সন্তান প্রসবের পর মায়েদের মানসিক অবসাদ বা বেবি ব্লুজ সম্পর্কে অনেকেই কম-বেশি জানেন। কিন্তু জানেন কি, পুরুষদেরও একই সমস্যা হয়। পিতৃত্বের (Fatherhood) প্রথম পদক্ষেপ খুব সহজ ও আনন্দের কিন্তু নাও হতে পারে। উল্টে চেপে বসতে পারে অবসাদের 'নীল'। গবেষণা বলছে, পৃথিবী জুড়ে প্রায় ১০% নতুন বাবা একই সমস্যায় (Male Postpartum Crisis or Daddy Blues) ভোগেন। একটি সমীক্ষায় দেখা গেছে বাবা হওয়ার পর শিশুর প্রথম ৫ বছরে এই সমস্যা ৬৮% পর্যন্ত বেড়ে যায়। আর এই সমস্যা বেশি হয় যাঁদের বয়স কম, তাঁদের। যদি প্রথমেই তা ধরা না পড়ে তাহলে সেই ব্যক্তি ক্রনিক ডিপ্রেশনের শিকার পর্যন্ত হতে পারেন। তাই যত্ন নেওয়া জরুরি। এই বিষয়েই পরামর্শ দিলেন শহরের বিশিষ্ট শল্য চিকিৎসক চিকিৎসক
প্রশ্ন : এই 'ড্যাডি'স বেবি ব্লু'-এর কারণ কী?
উঃ : কিছুটা শারীরিক আর কিছুটা পরিবেশগত কারণ এই সমস্যার জন্য দায়ী। বাচ্চা বড় করার মতো জ্ঞানের অভাব- অনেক নতুন বাবা-মা-ই সন্তান ঠিকমতো বড় করা নিয়ে দুশ্চিন্তা থাকেন। মায়েরা যত তাড়াতাড়ি সন্তানের সঙ্গে একাত্ম হতে পারেন বাবারা অনেক সময়েই তা পারেন না। তাঁদের এই একাত্ম হওয়ার পথ কিছুটা ভিন্ন এবং সময়সাপেক্ষ।
এই সময় নতুন বাবার নিজেদের অনেক সময় বাইরের লোক বলে মনে করেন। তাছাড়া বেশি কান্নাকাটি করা শিশু, অত্যাধিক দায়দায়িত্বব থাকা এবং স্ত্রীর তাকে বুঝতে না পারার জন্য এই সমস্যা আরও বেড়ে যায়।
আর্থিক ও কেরিয়ারের চিন্তা- এই সময়ে আর্থিক চিন্তাও মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত করে তুলতে পারে। আবার সন্তানের কিছু দেখভাল করার জন্য কেরিয়ারে কোনও প্রভাব পড়ে কিনা তা নিয়ে দুশ্চিন্তার কারণে এমন হতে পারে। স্বামী-স্ত্রীর স্বাভাবিক সম্পর্কের রদবদল-শিশুর জন্য রাতে ভাল ঘুম না হওয়া, স্বামী-স্ত্রীর শারীরিক সম্পর্ক বন্ধ থাকার জন্য মুড খারাপ হতে পারে।
প্রশ্ন : এই ধরণের অবসাদে আক্রান্ত হয়েছেন কী দেখলে বুঝবেন? সেই অর্থে 'উপসর্গ' কী?
উঃ : এই ধরণের অবসাদের শিকার হলে বেশ কিছু আচরণগত পার্থক্য দেখা যাবে বাবার মধ্যে। যেমন,
· অকারণে মেজাজ খিটখিটে হয়ে থাকা বা বিরক্তিভাব· বাচ্চা ও স্ত্রীর থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখা· নেশা করা· নিজের বা পরিবারের কারও মানসিক অবসাদের সমস্যা থাকা· অকারণে মন খারাপ হওয়া, কান্না পাওয়া বা যে কাজ করতে ভাল লাগতো তা করতে অনীহা· আগে যে কাজ করতে যতটা সময় লাগতো তার থেকে অনেক বেশি সময় লাগা· স্ত্রীর বেবি ব্লুজের সমস্যা হওয়া
প্রশ্ন : এর সমাধান কী? কী কী পদক্ষেপ নিলে এর থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব?
উঃ: হাতি ঘোড়া কিছু নয়। সাধারণ কিছু পদক্ষেপ নিয়মিত করলেই কিন্তু অনেক বাবাই এই অবসাদ এড়াতে পারেন। যেমন,
· পিতৃত্ব উপভোগ করার জন্য মানসিকভাবে নিজেকে প্রস্তুত করা সবচেয়ে বেশি জরুরি। আর তা করার জন্য শরীরের দিকেও নজর দিতে হবে। তাই ভাল করে সময়মতো খেতে হবে।·নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে।·বিশ্রাম নিতে হবে
· বাচ্চা রাতে কান্নাকাটি করলে দিনে সময় পেলেই একটু ঘুমিয়ে নিতে হবে· বেশি কাজের চাপ কিছুদিন না নেওয়া· মদ বা অন্য কোনও নেশা থেকে নিজেকে দূরে রাখা।· নিজের মানসিক অবস্থার কথা স্ত্রী, ভাই বোন, মা, বাবা কিংবা খুব কাছের বন্ধুর সঙ্গে শেয়ার করা।· সবচেয়ে বড় কথা এতেও কাজ না হলে মনোবিদের কাছে যাওয়া। নিজের, সন্তানের ও পরিবারের সবাইকে ভাল রাখার গুরু দায়িত্ব কিন্তু বাবারও। তাঁকে সুস্থ থাকতেই হবে এই চিন্তা করা দরকার। পারলে বাড়ির অন্য কারও কাছে শিশুকে কিচ্ছুক্ষণের জন্য রেখে অল্প সময়ের জন্য স্ত্রীর সঙ্গে হেঁটে আসাও কাজে, কিছুটা একান্ত সময় কাটানোও কিন্তু ম্যাজিকের মত কাজ করতে পারে এই অবসাদ কাটাতে।
তথ্য : স্ত্রী-রোগ বিশেষজ্ঞ ও আইভিএফ স্পেশালিস্ট ডঃ ইন্দ্রনীল সাহাছবি : সংগৃহিত ও ইন্দ্রনীলের ফেসবুক থেকে
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।