্রী ন্যায্যমূল্যে । এলাকার প্রবীণ নাগরিকদের তালিকা তৈরি করে যে সমস্ত নাগরিকরা বাজারে যেতে পারছেন না তাঁদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রেখে প্রয়োজন মতো সেই সমস্ত সামগ্রি তাঁদের বাড়িতে পৌঁছেও দিচ্ছেন ক্লাবের সদস্যরা। শুধুমাত্র একটি ফোনের অপেক্ষা । প্রবীণ নাগরিকদের পাশাপাশি এই পরিষেবা পাচ্ছেন পাড়ার সব নাগরিকরাই।
ক্লাবের সম্পাদক অশোক দে বলেন, 'এই সময় মানুষের পাশে থাকা মনুষ্যত্বের পরিচয়। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী যে ভাবে পরিশ্রম করছেন, ঠিক সেই ভাবেই আমরাও সাধ্যমত মানুষের পাশে থাকার চেষ্টা করছি।সামাজিক দায়বদ্ধতা থেকে বিপন্ন, অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে আমরা বদ্ধপরিকর। লকডাউন চলাকালীন আমাদের এই পরিষেবা জারি থাকবে'। পাড়ার ক্লাবের সদস্যদের ভূমিকায় খুশি স্থানীয় মানুষজন। তাঁদের মধ্যে অন্যতম দেবাশিস সেনগুপ্ত , রবীন্দ্রনাথ চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, 'ওরা না থাকলে আমাদের যে কী হত কে জানে!' প্রসঙ্গত, শুধুমাত্র 'অস্থায়ী বাজার' খুলে অসহায় মানুষের পাশে থাকাই নয়, আগামী দুর্গা পুজোর খরচ বাঁচিয়ে ইতিমধ্যেই মুখ্যমন্ত্রীর গঠন করা করোনা মোকাবিলায় ওয়েস্ট বেঙ্গল স্টেট এমারজেন্সি রিলিফ ফান্ডেও এক লক্ষ টাকা অনুদান দিয়েছে মুদিয়ালি ক্লাব। সেই সঙ্গে মানুষকে সচেতন করতে নেওয়া হয়েছে একগুচ্ছ সচেতনতামূলক পদক্ষেপ।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Coronavirus, COVID19, Lockdown