#কলকাতা: সামান্য সাড়ে আট হাজার টাকার মাইনে ৷ আর তাতেই কেটে গেল চাকরিজীবনের চল্লিশটা বছর ৷ উত্তর কলকাতার একটা ভাড়া বাড়িতে বাস ৷ সে বাড়ির অবস্থাও যথেষ্ট শোচনীয় ৷ এভাবে চললে কারই বা ভাল লাগে ৷ কিন্তু হতাশায় কখনও ডুবে যাননি ষাটোর্ধ্ব অমিত নাথ হাজরা ৷ তাঁর জীবনে একটাই শখ , শহরকে সবুজ রাখা ৷
গিরীশ পার্ক অঞ্চলের প্রাচীন জেলিয়াটোলার বাসিন্দা ‘বাবলুদা’ গত ৪০ বছর ধরে শহরের বিভিন্ন জায়গায় গাছ লাগিয়ে আসছেন ৷ সবুজায়ন নিয়ে অনেক সচেতনতা প্রচার করেও লাভ হয় না ৷ শহরের এখানে-ওখানে প্রায় সর্বত্রই যথেচ্ছ গাছ কাটার ট্রেন্ড এখনও চলছে ৷ চরম দারিদ্রতাই যার সম্বল, সেই ব্যক্তি কিন্তু বাড়তি রোজগারের চেষ্টায় কখনই অন্য কোনও পথ বেছে নেননি ৷ বরং ফোকাস করেছেন নিজের শখেই ৷ খুঁজে নিয়েছেন বাঁচার অন্য মানে ৷ সবুজ তিলোত্তমার স্বপ্নই দেখেন তিনি ৷ আর সেটা গত কয়েকবছর ধরে নয়, পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময়ের আগের থেকে ৷
অভাবের সংসারে অন্য কোনও শখ রাখা যে কারোর পক্ষেই কঠিন কাজ ৷ কিন্তু অমিতবাবু নাছোড়বান্দা ৷ অনেক সমস্যা সহ্য করতে হলেও তিনি হাল ছাড়েননি ৷ অফিস থেকে ফেরার পথে হোক কিংবা অবসর সময় ৷ শহরের বিভিন্ন প্রান্তে গাছের চারা লাগানোর কাজ নিয়মিত করে গিয়েছেন তিনি ৷ ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকে গাছ লাগানোর কাজ শিখলেও মাঝেমধ্যেই স্কুল কেটে চলে যেতেন শহরের বিভিন্ন বাগানে এবং পার্কে ৷ বিভিন্ন গাছ সম্পর্কে ধারণা জন্মায় সেখান থেকেই ৷ এই কাজ শুধুমাত্র কলকাতা এবং হাওড়ার মধ্যেই সীমাবদ্ধ রাখেন নি ৷ উত্তরপ্রদেশ থেকে শুরু করে রাজধানী দিল্লি যেখানেই ঘুরতে গিয়েছেন, সঙ্গে করে গাছ নিয়ে গিয়েছেন অমিতবাবু ৷
শহর হবে সবুজে ভরা ৷ সেই গাছের ছায়ায় মানুষ দু’দণ্ড বসবেন, পাখিদের কলকাকলিতে ভরে উঠবে এলাকা ৷ এই স্বপ্নকে সার্থক করতে সাতের দশকের শেষ থেকেই নিজের বাড়ির কাছে গণেশ টকিজ থেকে সিমলা ব্যায়াম সমিতি পর্যন্ত চারাগাছ লাগানো শুরু করেন তিনি ৷ এই কাজে অনেক বাধাও পেয়েছেন অমিতবাবু ৷ তাঁর লাগানো প্রচুর সংখ্যায় গাছ উপড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছে ৷ কখনও কোনও দোকানদার তাঁর দোকান ঢাকা পড়ে যাচ্ছে আবার কেউ বা তাঁর বাড়ির সামনের দিকটা ঢাকা পড়ে যাচ্ছে, এই দোহাই দিয়ে গাছ কেটে ফেলেছে ৷ এমনকী, গভীর রাতে সকলের অজান্তে কয়েকশো গাছে আগুন লাগিয়ে ধ্বংসও করে দিয়েছে ওই এলাকার মানুষ বলে অভিযোগ অমিতনাথের ৷
শুধু চারাগাছ পোঁতাই নয় ৷ সেইসঙ্গে বেড়া দিয়ে অঞ্চলটি বাঁধানো জাল দিয়ে ঘেরার জন্য প্রচুর টাকা খরচ হয় ৷ সেই গাছগুলির বেড়া ভাঙা থেকে শুরু করে শিকড় থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে দেওয়ার মতো জঘন্য ঘটনা তাঁর মনকে ক্ষতবিক্ষত করে বলে দুঃখপ্রকাশ করেন অমিতবাবু ৷ এমনকী, তাঁর নিজের বাড়িতে লাগানো গাছও ভাড়াটেরা অনেক সময় উপড়ে ফেলে দিয়েছেন বলে অভিযোগ অমিতনাথের ৷
হাওড়ার একটি বেসরকারি সংস্থায় ভাড়া সংগ্রহের কাজ করেন তিনি ৷ মাইনে পান খুবই সামান্য ৷ শহরের সবুজায়নের স্বার্থে বছরের পর বছর এত কাজ করেও কখনও সেভাবে কোনও স্বীকৃতি পাননি অমিতবাবু ৷ তাঁর কাছে গাছই নেশা, গাছরাই যেন তাঁর সন্তান ৷ স্ত্রী-র টিউশন থেকে উপার্জিত টাকা ধার করেই নার্সারি থেকে অনেকসময়েই বিভিন্ন গাছের চারা কিনেছেন ৷ কারণ তাঁর একটাই বার্তা, আগে পরিবেশ বাঁচান, তাহলেই আপনি বাঁচবেন ৷ নিজের জন্য প্রত্যেকেই যেমন যত্নশীল, কিন্তু সবুজায়নের ব্যাপারে অনেকেই খুব উদাসীন ৷ এর বদল না ঘটলে কিন্তু ঘোর বিপদ অপেক্ষা করছে বলেই মত অমিতনাথের ৷
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Amit Nath Hazra, Tree Lover