কলকাতা: লড়াই চলেছে দীর্ঘদিন। একবার এখানে তাঁকে বিক্রি করে দিয়েছে কেউ তো একবার ওখানে। নরক যন্ত্রণা ভোগ করতে করতে যখন দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গিয়েছে, তখনই ঈশ্বরের দূতের মতো তাঁকে উদ্ধার করেছে পুলিশ। ২০১২ সাল থেকে নরক যন্ত্রণা ভোগ করার পর অবশেষে দোষীদের শাস্তি দেখে কিছুটা হলেও শান্তি পেল বসিরহাটের তরুণী। যখন তাঁকে প্রথমবার পাচার করা হয়, তখন তাঁর বয়স ছিল মাত্র ১৬ বছর।
কলকাতা পুলিশের ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে এই যন্ত্রণা ও তার থেকে মুক্তির এক কথা। লেখা হয়েছে, ‘মাধ্যমিক পরীক্ষার শেষ দিন, ২০১২ সাল। পরীক্ষার পর তার ‘বয়ফ্রেন্ড’ রুহুল কুদ্দুস গাজির কথায় শিয়ালদহগামী ট্রেনে ওঠে বসিরহাটের বাসিন্দা ১৬ বছরের এক কিশোরী। পথে কোল্ড ড্রিংক খাওয়ানোর ছুতো করে ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তাঁকে অচৈতন্য করে দেয় কুদ্দুস, যার পর তাঁকে সে নিয়ে যায় কলকাতার এক যৌনপল্লীতে, যেখানে ২৫ হাজার টাকার বিনিময়ে ‘বিক্রি’ হয়ে যায় সেই কিশোরী।
দুঃস্বপ্নের শুরু সেই থেকেই। দু’দিনের মধ্যেই যৌনপল্লী থেকে পালিয়ে কোনওভাবে নিজের গ্রামে ফিরে যায় মেয়েটি, কিন্তু সেখানে ইতিমধ্যেই কুদ্দুস এবং তাঁর বন্ধু মহঃ ইসমাইল মন্ডল তাঁর নামে কুৎসা রটিয়ে তাঁকে ‘যৌনকর্মী’ প্রতিপন্ন করে দিয়েছে। মহঃ ইসমাইল মন্ডলও কিশোরীর ওপর যৌন নির্যাতন করে। ঘরে-বাইরে কার্যত ব্রাত্য এবং মরিয়া কিশোরী এরপর কাছেরই একটি গ্রামের এক যুবকের কাছ থেকে বিয়ের প্রস্তাব গ্রহণ করে, তবে সেখানেও তার নামে কুৎসা ছড়ানোয় বিয়ের দু’দিনের মধ্যেই শ্বশুরবাড়ি ছাড়তে হয় তাঁকে।’
এখানেই শেষ নয়, এর পরেও তাঁকে সহ্য করতে হয়েছে ভয়ানক অত্যাচার। ফেসবুক পেজে আরও লেখা হয়েছে, ‘যখন আর সত্যিই কোথাও যাওয়ার নেই, তখন তাঁকে কারখানায় কাজ করার প্রস্তাব দেয় স্বপন রক্ষিত, দাবী করে যে তাঁর বিস্কুটের কারখানা আছে।
কিন্তু স্বপন এবং তার স্ত্রী পাপিয়া রক্ষিত তাঁকে বিক্রি করে দেয় পবিত্র বালা নামে দিল্লির এক বাসিন্দার কাছে, এবার দাম ওঠে কয়েক লক্ষ টাকা। দিল্লিতেই তাঁকে যৌনকর্মী হিসেবে কাজ করতে বাধ্য করে পবিত্র, যদিও কিছুদিন পর তাকে দিল্লি থেকে কলকাতায় ফিরিয়ে নিয়ে এসে বাগুইআটির বাসিন্দা সুমিত সেনের হাতে তুলে দেয় স্বপন, সেখানেও সেই একই পেশায় কাজ করতে থাকে সে।’
কলকাতা পুলিশের তৎপরতায় এর পরেই জীবনের মোড় ঘুরে যায় এই তরুণীর। লেখা হয়েছে, ‘দুঃস্বপ্নের অবসান ঘটে ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে, যখন পুলিশের ‘রেইড’ চলাকালীন অবশেষে উদ্ধার হয় সেই কিশোরী, এবং তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে শুরু হয় ঘটনার তদন্ত, নেতৃত্বে গোয়েন্দা বিভাগের অ্যান্টি-হিউম্যান ট্রাফিকিং শাখার তদানীন্তন সাব-ইনস্পেকটর তন্দ্রিমা গুপ্ত (বর্তমানে ইনস্পেকটর তথা ওসি, স্পেশ্যাল জুভেনাইল পুলিশ ইউনিট)। ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে বসিরহাট, কলকাতা, এবং দিল্লি থেকে গ্রেফতার হয় কুদ্দুস, ইসমাইল, পাপিয়া, পবিত্র, এবং সুমিত।
বিচারপর্ব শেষ হয়েছে গত ১৮ মে ২০২৩। পাঁচ অভিযুক্তকেই ‘দ্য প্রোটেকশন অফ চিলড্রেন ফ্রম সেক্সুয়াল অফেন্সেস’ (POCSO) আইন ও হিউম্যান ট্রাফিকিং প্রিভেনশন আইনের আওতায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সঙ্গে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন মাননীয় সিটি সেশনস কোর্টের অন্তর্ভুক্ত বিশেষ পকসো আদালত।’
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Kolkata Police