#কলকাতা: কে বড় পরিচালক? সত্যজিত না ঋত্বিক? ঘটি-বাঙাল, মোহন-ইস্টের মতোই এই বিতর্কে কার্যত দু-ভাগ বাঙালি। সেই তুলনা টানতে গিয়েই বিস্ফোরক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। সৌমিত্রর স্বীকারোক্তি, সত্যজিতকে অপমান করায় হৃত্বিককে ঘুঁষি মারেন তিনি। ঋত্বিক সম্পর্কে মূল্যায়নেও অকপট সৌমিত্র। তাঁর চোখে সুবর্ণরেখা, আজ, কাল, পরশুর গল্পর পরিচালক ভীষণই নিচু মানসিকতার মানুষ। পরিচালক হিসাবেও ওভার রেটেড।
এতদিন পড়ে চমকে উঠলেন তো! কিন্তু কিংবদন্তী অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় নাকি একান্ত সাক্ষাৎকারে এমনই জানিয়েছেন লাইভ মিন্ট পত্রিকাকে ৷ ওই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে সত্যজিৎ রায়ের ‘অপু’ নাকি একান্ত সাক্ষাৎকারে ঋত্বিকের সম্পর্কে এমনই তিক্ততা উগরে দিয়েছেন ৷
বিতর্কিত মন্তব্য ১‘সব ভুলে একবার ঋত্বিকের ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব দিই। তবে বলেছিলাম, মদ খেয়ে সেটে ঢুকলে লাথি মেরে বের করে দেব। সেটে কেন পরিচালক মদ খেয়ে আসবে?’
বিতর্কিত মন্তব্য ২‘ঋত্বিকের বহু খারাপ স্বভাব ছিল। উনি মানুষকে নিজের মতো করে চালাতে চাইতেন। সত্যজিত রায়কে অকারণে অপমান করতেন।’
বিতর্কিত মন্তব্য ৩‘ষাটের দশকে একটি ফিল্ম ইন্ড্রাস্ট্রি নিয়ে বিতর্কসভায় ঋত্বিক আমার পাশে বসেছিলেন। আমাকে রাগাতে না পেরে গালাগালি দিতে শুরু করেন। আমি পাল্টা উত্তর দিই। ওর জামার কলার ধরে ঘুঁসি চালাই। ওকে বলেছিলাম, আমি সত্যজিত রায়ের মতো ভদ্রলোক নই।’
বিতর্কিত মন্তব্য ৪‘ঋত্বিক ভাল পরিচালক। কিন্তু ওভাররেটেড। উনি দারুণ কিছু করেছেন, মানি না। সত্যজিত রায়ের সঙ্গে তো তুলনাই আসে না। যারা করে, তারা কারা?’
বিতর্কিত মন্তব্য ৫‘ঋত্বিকের বামপন্থী মনোভাব ওর প্রতি বঞ্চনায় কারণ, মানি না। ওটা বাঙালির রান্নাঘর-রাজনীতি।’
লাইভ মিন্ট পত্রিকাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরও বেশ কয়েকটি ঘটনা টেনে এনেছেন সৌমিত্র। হৃত্বিকের আচরণ, পরিচালক হিসাবে ব্যর্থতা নিয়েও আঙুল তুলেছেন পরিচালকের দিকেই।
দু-জনের সম্পর্ক, টানাপোড়েন নিয়ে আলোচনা কম হয়নি। খুব কাছ থেকে সে সবেরই সাক্ষী বাঙালির অপু। সেই ঋত্বিক ঘটক সম্পর্কে মূল্যায়ণে বিস্ফোরক সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। ঋত্বিক তাঁর কাছে যতটা না ভালো, তার থেকে অনেক বেশি খারাপ। সত্যজিত যাকে নিজের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী ভাবতেন, সেই ঋত্বিকের সম্পর্কে সৌমিত্রর স্মৃতিতে শুধুই তিক্ততা! এই সাক্ষাৎকার নিয়ে ঝড় ওঠে সোশ্যাল মিডিয়ায়।
বিখ্যাত নির্দেশক-অভিনেতা কমলেশ্বর মুখোপাধ্যায়ের কাছে এই সাক্ষাৎকার নিয়ে প্রতিক্রিয়া চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এই সাক্ষাৎকারে যে তিন জনের কথা বলা হয়েছে তাঁরা প্রত্যেকেই খুব বড় মাপের মানুষ ৷ সত্যজিৎ-ঋত্বিককের কাজ দেখেই বড় হয়েছি আমরা ৷ আমাদের ফিল্ম সম্বন্ধে ধারণা গড়ে উঠেছে তো ওদের কাজ দেখেই ৷ তবে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায় ও ঋত্বিক ঘটকের নিজেদের মধ্যে সম্পর্কের সমীকরণ কীরকম ছিল তা বলতে পারব না ৷ তবে ‘‘মেঘে ঢাকা তারা’’ নিয়ে কাজ করার সময় এরকম কোনও রেফারেন্স পাইনি ৷ ’
এখানেই শেষ নয় চমকের ৷ ইটিভি নিউজ বাংলার তরফে সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের থেকে সাক্ষাৎকারটি নিয়ে প্রশ্ন করা হলে, অবাক সৌমিত্র সাক্ষাৎকারের কথা সম্পূর্ণ অস্বীকার করেন ৷ তিনি জানান, ‘লাইভ মিন্ট বলে কোনও পত্রিকার কথা শুনিনি। এ ধরণের সাক্ষাৎকার দিয়েছি কিনা মনে করতে পারছি না। এমন কথাও বলিনি।’
বাংলা হোক বা ভারতীয় সিনেমা। সত্যজিৎ-ঋত্বিকের লড়াই মানেই যুক্তি-তক্ক-গপ্পো। তা সত্যজিতের মানসপুত্র আরও একবার প্রমাণ করলেন।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Bengali cinema, Bengali News, Controversial Interview, Controversy, ETV News Bangla, Famous director, IRelation, Ritwick Ghatak, Satyajit Ray, Soumitra Chatterjee