#কলকাতা: একের পর এক তৃণমূল নেতার মুখে বেসুরো সুর ৷ তারপরই দলত্যাগের ঘোষণা ৷ রাজনৈতিক মহল বলছে পিছনে আসল কারণ বিজেপি যোগ ৷ ইচ্ছুকদের কাছে বিজেপি থেকে ফোনে আসছে ডাক ৷ গেরুয়া শিবিরের সঙ্গে ফোনাফুনিতে শর্তের দর কষাকষি ৷ তারপরই কেউ দলের সঙ্গে আড়াই দশক কেউ এক দশকের সম্পর্ক ত্যাগ করে যোগ দিচ্ছেন পদ্মে ৷ কর্পোরেট সংস্থার চাকরি বদলের মতো বাংলার রাজনীতিতেও চলছে দলবদল ৷ ২১-এর ভোটের আগে দলত্যাগের হিড়িকে এক রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের গোল টেবিল বৈঠক থেকে পাড়ার মোড়ে চায়ের আড্ডায় ঘুরে ফিরে এই প্রশ্ন এবার কার পালা? কার কাছে এল ফোন?
সেই ফোনের গল্পই এবার ফাঁস করলেন খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ কোচবিহারে জনসভার খোলা মঞ্চে দাঁড়িয়ে জানালেন বিজেপি থেকে ফোন এসেছে খোদ তৃণমূল রাজ্য সভাপতি ও সাংসদ সুব্রত বক্সির কাছে ৷ বিজেপির বিরুদ্ধে দলভাঙানোর তীব্র ক্ষোভ উগরে নেত্রী জানান, ‘বিজেপি এতটা নীচে নেমেছে, আপনারা শুনলে লজ্জা পাবেন ৷ সু্ব্রত বক্সি রাজ্যের তৃণমূলের সভাপতি একজন সাংসদও ৷ তাঁকেও ফোন করে বলছে- দাদা একটু কথা আছে ৷ আপনার সঙ্গে বসব ৷ কত বড় সাহস! কোথায় গিয়েছে বিজেপি একবার ভাবুন ৷ সামান্য, ন্যুনতম লজ্জা, ভদ্রতা, সৌজন্যতা নেই ৷ থাকলেও কেউ একাজ করে না ৷ আমার দলের সভাপতিকে ফোন করে যদি এটা বলতে পারে, তাহলে আসলে কী কী হচ্ছে ভেবে দেখুন ৷’
উল্লেখ্য, সম্প্রতি শীর্ষ নেতৃত্বদের নিয়ে ডাকা ভার্চুয়াল বৈঠকে দলের উদ্দেশে কড়া বার্তা দেওয়ার সময় হঠাৎই নেত্রীর গলায় অভিমানী সুর ৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, ‘এখন এমন অনেকে আছেন যারা তাঁর মৃত্যু কামনা ছাড়া আর কিছুই করছেন না ৷ যাতে আমি চলে গেলে মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে পারে ৷ ’ দিদির মুখে এমন কথা শুনে দলের শীর্ষ নেতৃত্বের প্রত্যেকেই হতভম্ব হয়ে যান কিন্তু সবথেকে অপ্রত্যাশিত প্রতিক্রিয়া আসে সুব্রত বক্সির কাছ থেকে ৷ এমন কথা শুনে হাউ হাউ করে কেঁদে ফেলেন তিনি ৷ কাঁদতে কাঁদতেই বলেন, ‘আপনি এমন কথা বলবেন না। আপনি থাকবেন। আপনি সারাজীবন আমাদের নেত্রী থাকবেন। আমাদের রাস্তা দেখাবেন।’
দলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সিকে এভাবে কাঁদতে দেখে হতচকিয়ে যান স্বয়ং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও ৷ সুব্রতবাবুকে শান্ত করতে তিনিই উদ্যোগী হন ৷ বলেন, ‘জল খান ৷ শান্ত হন ৷ এভাবে কাঁদবেন না প্লিজ ৷ ’ নেত্রীর কথায় তিনি নিজেকে সামলে নিলেও এরপর যতক্ষণ বৈঠক চলেছে ততক্ষণই সুব্রত বক্সি মুখ কালো করে বসেছিলেন ৷ এহেন দিদির অনুগামী নেতার কাছে বিজেপির ফোনের কথা শুনে নয়া জল্পনা ফের ভোট ময়দানে ৷
এখানেই শেষ নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এও বলেন বিজেপি থেকে ফোন পেয়েছেন বীরভূমের জেলা সভাপতি অনুব্রত মণ্ডলও ৷ সে প্রসঙ্গে তৃণমূল নেত্রী এদিন বলেন, ‘কালকেই কেষ্ট মানে অনুব্রত মণ্ডল আমাকে ফোন করেছিল ৷ ও আমাদের বীরভূম জেলা সভাপতি ৷ আমাকে ফোনে বলল, দিদি আমাকে দিল্লি থেকে একজন ফোন করে বলছে আমার সঙ্গে নাকি বসতে চায় ৷ কথা বলবে ৷’ অনুব্রত মণ্ডল তাঁকে কী উত্তর দিয়েছেন তাও খোলসা করেন নেত্রী ৷ বলেন, ‘আমি TMC, আমি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল করি ৷ তোমার সঙ্গে কেন বসতে যাব! তোমার সঙ্গে তো আমার কোনও কথা থাকতে পারে না৷’
বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা থেকে রাজ্য সভাপতি, খোদ নরেন্দ্র মোদি থেকে অমিত শাহ, লোকসভা ভোটের সময় থেকেই শাসকদলের নেতা কর্মীদের কাছে বিজেপি যোগের খোলা আমন্ত্রণ পত্র দিয়েই রেখেছেন ৷ সেই রাস্তা ধরে গত এক বছরে বিশেষত শেষ কয়েকমাসে ময়দানের ক্লাব বদলের মতো রাজনৈতিক ময়দানেও বদলে গিয়েছে জার্সি ৷ মুকুল রায়ের পর একে একে অর্জুন সিং, সৌমিত্র খাঁ, মিহির গোস্বামীর মতো নেতারা ঘাসফুল ছেড়ে যোগ দিয়েছেন পদ্মে ৷ রাজ্য রাজনীতির অভ্যন্তরের সূত্র বলছে অমিত শাহের এবারের বাংলা সফরে খোদ সেনাপতির হাত ধরে দলে যোগ দেবেন নন্দীগ্রামের বিধায়ক শুভেন্দু অধিকারীর মতো শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব ৷ পিছনে রয়েছেন আরও অনেকে ৷ মন্ত্রিসভার এক জনপ্রিয় তরুণ মন্ত্রীরও ইদানীং সুর তাল সবই তৃণমূলের থেকে আলাদা লয়েই বাজছে ৷ একপ্রকার তিনিও পা বাড়িয়ে রেখেছেন বললেই চলে ৷ অন্য সুর ধরেছেন আসানসোলের মেয়র ৷ বিদ্রোহী বিক্ষুব্ধর পোশাক গায়ে তুলে ফেলেছেন পূর্ব বর্ধমানের সাংসদও ৷ সূত্র বলছে শুভেন্দুর সঙ্গে শনিবার বিজেপি যোগে সঙ্গী হতে পারেন ব্যারাকপুরের বিধায়ক ৷ ভোট ময়দানের জল্পনা এখানেই শেষ নয়, শাহের এবারের বঙ্গ সফরে তৃণমূলের জন্য অপেক্ষা করছে আরও রক্তক্ষরণ ৷