#কলকাতা: শীতের কলকাতায় বাড়তি আকর্ষণ থাকে বাবুঘাটে গঙ্গাসাগরের জন্য বসা মেলা। দেশ বিদেশ থেকে আসা সাধু এসে তৈরি করেন আখড়া। সেখানে সারাদিন ধরে জ্বালানো হয় অগ্নিকুন্ড । আর তা দেখতেই ভিড় জমান ভক্তরা। অভিযোগ তা থেকেই বাতাসে ছড়িয়ে পড়ে দূষণ। প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে দূষণের মাত্রা। একাধিক উপায় ভেবেও মিলছে না কোনও সুরাহা। যদিও নতুন বছর থেকে শীতের সময় কলকাতার আকাশে দূষণ ঠেকাতে তৎপর হচ্ছে কলকাতা পুরসভা।কলকাতা পুরসভা ও কলকাতা পুলিশ তাই যৌথভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাবুঘাটে ময়দানের গঙ্গাসাগর ক্যাম্পে জ্বালাতে দেওয়া হবে না আগুন। জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায় মেনেই এই পদক্ষেপ বলে জানাচ্ছে কলকাতা পুরসভা।
গঙ্গাসাগর মেলায় যাওয়ার জন্য ভক্তরা জানুয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই ভিড় করেন বাবুঘাটে। দীর্ঘদিন ধরে সেখানে চলে আসছে ক্যাম্প। যা কার্যত একটা ছোট গঙ্গাসাগর মেলার চেহারা নেয়। সেখানেই দেখা যায় বহু মানুষ যেখানে সেখানে কাঠ জ্বালাতে শুরু করে দেন। বাবুঘাটের এই অংশে যাতে যে কেউ কাঠ বা যা দূষণ তৈরি করে এমন কিছু না জ্বালায় সে বিষয়ে কড়া নজরদারি চালাবে কলকাতা পুলিশ। তবে হোম বা পুজা করার জন্য যে আগুন জ্বালানো হয়, সাধুদের সেই কাজে কোনও বাধা দেওয়া হবে না। ময়দানে খোলা আকাশের নীচে যেখানে সেখানে আগুন জ্বালানো নিয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। রান্নার কাজ করতে ওই এলাকায় বিকল্প পথের সন্ধান করতে বলা হয়েছে। কলকাতার মহানাগরিক জানিয়েছেন, “জাতীয় পরিবেশ আদালতের রায়কে মান্যতা দিয়েই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বাতাসে দূষিত কণার মাত্রা কমাতে একাধিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে পুজা অর্চনার কাজে কোনও বাধা দেওয়া হবে না। খোলা উনুন থেকে যে দূষণ ছড়ায় সেটি নজর কড়া হচ্ছে।” ইতিমধ্যেই প্রশাষনকে সে বিষয়ে নজর দিতে বলা হয়েছে। শহরে বায়ুদূষণের মাত্রা ভীষণ খারাপ। বিশেষ করে কলকাতার সবুজ যেখানে বেশি সেই ময়দানচত্বরে।
পরিবেশ দফতরের বসানো মিটার বলছে ভিক্টোরিয়া ও ফোর্ট উইলিয়াম চত্বরে দূষণের মাত্রা সর্বাধিক। বাতাসে ভাসমান ধূলিকণার মাত্রা প্রায় ২৫০ মাইক্রোগ্রাম থাকছে দিনের অধিকাংশ সময়। এই পরিস্থিতিতে ময়দান চত্বরে দূষণ কমানো এখন মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রশাষনের কাছে। “যে সমস্ত জায়গায় দূষণ সবচেয়ে বেশি সেখানে আমরা সারাদিন ধরে জল ছাড়তে থাকব রাস্তায়। এছাড়া যে সমস্ত নির্মাণ বা খাবার বা ইস্ত্রীর দোকান থেকে দূষণ ছড়াচ্ছে সেখানেও আমরা নজর দিচ্ছি। শুধু সকালবেলা জল দিয়ে যাওয়া নয়। যেখানে দূষণ বেশি সেখানে আমরা সারাদিন এই কাজ করতে থাকব।” এমনটাই জানাচ্ছেন কলকাতার মহানাগরিক।
অন্যদিকে গঙ্গাসাগর মেলার জন্য নিরাপত্তার কড়া বন্দোবস্ত করছে পুলিশ। কলকাতায় যে ঘরে ভক্তরা তাদের জিনিষপত্র রেখে যান সেখানে এবার লাগেজ স্ক্যানার থাকছে। এছাড়া প্রতিটি গঙ্গার ঘাটে থাকছে সিসিটিভি ও সব সময় থাকছে ঘোষণার ব্যবস্থা। তৈরি হচ্ছে বিশেষ কন্ট্রোল রুম। যেখানে বসে কলকাতা ও লট ৮ পুরোটাই মনিটর করা যাবে। এছাড়া মহিলাদের পোষাক বদলের জন্য ঘরের সংখ্যাও বাড়াচ্ছে কলকাতা পুরসভা।
সুষ্ঠভাবে মেলা আয়োজনের যাবতীয় ব্যবস্থা রাখছে প্রশাষন। তবে মেলার আয়োজন থেকে যাতে বাতাসে দূষণের মাত্রা না ছড়ায় সেদিকেই এবার বাড়তি নজর আধিকারিকদের।