#কলকাতা: মইদুল মোল্লা (৫০), উত্তর ২৪ পরগণার দেগঙ্গায় বাসিন্দা। স্ত্রীকে খুনের দায়ে দমদম সংশোধনাগারে ৯ বছর ধরে বন্দি। গত ১৫ মাস ধরে করোনা সংক্রমণের জন্য প্যারোলে মুক্ত। ইন্দ্রজিৎ পাল (৫১) কলকাতার টালিগঞ্জের বাসিন্দা। ইনিও স্ত্রীকে গলা কেটে খুনের দায়ে অভিযুক্ত হয়ে গত ১১ বছর ধরে সংশোধনাগারে বন্দি। বাড়িতে দুই সন্তান রয়েছে। গত ১৪ মাস ধরে প্যারোলে মুক্ত। মোকলেছুর রহমান মণ্ডল (৩৫) ধর্ষণের দায়ে অভিযুক্ত বসিরহাটের বাসিন্দা মোকলেছুর গত আট বছর ধরে কারাবন্দি। গত দেড় বছর প্যারোলে ছাড়া পেয়েছেন।
তিনজনেরই একটা জায়গায় বড্ড মিল। গত বেশ কয়েক বছর ধরে তারা কারাগারের ভিতরেই নিজেদের আমূল পরিবর্তন ঘটিয়ে বাধ্য ছাত্রের মতো পাটজাত দ্রব্য তৈরির প্রশিক্ষণ নিয়েছেন। আর তিনজনেই প্যারোলে সংশোধনাগার থেকে বেরিয়ে চুটিয়ে কাজ করেছেন। সন্তান, পরিবার-সহ নিজেদের ভবিষ্যতকে আরও সুন্দর করে তোলার জন্য প্যারোলের সময়টুকু সব সময় মনোনিবেশ করেছেন জুটের মনোমুগ্ধকর ব্যাগ, ঘর সাজানোর জিনিস তৈরি করতে। তাদের এই কাজে পূর্ণ সহযোগিতা করেছে আলিপুরের রক্ষক ফাউন্ডেশন। যারা দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে পরিবেশ বান্ধব পাটজাত দ্রব্যের গ্রহণযোগ্যতা সাধারণের মধ্যে বাড়াতে কাজ করছে।
আরও পড়ুন: নিউটাউনের মহিলা পরিচালিত দুর্গাপুজো, 'বঙ্গ জননী' থিমে এ বার মাতবে শহর
গত বেশ কয়েক বছর ধরেই কলকাতার প্রেসিডেন্সি এবং আলিপুর সংশোধনাগারে রক্ষক ফাউন্ডেশন কারাবন্দিদের নিয়ে তারা যাতে সংশোধনাগার থেকে বেরোনোর পর সুস্থ সামাজিক জীবনে ফিরতে পারে তার জন্য তাদের মধ্যে লুকিয়ে থাকা প্রতিভাকে খুঁজে আনার কাজ চালাচ্ছে। সুপ্রিমকোর্ট করোনা পরিস্থিতির সময় অনেক দোষীদের নজিরবিহীন প্যারোল মঞ্জুর করেছেন। এই দোষীরাও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করেছে এবং দমদম কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারে ২০১৬ সাল থেকে রক্ষক ফাউন্ডেশনের সঙ্গে কাজ করছে। এরা যেভাবে কাজ করেছে এবং সহকর্মীদের যে সম্মানের স্বীকার হয়েছেন তাতে আপ্লুত রক্ষক ফাউন্ডেশনের প্রত্যেকে। তিনজনের কাজই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ভুয়সী প্রশংসা পেয়েছে। বৃহস্পতিবার কলকাতা প্রেস ক্লাবে রক্ষক ফাউন্ডেশনের তরফ থেকে এই তিনজনকে সংবর্ধিত করা হয়। এ দিনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত প্রত্যেকেই জানান এই কারাবন্দিরা যাদের দ্রুত সংশোধনাগার থেকে মুক্তি পায়, তার জন্য প্রত্যেকের সচেষ্ট হওয়া উচিত।
রক্ষক ফাউন্ডেশনের কর্ণধার শ্রীমতি চৈতালি দাস জানিয়েছেন, "বন্দিদের প্যারোলের কথা এবং দারিদ্র্য ও অসহায়ত্বের কারণে তাদের পরিবারের দুর্দশার কথা জেনেছিলাম। ফাউন্ডেশন তাদের চাকরি এবং অন্যান্য সহায়তা প্রদান করেছে। বর্তমানে এই বন্দিরা বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন পাট প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে কারিগর হিসাবে স্বীকৃত ও সম্মানিত। তারা এখন অত্যন্ত দক্ষ এবং দায়িত্বশীল কারিগরে রূপান্তরিত হয়েছে যারা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে রপ্তানি অর্ডার সরবরাহ করছে। বছরের পর বছর ধরে তারা পরিবেশবান্ধব পাটজাত দ্রব্য তৈরিতে পারদর্শিতা অর্জন করেছে। তাদের কর্মের মাধ্যমে সমাজের প্রতি বিশেষ অবদান রেখেছে। এরা প্রত্যেকেই তাদের কাজের মাধ্যমে এবং মর্যাদার সঙ্গে জীবনযাপন করছে। তারা পশমী পাটের পাইলট প্রকল্পের চূড়ান্ত পণ্যের সফল ফলাফলের জন্য, অসামান্য কৃতিত্বের যোগ্য।"
করোনা পরিস্থিতির অনেকটাই উন্নত উন্নতি হওয়ায় এদের প্রত্যেকেরই প্যারোলের সময়সীমা শেষ হয়ে যাচ্ছে। ফলে আবার ফিরতে হবে সংশোধনাগারে। তবে তার আগে প্রত্যেকেই জানাচ্ছেন সুস্থ সামাজিক জীবনে ফিরতে তারা প্রত্যেকে উদগ্রীব। রত্নাকর থেকে বাল্মিকী হওয়ার জন্য সুযোগ এবং পরিবেশ যে অনেকটাই উপযোগী হতে পারে, তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ এরা প্রত্যেকেই।
ABHIJIT CHANDA
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Kolkata