#কলকাতা: কেউ কারও নাম করছেন না৷ কিন্তু কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় ও শুভেন্দু অধিকারীর মধ্যে তরজা ক্রমশ বাড়ছে৷ প্রথমে হুগলির চাঁপদানির কর্মিসভা থেকে শুভেন্দুকে আক্রমণ করেছিলেন কল্যাণ৷ শুক্রবার হুগলির বলাগড়ে পুজোর উদ্বোধনে এসে পাল্টা কল্যাণকে জবাব দেন শুভেন্দু৷ শুক্রবারই ফের পরিবহণমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সরব হলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ৷ কল্যাণের পাল্টা তোপ, 'নন্দীগ্রামের জন্য সুপ্রিম কোর্ট থেকে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ নিয়ে না আসলে এই নেতারা সব খাটের তলায় ঢুকে গিয়েছিলেন৷' আরও একধাপ এগিয়ে শুভেন্দুকে কল্যাণের প্রশ্ন, 'নন্দীগ্রাম দিবসের দিন কাকে চ্যালেঞ্জ করেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে? সাহস হয়নি কেন নামটা বলার?'
গত ১০ নভেম্বর নন্দীগ্রামে শহিদ দিবসের অনুষ্ঠানে নাম না করেই দলীয় নেতৃত্বকে কটাক্ষ করেন শুভেন্দু৷ এর পর গত ১৩ নভেম্বর চাঁপদানিতে দলীয় একটি কর্মিসভায় নাম না করেই শুভেন্দুকে নিশানা করেন কল্যাণ৷ নন্দীগ্রামের বিধায়কের নাম না করেই শ্রীরামপুরের তৃণমূল সাংসদ বলেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের থেকে সবরকম সুবিধা নিয়েছিস, চারটে মন্ত্রিত্ব পেয়েছিস৷ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় না থাকলে মিউনিসিপ্যালিটির সামনে আলু বেচতিস!'
শুক্রবার হুগলির বলাগড়ে একটি জগদ্ধাত্রী পুজোর উদ্বোধনে আসেন শুভেন্দু অধিকারী৷ সেখানে প্রয়াত সিপিএম সাংসদ অনিল বসুর তুলনা টেনে কল্যাণকে জবাব দেন তিনি৷ শ্রীরামপুরের সাংসদের নাম না করেই তিনি বলেন, 'শ্রদ্ধা রেখেই বলছি, প্রয়াত সিপিএম সাংসদ অনিল বসু যখন কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেছিলেন, হুগলি জেলার মানুষ মেনে নেয়নি৷ আজকে যদি বর্তমান কোনও জনপ্রতিনিধি আমার বা আমার পরিবারের বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন, আপানারা কি মেনে নেবেন? রাজনৈতিক ভাবে সমালোচনা হতেই পারে, আমরা কেউ সমালোচনার ঊর্ধ্বে নই৷ কিন্তু ব্যক্তিগত আক্রমণের আমি সমালোচনা করি৷'
শুভেন্দুর এই বক্তব্যের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই একটি ভিডিও বার্তায় ফের পাল্টা জবাব দেন কল্যাণ৷ শ্রীরামপুরের সাংসদকে সেখানে বলতে শোনা যায়, 'দলের সদস্য থাকব, মন্ত্রি হয়ে থাকব, আবার অন্য রাজনৈতিক দলের সঙ্গে গোপনে আঁতাঁত করব, যিনি এরকম কাজ করেন তাঁর কথার কী জবাব দেব? নন্দীগ্রাম দিবসের দিন তাঁর শারীরিক ভাষা দেখেছিলেন? আজকে বড় বড় কথা বলছেন, এর ভাষা, ওঁর ভাষা নিয়ে কথা বলছেন৷ সেদিন কাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন? বলেননি তো, সাহস হয়নি বলার? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন?'
তৃণমূল সাংসদ আরও বলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে নন্দীগ্রাম, সিঙ্গুর, চমকাইতলা, গড়বেতা সহ গোটা রাজ্যে আন্দোলন হয়েছিল৷ তাঁর সঙ্গে সবাই সহযোগী ছিলেন৷ কোথাও কারও অবদান কম ছিল, কারও বেশি৷ নন্দীগ্রাম প্রসঙ্গে কল্যাণ এর পর বলেছেন, 'আমি তো বুক বাজিয়ে বলতে যাইনি নন্দীগ্রামে আমার কী ভূমিকা ছিল৷ ২০০৭ সালের ১৫ মার্চ নন্দীগ্রামে সিবিআই তদন্তের জন্য যদি সুপ্রিম কোর্ট থেকে আদেশ না নিয়ে আসতাম, তাহলে এসব বড় বড় নেতারা সব ঢুকে গিয়েছিল খাটের তলায়৷ বেরিয়ে আসতে পারত না৷ সেদিন তো সুপ্রিম কোর্টে একদিনও সময় দিতে পারেননি উনি৷'
শুভেন্দু বলাগড়ের সভা থেকে প্রয়াত অনিল বসুর উদাহরণ দিয়েছিলেন৷ পাল্টা শুভেন্দুকে তমলুকের সিপিএম সাংসদ লক্ষ্মণ শেঠের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন কল্যাণ৷ ভিডিও বার্তায় তিনি বলেছেন, 'বিদ্যাসাগরের মাটিতে লক্ষ্মণ শেঠও দোর্দণ্ডপ্রতাপ সাংসদ হয়ে উঠেছিলেন৷ কিন্তু নিজস্ব দুষ্কর্মের জন্য মানুষ তাঁকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছেন৷ আত্ম অহংকারে অনেক কিছু শেষ হয়ে যায়৷' কল্যাণ আরও বলেন, 'এই দলে থাকলে প্রতিটি জায়গায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নেত্রী মানতে হবে৷ তাহলে সহযোগিতা, সহানুভূতি থাকবে৷ তা না হলে বিরোধিতা আছে, থাকহে৷ কতদিন পর্যন্ত ভোগ করবে? ভোটের শেষ দিন পর্যন্ত সব ভোগ করে নিয়ে অন্য রাজনৈতিক দলে চলে যাবে? তাহলে মানুষই এর জবাব দেবে৷ একটা মিটিংয়ে দু' চার হাজার লোক নিয়ে এসে হইহুল্লোড় করা যায়৷ মানুষ সব দেখছে, মানুষ সব জানে৷ বেইমানদের পশ্চিমবঙ্গে স্থান হয়নি, হবেও না৷'
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Suvendu Adhikari