VENKATESWAR LAHIRI
#কলকাতা: দুর্গাপুজো এখনও অনেক দেরি। কিন্তু কুমারটুলিতে আগে থেকেই ব্যস্ততা শুরু হয়ে যায়। সেই মত এবারও শিল্পীরা জড়ো হয়েছিলেন। কিন্তু লকডাউনের জেরে কাজ বন্ধ। বাড়ি ফিরতেও পারছেন না মৃৎশিল্পীরা। অসহায় শিল্পীদের পাশে দাঁড়াল কুমারটুলির প্রমীলা বাহিনী। অসহায় শিল্পীদের হাতে প্রতিদিন ত্রাণ সামগ্রী তুলে দিচ্ছেন এলাকারই মহিলারা । মা আসার আগে মায়ের মতো পাশে দাঁড়িয়ে অসহায় মৃৎশিল্পীদের কিছুটা মুখে হাসি ফুটল রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত, ভিন রাজ্য থেকে আসা এই মুহূর্তে কুমারটুলিতে বন্দী থাকা মৃৎশিল্পীদের। শিল্পীদের সৃষ্টিতেই কুমারটুলির পরিচিতি। সেই শিল্পীদেরই এখন হাত খালি। পকেট খালি। রোজগার বন্ধ । ব্যবসা কার্যত লাটে উঠেছে । তাই স্বাভাবিকভাবেই মন ভাল নেই ওঁদের।
করোনা আতঙ্কে ইতিমধ্যেই কুমোরপাড়ায় বিদেশীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কমিটির পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে পোস্টার সেঁটে দেওয়া হয়েছে কুমোরপাড়ার অলিতে-গলিতে। সব সময় ভিড়ে ঠাসা জমজমাট কুমারটুলিতে এখন শ্মশানের নিস্তব্ধতা। শিল্পীদের দোকানে এখন পড়েছে তালা। শুনশান মহল্লা এখন গুমড়ে গুমড়ে কাঁদছে। পুজোর বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই কুমারটুলিতে ব্যস্ততা কয়েক গুণ বাড়ে। শহর কলকাতা, রাজ্য তথা দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি বিদেশেও এখানকার শিল্পীদের গড়া প্রতিমা দর্শকদের নজর কাড়ে। তাই স্থানীয় শিল্পীদের পাশাপাশি তাদের সহযোগী হিসেবে রাজ্য রাজ্য থেকেও এই সময় মৃৎশিল্পীরা হাজির হন কুমারটুলিতে। কিন্তু আচমকা সব হিসেব নিকেশ ওলট পালট করে দিল। প্রথমে করোনা জুজু। পরবর্তীকালে লকডাউন। রোজগার বন্ধ হওয়ায় কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ ক্রমশ চওড়া হচ্ছে মৃৎশিল্পীদের। কীভাবে চালাবেন নিজেদের পেট ? পরিবারের সংসারও চলবে কী করে? এই প্রশ্ন মনের মধ্যে সারাক্ষণ ঘোরাফেরা করলেও উত্তর আজও অজানা মৃৎশিল্পীদের। অসহায় মৃৎশিল্পীদের কথা ভেবে স্থানীয় কয়েকজন মহিলা মিলেই তাঁদের সাধ্যমতো পাশে থাকার অঙ্গীকার নিয়েছেন।
প্রমীলা বাহিনীর অন্যতম মেখলা গুহ বলেন, 'বর্তমান সময়ে ওদের রোজগার বন্ধ হওয়ায় অনেকেই সমস্যার মধ্যে পড়েছেন। ওঁদের পাশে দাঁড়াতেই আমরা এলাকার কয়েকজন মহিলা উদ্যোগ নিয়ে প্রতিদিন চাল, ডাল, আলু তুলে দিচ্ছি। যতদিন না পর্যন্ত পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে আমরা এভাবেই মৃৎশিল্পীদের পাশে থাকব'। কথায় আছে, যাঁরা রাঁধেন তাঁরা চুলও বাঁধেন। কুমোরপাড়ার মহিলাদের উদ্যোগ সে কথাই প্রমাণ করল।