Arnab Hazra
#কলকাতা: হাতি মেরা সাথী। সিনেমার সংলাপ বদলে নিয়ে বলাই যায় ‘হাতি জিয়ন কাঠি’। আর তাই সুদূর কানাডা থেকে রাজ্যে এসেছেন সঙ্গীতা আইয়ার। দেশকে বাঁচাতে রাজ্যকে বাঁচাতে। আর পরিবেশকে দূষণ মুক্ত করার পাঠ নিয়ে। হাতি, দূষণ মুক্তি গুলিয়ে যাচ্ছে ! আধুনিক গবেষণা হাতিয়ার করে সঙ্গীতা দেবীর দাবি জঙ্গলের বাস্তুতন্ত্র রক্ষায় বড় ভূমিকা রয়েছে গজগতির। সুস্থ স্বাভাবিক হাতি প্রতিদিন ২০০কেজি খাবার খায়। এর মধ্যে ১৫০কেজি মল আকারে নির্গত করে। ১৫ঘণ্টা ধরে মলত্যাগ করে ঘুরে ঘুরে। ততক্ষণে কয়েক কিলোমিটার জঙ্গল সাফারি সম্পূর্ণ। গজরাজের মলেই থাকে বিভিন্ন গাছের বীজ। প্রাকৃতিক উপায়ে এও এক বৃক্ষরোপণ। ফলতঃ জঙ্গল থেকে যায় ঘণ। যে ঘন জঙ্গল হাজারো জীব বৈচিত্রের আশ্রয়স্থল।
এখানেই শেষ নয় জঙ্গলের ময়লা পরিস্কারেও বড় ভূমিকা হাতির দলের জঙ্গলের রাজা সিংহ হলেও ওজনে সেরা হাতি। এই চতুষ্পদীর টন ওজনের থাবায় জমাট ময়লা নরম হয়ে যায়। বৃষ্টির জল পড়তেই সাফ হয়ে যায় বন।
জঙ্গলের পথ তৈরি করে অন্য জন্তু জানোয়ারদের সাহায্য করে হাতি।সর্বশেষ হাতি সুমারির তথ্য বলছে সারাদেশে বৃহত্তর হাতি পরিবারের সদস্য ২৯০০০।
পশ্চিমবঙ্গে নয় নয় করে হাতির সংখ্যাটা ৫০০-র বেশি। এর মধ্যে ৩০০ হাতি রয়েছে উত্তরবঙ্গের ডুয়ার্সের জঙ্গলে ও তার আশেপাশে। বাকি ২০০ গোটা রাজ্যে ছড়িয়ে।
ডুয়ার্স বাঁচিয়ে রাখতে হাতিদের বেঁচে থাকাটা অত্যন্ত জরুরী। ওয়াইল্ডলাইফ ট্রাস্ট অফ ইন্ডিয়া হিসেব অনুযায়ী ১৯৮৭ থেকে জুলাই ২০১৭ সাল পর্যন্ত ট্রেন দুর্ঘটনায় হাতি মৃত্যুর সংখ্যা ২৬৭। রাজ্যে প্রতিবছর দুর্ঘটনায় হাতির মৃত্যু হয় ১৫-২০টি।
ডুয়ার্স-কে বাঁচাতে, পরিবেশের দূষণ কমাতে হাইকোর্টে জনস্বার্থ মামলা করেছেন সঙ্গীতাদেবী। মামলায় তার যুক্তি বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান আন্তর্জাতিক সীমান্ত তারজালি ঢাকা পড়েছে। হাতিদের পক্ষে যে সীমানা বোঝা সম্ভব নয়। ফলতঃ উত্তর পূর্ব ভারতের বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল থেকে তারা আগেই আলাদা হয়ে গিয়েছে।
এখন রেল দুর্ঘটনায় হাতি মৃত্যু ঠেকাতে না পারলে ভবিষ্যতের ডুয়ার্স টিকিয়ে রাখা সমস্যার হয়ে দাঁড়াবে। জনস্বার্থ মামলায় হাইকোর্টের কাছে আবেদন বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে ভোর সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত সমস্ত ধরনের রেল পরিষেবা বন্ধ রাখা হোক। ডুয়ার্সের বুক চিরে যাওয়া রেল পথগুলিতে ওই সময়ের জন্য রেল চলাচল বন্ধ থাকুক।
দ্বিতীয়তঃ বারবার হাতি দলের দুর্ঘটনার কবলে পড়া রেলপথ গুলি ঘুরিয়ে দেওয়া হোক। নিউ জলপাইগুড়ি, নিউ আলিপুরদুয়ার, নিউ কোচবিহার দিকে ঘুরিয়ে দেওয়া হোক পথগুলি। তৃতীয় আবেদন ডুয়ার্সে হাই টেনশন বৈদ্যুতিক লাইন গুলি ন্যূনতম কুড়ি ফুট উঁচু দিয়ে করার।
শীঘ্রই প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চে হাতি মামলার শুনানি। দেশে সিডিউল-১ অন্তর্ভুক্ত পশু হাতি। সর্বোচ্চ পর্যায়ের সুরক্ষার দাবি রাখে গজরাজ।কেরালায় হাতিকে পুজো করেন সেখানকার মানুষ। সারাদেশে হু হু করে কমছে পুরুষ হাতির সংখ্যা। এই মুহূর্তে ১২০০-র কিছু বেশি পুরুষ হাতি রয়েছে গোটা দেশে। রেল দুর্ঘটনায় মৃত হাতির অধিকাংশ পুরুষ। হাতি-রেল দুর্ঘটনা আটকাতে না পারলে অদূর ভবিষ্যতে বিলুপ্ত হতে পারে এই চতুষ্পদী। বাস্তু রীতিতে যার প্রভাব পড়তে বাধ্য। রাষ্ট্রপতি পুরস্কার প্রাপ্ত সঙ্গীতা আইয়ার আবেদন তাই হাতি বাঁচান পরিবেশ দূষণ কমান। সঙ্গীতা দেবী ২০১৭ সালে নারীশক্তি হিসেবে রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পান।
পশুপাখি নিয়ে কাজ করেন। হাতি নিয়ে তাঁর তৈরি তথ্যচিত্র বিশ্বের অনেক দেশে সমাদৃত হয়েছে। বর্তমানে কানাডায় থাকেন। আসল বাড়ি কেরালা।