ঘড়ির কাঁটায় দুপুর দেড়টা। ফোন করতেই জানালেন, একটু ব্যস্ত, খানিক পরেই ফাঁকা হবেন। তৃণমূল-বিজেপির মতো বামেদের প্রার্থীতালিকা নিয়ে তেমন শোরগোল পড়েনি ঠিকই, কিন্তু যে তরুণ মুখের সমাহার দেখা যাচ্ছে লাল পার্টির তালিকায়, তা রীতিমতো চর্চার বিষয়। আধ ঘণ্টা পরেই ফোনে ধরা গেল তাঁকে। প্রশ্ন এড়ালেন না, বরং বামেদের 'ভুল' নিয়েও মুখ খুললেন বালির বাম প্রার্থী। বাংলায় কি লাল ঝড় আর আসবে, আপনাদের পাশে আব্বাস সিদ্দিকিকে আদৌ মানানসই মনে হয়, শুধুই প্রার্থী নাকি জেতার সম্ভাবনা দেখছেন সামান্য হলেও? 'নিউজ 18 বাংলা ডিজিটাল'-এর প্রশ্নের সামনে মনের খাতা খুললেন JNU নেত্রী থেকে হঠাতই প্রত্যক্ষভাবে বাংলার রাজনীতিতে এসে পড়া তরুণ তুর্কী দীপ্সিতা ধর।
প্রঃ বামেদের প্রার্থীতালিকায় এবার আপনি, ঐশী, পৃথা, মীনাক্ষীরা। চমকই বটে। এটা কি বামেদের বৃদ্ধতন্ত্র নিয়ে ওঠা অভিযোগ ভাঙার চেষ্টা?
দীপ্সিতা: এটা একটা কন্টিনিউ প্রসেস। এর আগেও শতরূপ ঘোষদের মতো অনেকেই প্রার্থী হয়েছেন। সারা দেশ তথা এ রাজ্যে যুবক-যুবতীরাই আসল স্তম্ভ, তাঁরাই সবচেয়ে বড় সংখ্যক ভোটার। তাঁদের কথা বলতে পারব আমরা। কাজের কথা, খাদ্য-বস্ত্র-বাসস্থানের কথা আমরাই বলি, আমরাই বলতে পারব।
প্রঃ জেএনইউ-র ছাত্রনেত্রী বিজেপিকে তুলোধনা করে আজ তৃণমূলকে হারাতে ভোটে দাঁড়াচ্ছেন। শত্রু কি চেঞ্জ হয়ে গেল?
দীপ্সিতা: আমার রাজনৈতিক জীবনের শুরু আশুতোষ কলেজ থেকে। সেই সময় থেকে তৃণমূলের অত্যাচার দেখেছি। আমাদের নেতা-কর্মীদের মারধর, অত্যাচার করা হয়েছে। আবার জেএনইউ'তে গিয়ে দেখেছি, বিজেপির রূপ। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ জানেন না, বিজেপি কত ভয়ঙ্কর হয়ে উঠতে পারে। আবার বাইরের মানুষজন জানেন না, তৃণমূল কতটা খারাপ হতে পারে। আমি ঘরের ও বাইরের-দুই শত্রুকেই দেখেছি, চিনেছি। মানুষকে সেটাই বোঝাচ্ছি।
প্রঃ সূর্যকান্ত মিশ্র আবারও বলেছেন, বিজেপিমুক্ত বাংলা গড়তে তৃণমূলকে সরাতে হবে। বামপন্থী ভোটাররা আবার দিশেহারা হয়ে পড়বেন না? এতে বাম ভোট কি আবার অন্য বাক্সে যাবে না? দলীয় নেতৃত্বের উক্তি তো প্রার্থী দীপ্সিতার ক্ষতি করছে!
