#বহরমপুর: কলকাতায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে দলের বৈঠকে যোগ দেওয়ার জন্য নিমতিতা স্টেশনে ট্রেন ধরতে আসছিলেন। এমন সময়েই বোমা মারা হল শ্রম প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনের উপর। শুধু জাকির হোসেনই নয়, বোমার আঘাতে আক্রান্ত হয়েছেন অন্তত ১৪ জন। ঘটনায় মন্ত্রীর বাঁ হাত, বা পা গুরুতর আহত হয়েছে। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় মুর্শিদাবাদ জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এই ঘটনাকে ঘিরে রাজ্য রাজনীতিতে নতুন করে চাপানউতোর শুরু হল।
জাকিরের ঘনিষ্ঠরা এই হিংস্রতায় স্তম্ভিত। নিউজ১৮-এর প্রতিনিধিকে কাঁদতে কাঁদতে জাকিরের এক অনুগামী বলেন, "ওই লোকটা কোনও ভুল কথা বলেনি, কারও ক্ষতি চায়নি। আমাদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।" তৃণমূলের স্পষ্ট অভিযোগ, তৃণমূলকে রুখতেই এই আক্রমণ। কুনাল ঘোষ বলেন, "উন্নয়নমূলক কাজে প্রতিপক্ষের অপেক্ষা। তৃণমূলকে ভাঙার কাজ যারা করছে সেই কংগ্রেস বিজেপি বামপন্থীরা।"
যদিও এই অভিযোগ মানতে রাজি নন বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ। তাঁর কথায়, "সমাজবিরোধীরা রাজনীতিকে নিয়ন্ত্রণ করছে। নির্বাচন আসছে টেনশন বাড়ছ। সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা প্রশ্নের মুখে। আজ শুভেন্দু অধিকারীর ওপরই হামলা হয়েছে।" আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন অধীর চৌধুরীও।
ঠিক কী ভাবে দুষ্কৃতীরা আক্রমণ করল? প্রাথমিক তথ্য বলছে, আগামী কাল নেতাজি ইন্ডোর স্টেডিয়ামে বুথ কর্মীদের নিয়ে নেতাজী ইন্ডোরে সম্মেলন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেখানে যোগ দেওয়ার টিকিট আগেভাগেই কাটা ছিল জাকির হোসেন-সহ তাঁর অনুগামীদের। সেই এদিন ট্রেন ধরতেই অনুগামীদের নিয়ে নিমতিতার দিকে রওনা হন জাকির হোসেন। গাড়ি থেকে নেমে স্টেশনের দিকে যাচ্ছিলেন জাকির, এমন সময়েই হামলা করেন দুষ্কৃতীরা। রীতিমতো জনবহুল এলাকায় এই হামলায় ত্রস্ত ব্যবসায়ীরা ভয়ে দোকান বন্ধ করে দিতে থাকেন। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, জাকিরকে হামলা সুপরিকল্পিত, কারণ জাকিরের সঙ্গে আজ খুব বেশি নিরাপত্তারক্ষীও ছিলেন না।
জাকির হোসেনকে কারা কেন আক্রমণ তা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের মত, মুর্শিদাবাদে দলের মুখ আবু তাহেরর সঙ্গে দলের কিছু সদস্যের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। আজই তৃণমূল বহিস্কার করেছে ডাকসাইটে নেতা মোশারফ হোসেনকে। তিনি যাচ্ছেন কংগ্রেসে। দল ছাড়ছেন আরেক দাপুটে নেতা নীলরতন আঢ্যও। এদিন মোশারেফকে বহিস্কারের কাজ জাকিরই করেছিলেন। কাজেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের তত্ত্ব উড়িয়ে দেওয়া যায় না। ঠিক যেমন উড়িয়ে দেওয়া যায় না কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতী আক্রমণের সম্ভাবনার কথাও। তবে দলমত নির্বিশেষে জাকির হোসেনকে অসূয়াশূন্য বলে মনের করেন বেশির ভাগ নেতাই। কাজেই তাঁর উপর হামলায় কার্যতই স্তম্ভিত অনেকেই।
দিন কয়েক আগেই রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়ের জবাবি সভা করে তাক লাগিয়ে দিয়েছিলেন জাকির হোসেন। জেলায় তাঁর দলের শক্তি প্রমাণ করেছিল সেই সভা। রাজনৈতিক মহলে জল্পনা, জাকির আহত হলে বা ক্ষতিগ্রস্থ হলে দলের আত্মবিশ্বাসে ভাঙন ধরবে, এমনটা ধরে নিয়েও হামলার ছক করা হতে পারে।