কলকাতা: পঞ্চায়েতে তৃণমূলের বিরুদ্ধে মহাজোটে সায় দিল না বিজেপি। আজ সল্টলেকে পূর্বাঞ্চলীয় সংস্কৃতিকেন্দ্রে পঞ্চায়েতের প্রস্তুতি বৈঠকে রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচন সংক্রান্ত কমিটির চেয়ারম্যান দেবশ্রী চৌধুরী বলেন, ‘‘আমরা কোনও জোট বা মহাজোট নিয়ে এখনই ভাবছি না। তৃণমূলের বিরুদ্ধে কাউকে লড়াই করতে হলে তাকে বিজেপির পতাকা নিয়েই লড়তে হবে।’’ তৃণমূলকে উৎখাত করতে একের বিরুদ্ধে এক প্রার্থী দেওয়া নিয়ে যখন দলের একাংশ সরব, তখন দেবশ্রী চৌধুরী এই মন্তব্যকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
রাজ্যের ক্ষমতা থেকে তৃণমূলকে উৎখাত করতে হলে বিরোধীদের জোটবদ্ধ হতে হবে। ভোটের লড়াইয়ে একের বিরুদ্ধে এক লড়াই হওয়া দরকার। রাজনৈতিক ভাবে এই বার্তা দিতে 'নো ভোট টু মমতা' স্লোগানকেও হাতিয়ার করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কিন্তু, আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটে বিরোধী জোটের প্রশ্নে আপাতত সায় দিচ্ছে না রাজ্য বিজেপি।
২৪ এর লোকসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে বীরভূমে সভা করতে আসছেন অমিত শাহ। শাহী সফরের ঠিক আগের দিন রাজ্যের আসন্ন পঞ্চায়েত ভোটের প্রস্তুতি খতিয়ে দেখতে বৈঠক ডেকেছিল বিজেপি। রাজ্যস্তরের সেই বৈঠকে, কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনশাল ও অমিত মালব্যের উপস্থিতিতে রাজ্যের পঞ্চায়েত নির্বাচনের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেত্রী ও সাংসদ দেবশ্রী চৌধুরী সাফ জানিয়ে দিলেন, '‘তারা মনে করেন, রাজ্যে প্রধান বিরোধী দল বিজেপি। বিধানসভায় সিপিএম নেই। কংগ্রেস এক। এই পরিস্থিতিতে বাম,কংগ্রেসকে নিয়ে জোট করার কোন ভাবনা নেই বিজেপির। তৃণমূলের বিরুদ্ধে কাউকে লড়তে হলে তাকে বিজেপির পতকা নিয়েই লড়তে হবে।'’
আরও পড়ুন - Health Tips: রমরমিয়ে বিকোচ্ছে হলুদ তরমুজ, রোগ ধারেকাছে ঘেঁষতে দেবে না এই ফল, আপনি খেলেন
সম্প্রতি, ২৪ এর লোকসভা ভোটে তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে এই ফর্মূলা সামনে আনেন শুভেন্দু। চন্দ্রকোনার দলীয় কৃষক সভায় এই শ্লোগান লেখা গেঞ্জি পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে তার উদ্বোধন করে শুভেন্দু বলেছিলেন, এবার থেকে সব দলীয় সভাতেই এই শ্লোগান লেখা গেজি পরে সভা করবেন তিনি। সভা থেকে বাম, কংগ্রেসের উদ্দেশ্যে জোটবার্তাও দেন শুভেন্দু। যদিও, শুভেন্দুর জোটবার্তাকে পত্রপাঠ খারিজ করেছিল বাম ও কংগ্রেস। শুধু নীতিগত ভাবে খারিজ করাই নয়, সিপিএমের সূজন চক্রবর্তী বলেন, এই দাবি নিয়ে বিজেপিতেই নানা মত রয়ছে। শুভেন্দু মানেই বিজেপি নয়। ফলে, শুভেন্দুকে আগে প্রমান করতে হবে, এটাই বিজেপির লাইন। সিপিএমের রাজ্য কমিটির বৈঠকে, দলের জেলা নেতৃত্ব জানিয়েছিলেন, বামেদের এই জোটে সামিল হওয়ার জন্য বিজেপির তরফে আবেদন করা হচ্ছে।