দীপ্সিতা: এটা একটা প্রোপাগান্ডা। বামপন্থীরা বিজেপিকে এনে তৃণমূলকে সরাবে, এমন কোনও ভাবনাই নেই। ২০১১ সালে যখন ভোট হয়েছিল পশ্চিমবঙ্গে, তখন ভোটের বিষয় ছিল শিল্প-কৃষি নিয়ে। এখন ভোট হচ্ছে জয় শ্রীরাম বলা যাবে কিনা, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কতটা মুসলিম হলেন, তা নিয়ে। দুটো দলই শুধুই ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করছেন। মতুয়াদের নিয়েও খেলছে দুই দল। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বিজেপিকে ধর্মীয় রাজনীতি করার পথ করে দিয়েছেন। তাঁর হাত ধরেই আরএসএস-এর আগমন। তাই তৃণমূলকে সরাতে হবে, আবার বিজেপিকে আসারও একচুল সুযোগ দেওয়া যাবে না।
প্রঃ আব্বাস সিদ্দিকির সঙ্গে জোট করে ধর্মনিরপেক্ষ রাজনীতির কথা বলা সম্ভব আর?
দীপ্সিতা: জোটের মধ্যে অনেক কিছু থাকে। কিন্তু একটা কমন মিনিমাম প্রোগ্রামের ভিত্তিতে আমরা জোট করেছি। আইএসএফ-এর মধ্য়ে কেউ যদি মহিলাদের নিয়ে খারাপ কথা বলে থাকেন, তাহলে তার নিন্দা হওয়া উচিৎ। আমরা করছিও, করবও। কিন্তু আইএসএফ-এর কর্মসূচিতেও সকলের জন্য কাজ, খাদ্য, বাসস্থানের কথা বলা আছে। সেটাই কমন আমাদের মধ্যে।
প্রঃ মীনাক্ষীকে 'বাঘের মুখে' পাঠিয়েছে দল। সেই তুলনায় বালি কি নিরাপদ সিট?
দীপ্সিতা: বালিতে সকলে আমাকে চেনেন। আমার পরিবারের রাজনৈতিক ইতিহাস আছে। দাদু দু'বারের বাম বিধায়ক। সকলেই জানতে চাইছেন, আমার পরিবারের কথা। সকলে ডাকছেন। এতে আমার দায়িত্ব বাড়ছে। তবে, এক্ষেত্রে বলতে চাই, যে সংগঠনের জোর আমাদের ভেঙে গিয়েছিল তৃণমূলের হার্মাদদের হাতে, তা আবার গড়ে উঠেছে। সেটাই আমাদের শক্তি।
প্রঃ জোট ক্ষমতায় আসবে, এটা জোট প্রার্থীরা ছাড়া আর কেউ ভাবছে না। আপনি কি বিশ্বাস করেন, জোটের কোনও সম্ভাবনা আছে?
দীপ্সিতা: ভোট নির্বিঘ্নে হলে আমাদের ফল ভালো হবেই। মানুষ এখন বুঝতে পারছে। ৩৪ বছরে আমাদের অনেক ভুলচুক হয়েছিল। তবে, সেটা যে তৃণমূল-বিজেপির সঙ্গে তুলনীয় নয়, তা এখন বুঝতে পারছেন সকলেই।
প্রঃ ৩৪ বছরে বহু ভুলচুক হয়েছে, একজন বামপ্রার্থী একথা বলছেন! পার্টি শুনলে ক্ষুব্ধ হবে না?
দীপ্সিতা: অবশ্যই ভুলচুক হয়েছিল। এত বছর ধরে ক্ষমতায় থাকলে ভুলচুক হয়েই যাবে। তবে, ৩৪ বছরে বাংলার মানুষ কখনও বিপন্ন হয়ে ওঠেননি। আমরা, বামপন্থীরা বরাবর ধর্মনিরপেক্ষভাবে মানুষের উন্নয়নের কথা বলেছি। এবারের নির্বাচনও হবে চাকরির জন্য, ছেলেমেয়েদের সুষ্ঠু ভবিষ্যতের জন্য়। তৃণমূল-বিজেপির অ্যাজেন্ডা তা নয়, এবারের ভোট বাংলার মানুষের কাছে জীবনের ভোট।
সুমন বিশ্বাস
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।