#কলকাতা: মাথায় হাত সাহেব ভট্টাচার্যের। পেশায় যন্ত্র সঙ্গীত শিল্পী। বাড়িতে বোবা কালা দাদা, মা ,পিসি। সঙ্গে দুই কন্যার ও চাপ রয়েছে মাথার উপর। উপার্জন বলতে মাচার অনুষ্ঠান করে যতটুকু পারিশ্রমিক পায়। মাঝে মাঝে শহরের কোনো হোটেলের জলসাতে বাজিয়ে কিছু রোজগার। অনুষ্ঠানের মরশুমে রোজগার একটু বাড়ে । বছরের হিসাবে মাসিক গড় আয় ২০থেকে ২৫ হাজার টাকা। চিন্তা, এইরকম ভাবে যদি লকডাউন চলতে থাকে ।তাহলে ব্যাঙ্কের কিস্তির টাকা এবং সংসার চালানোর খরচ কোথায় পাবে! একই রকম সমস্যায় ভুগছেন গিটারবাদক সুদীপ্ত দাস ।কণ্ঠশিল্পী দেবজিত চক্রবর্তী ,মহুয়া,রাখীর মতো আরো অনেক কন্ঠ শিল্পীরা। যেহেতু এরা বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গান গেয়ে বেড়ান, সেহেতু রাতবিরেতে বাড়ি ফিরতে হয়। মাঝে মাঝে বাড়িতে গানের চর্চা করতে হয়। তাই এরা অল্প টাকার ভাড়া বাড়িতে ভাড়া না দিয়ে থাকতে পারে না। তার জন্য দশ জনের কথা শোনা কিংবা বাধার সম্মুখীন হতে হয় না এদের। এদের বাড়ি ভাড়া ,রূপচর্চা কিংবা কিছুটা আভিজাত্য চালানোর জন্য মাসে অনেকটা টাকা খরচা হয়ে যায়। জমানো টাকা ততটা হাতে আর থাকেনা। একে তো সঙ্গীতের মরশুম প্রায় শেষ। এই সময় শহরের বাইরে বিভিন্ন ক্লাবের অনুষ্ঠান থাকে। তাতে কিছুটা টাকার মুখ দেখে এই সব শিল্পীরা। করোনাভাইরাস আক্রমণের ফলে, লকডাউন ঘোষণার পর থেকেই জমায়েত কিংবা বিভিন্ন অনুষ্ঠান সবই বন্ধ।
তবে স্বাস্থ্যকর্মীদের ইঙ্গিত অনুযায়ী - এই পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত লেগে যাবে। কপালে ভাঁজ পড়েছে এই অনুষ্ঠান শিল্পীদের। ঘরের টাকা প্রায় শেষ। এরা কোন ভাবেই ,কোনদিনই বিপিএল তালিকা ভুক্ত নয়।যে কারণে বিনা টাকায় রেশন পাবে । চিন্তা সংসার চলবে কিভাবে? উপার্জন শূন্য হয়ে গেলে, কোন দরজায় দাঁড়াবেন? সরকার তো নিজের দরজা থেকেই বেরোতে বারণ করে দিয়েছে। ঝকমকে জামা, মঞ্চে ঝিলমিল আলো, চারদিকে মানুষের হাত তালি। এসব ,এদের জীবনটা যেন রোমান্টিক করে রাখে। আর সেই মূর্ছনায় ঘুম ,স্বপ্ন,হালকা আবেগের তরঙ্গে সারাদিন কাটে। কোনদিন তো এরা ভেবে দেখেনি। দিনের পর দিন কাজ বন্ধ থাকবে! কাজের মন্দা বাজারে গেছে কিন্তু সম্পূর্ণ স্তব্ধ পৃথিবী এর আগে কেউ জীবিত অবস্থায় দেখেনি। এরা প্রত্যেকেই চিন্তাভাবনা করছেন মুখ্যমন্ত্রীর দ্বারস্থ হবেন।বাঁচার জন্য যদি কিছু সাহায্য পাওয়া যায়! কিন্তু লকডাউন চলছে সেহেতু বাড়ি থেকে বেরোনো বারণ। গেলে একসঙ্গে অনেককে যেতে হবে। তাতেও বাধা। জমায়েত করা যাবে না।ভাবনা শেষ আবার ঘুমিয়ে পড়া। সকালে ঘুম ভাঙার পর দেবজিৎ হঠাৎ করেই গান ধরলেন 'অন্ধকারের এই রাতের শেষে, সূর্য কেন আর উঠল না'। প্রতিদিন সকাল হলে ,এরা আর বাজারে বেরোচ্ছে না। সাহেব একজন উঠতি সুরকার ও বটে। ওর গানের সুরে কুমার শানু কয়েকটি গান গেয়েছেন। এসব ধরে রাখতে গেলে,ভেবেছিল একটি দোকান খুলবে। তার জন্য ঋণ নিয়েছিল। সে দোকান আর খোলা হয়নি। এখন সব কিছুই ওর কাছে বোঝা। এখন এইসব শিল্পীদের কাছে ফোন এলেই প্রথমে প্রশ্ন, লকডাউন কবে উঠবে কিছু বলল সরকার? এদের নিয়ে সবাই খুব কম খরচে,বিনোদন করে।একবার কি কেউ ভেবে দেখেছে,' কি গাইলে গুরু,কিংবা কি বাজালে গুরু ' রা কেমন আছে? কি খাচ্ছে?তাদের সংসার চলছে কি না?
SHANKU SANTRA