অন্যদিকে, দিলীপ ঘোষের মত কট্টরপন্থীরা আগে ভাগেই বলেছিলেন, বিজেপি কোন জোট করে লড়বে না৷ তৃণমূলকে হারাতে বিজেপি একক শক্তিতেই লড়বে। রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারও এখনি এ নিয়ে মন্তব্য করার সময় আসে নি, বলে মন্তব্য এড়িয়ে যান।
রাজনৈতিক মহলের মতে, তৃণমূলকে সরাতে ২০১১ য় সিপিএমের বিরুদ্ধে এই কৌশলই নিয়েছিলেন মমতা। মমতার সেই ব্লু প্রিন্ট ধরেই তৃণমূলকে উৎখাত করার পরিকল্পনা শুভেন্দুর। শুভেন্দুর এই পরিকল্পনায় তার পাশে রয়ছে আর এস এস ও সংঘপরিবার এবং অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদীরা। কিন্তু, শুভেন্দু সহ নব্য বিজেপির একাংশের এই কৌশলে যুক্ত হতে চায় না দলের কট্টরপন্থী আদি বিজেপি। তার প্রতিফলন আজ বৈঠকে যোগ দেওয়া এক রাজ্য নেতার কথায়। ওই রাজ্য নেতা বলেন, 'আমরা ২০১৮র পঞ্চায়েতে সীমিত সংগঠন নিয়েও উল্লেখযোগ্য ফল করেছিলাম। অনেক গণনা কেন্দ্রে এজেন্টই দেওয়া যায় নি। কিন্তু, বিজেপির জন্য মানুষের আবেগ ছিল। তাই তৃণমূলকে আমরা প্রতিহত করতে পেরেছিলাম। কিন্তু, সেই লড়াইয়ে যারা পঞ্চায়েতে জয় পেয়েছিল, তাদের আমরা ধরে রাখতে পারি নি। তারা আজ দলে কোথায়?
বৈঠকে যখন কট্টরপন্থী আদি বিজেপিরা জোটতত্ব খারিজ করে একলা চলোর পক্ষে সওয়াল করছেন, তখনি গোঘাটের বিধায়ক প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লকের নেতা ও বিধায়ক বিশ্বনাথ কারক বলেন, ''জেলা ওয়াড়ি সংগঠনের এই রিপোট নিয়ে কোন লাভ হবে না। কারন, এসব খাতায় কলমে রয়ছে। বাস্তবের সঙ্গে তার কোন যোগ নেই। আর এভাবে চললে, আগামী পঞ্চায়েত নির্বাচনে দলের ঘুরে দাঁড়ানো মুশকিল। তৃণমূলের বিরুদ্ধে দূর্নীতি থেকে শুরু করে এত অভিযোগ সত্বেও আমরা যদি তাকে কাজে লাগাতে না পারি, তাহলে, তৃণমূলের বিরুদ্ধে মানুষ বিরোধী হিসাবে বিজেপিকে দেখবার জন্য বসে থাকবে না। অন্য রাজনৈতিক দল ( বাম, কংগ্রেস এর মত দল) এই রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাবে।''
তৃণমূলকে রাজ্যের ক্ষমতা থেকে সরানোর প্রশ্নে আদি, নব্য বিজেপির মধ্যে কোন মতান্তর নেই। কিন্তু, ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ের কৌশল কী হবে তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়ছে। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই টানাপোড়েন নতুন কিছু নয়। আর, এই টানাপোড়েনকে সঙ্গে নিয়েই ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে দলকে ঐক্যবদ্ধ রাখার প্রশ্নে অমিত শাহ, নরেন্দ্র মোদীদের ভূমিকাই প্রধান। তারাই শেষ পর্যন্ত স্থির করে দেবেন লড়াইয়ের কৌশল ও অভিমূখ। ফলে, আগামীকাল রাতে শাহের সঙ্গে বঙ্গ বিজেপির কোর কমিটির বৈঠক যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে।
ARUP DUTTAনিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।