#কলকাতা: শনিবারের দুপুরে মেদিনীপুরের কলেজ মাঠে রাজ্য রাজনীতির উল্লেখযোগ্য এক অধ্যায় লেখা হল ৷ যার জেরে কামারহাটিতে আজ অকাল দীপাবলি ৷ ২১-এর কুরুক্ষেত্রের আগে বাংলার রাজনীতিতে সবথেকে বড় পালাবদল ৷ শাহি সভায় একঝাঁক তৃণমূল ত্যাগী নেতা, সাংসদ, বিধায়ককে নিয়ে নন্দীগ্রামের আন্দোলনের নেতার পদ্মশিবিরে অভিষেক ৷ তৃণমূলের সঙ্গে ২১ বছরের সম্পর্কে ইতি টেনে হাতে ধরলেন পদ্মের ৷
বাংলার দাপুটে নেতা শুভেন্দু অধিকারীর বিজেপিতে যোগ দেওয়া পর সেলিব্রেশনে মাতলেন প্রাক্তন পরিবহনমন্ত্রী মদন মিত্র ৷ সেলিব্রেশনের কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আজ তৃণমূল ভাইরাস মুক্ত হল ৷ পচন মুক্ত হল ৷ তৃণমূল থেকে বেইমানরা বেরিয়ে গিয়েছে ৷ দল এখন শুদ্ধ ৷ তাই সেলিব্রেশন ৷’
ডিজে বাজিয়ে তাসা পার্টি নিয়ে চলল ব্যাপক নাচ-গান ৷ শুধু তাই নয়, তৃণমূলের শুদ্ধতার আনন্দে জগন্নাথ পুজোর ব্যবস্থাও করেছিলেন মদন মিত্র ৷ যজ্ঞও করেন। কামারহাটির এই জনপ্রিয় নেতার সেলিব্রেশনে যোগ দিয়েছিলেন তাঁর অনুগামীরাও ৷ গান-নাচের সঙ্গে টেম্পোয় চেপে ছোটখাটো র্যালি বার করেন তৃণমূলের স্থানীয় নেতা-কর্মীদের আদরের মদনদা ৷ একসময় লর্ডসের ব্যালকনিতে ভারত অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ের আদলে জ্যাকেট খুলে হাওয়ায় ঘুরিয়ে নাচতেও দেখা যায় তাঁকে ৷
ডিজে- তাসা বাজানোর সঙ্গে র্যালি থেকে উঠতে থাকে লাগাতার স্লোগান-‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জিন্দাবাদ ৷ তৃণমূল কংগ্রেস জিন্দাবাদ ৷’ কখনও আবার স্লোগান দিতে দেখা যায় খোদ মদন মিত্রকে, ‘আয় মুকুল দেখে যা, আয় শুভেন্দু দেখে যা তৃণমূলের ক্ষমতা৷ সারা বাংলায় আওয়াজ তোলো মমতা-মমতা-মমতা ৷ বেইমানদের খতম করো ৷’ শুভেন্দুর প্রসঙ্গে মদন মিত্র বলেন,'২০১৪ থেকে বেইমানি করে আসছে, আজ তা স্বীকার করল। ছুরি মেরেছে দলকে।’
দলত্যাগের বান ডেকেছে ৷ বিক্ষুব্ধ, বেসুরো, শুভেন্দু অনুগামী একের পর এক তৃণমূল সদস্য, নেতা, বিধায়ক, সাংসদদের জোড়াফুল ছেড়ে পদ্মে লাফ ৷ যত সময় এগোচ্ছে তত ভাঙন হচ্ছে আরও তীব্র ৷ ক্রমাগত রক্তক্ষরণ বাড়ছে শাসকদলের ৷ কিন্তু তাতে বিন্দুমাত্র চিন্তিত নয় তৃণমূল তা বার বার নিজেদের মন্তব্য স্পষ্ট করেছেন দলনেত্রী থেকে দলের শীর্ষনেতারা ৷
দলত্যাগ প্রসঙ্গে কোর কমিটির বৈঠকে নেত্রী বলেন, ‘কে গেল, কে থাকল তাতে দলের কিছু আসে যায় না ৷ তৃণমূল মোটেই উদ্বিগ্ন নয় ৷ দল অনেক বড়। যাঁরা যাচ্ছে তাঁরা দলের বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। ভাল হচ্ছে ওঁরা নিজেরাই ছেড়ে দিচ্ছে।’
তৃণমূল সচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন,‘অনেকেই যাবে। কিছু এসে যাচ্ছে না। যারা দলের সৈনিক তারা দলেই থাকবে। যারা লড়ে, যারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি আস্থাশীল,মানুষের কল্যাণে আস্থাশীল তারা সবাই জোটবদ্ধ- ঐক্যবদ্ধ। এদিক-ওদিক গেলে বড় গাছের দু-চারটি পাতা খসে পড়ে গেলে কিছু এসে যায় না।’
একই মত কল্যাণ থেকে সৌগত রায়, কুণাল ঘোষেরও ৷ তবে শুভেন্দু ও এত সংখ্যায় দলত্যাগী নেতা, বিধায়ক, সাংসদের বিজেপিতে যোগ নিয়ে একধাপ এগিয়ে ডিজে নাইট-পুজোর আয়োজন করে ফেললেন সদা রঙিন মদনদা ৷ তবে ওয়াকিবহল মহল বলছে, এ শুধু দল থেকে বেইমান বিদায়ের সেলিব্রেশন নয় ৷ এর পিছনে রয়েছে ঘরের অন্দরে অনাদর, চোটের অভিমানী ব্যথা ৷ উল্লেখ্য, সারদাকাণ্ডে কারাবাসের সময় মদন মিত্রের পরিবহন দফতরের দায়িত্ব গিয়েছিল সদ্য প্রাক্তন তৃণমূল বিধায়ক শুভেন্দুর হাতে ৷