#কলকাতা: পুজো আসছে। নীল আকাশে রোদের উঁকি, মেঘের ভেলা। কোথায় যেন শোনা যাচ্ছে ঢাকের মৃদু বোল। কাউন্টডাউন শুরু। আর মাত্র ১০০ দিনের অপেক্ষা। তারপরেই মহাষষ্ঠী।
কিন্তু এবারের বিষয়টা অনেকটাই আলাদা। অতিমারীর আবহে কীভাবে পুজো হবে, আদৌ কলকাতাবাসী রাস্তায় নামতে পারবেন কিনা, আর পারলেও কতটা বিধিনিষেধ আরোপিত হবে, তা নিয়ে ৯৯ শতাংশ অনিশ্চিত সংশ্লিষ্ট সব মহল। অবশ্য তারপরেও শহরের ছোট থেকে বড় সব পুজো উদ্যোক্তাদের মুখে একটাই কথা, 'পুজো হবেই।' এবারে মহালয়া আর দুর্গাপুজোর মধ্যে এক মাসের ফারাক। ১৭ সেপ্টেম্বর মহালয়া। তার আগের দিন বিশ্বকর্মা পুজো। প্রতিবার ওই দিন থেকেই পুজোর আমেজের সূত্রপাত হয়। আর দেবীপক্ষের সূচনা হতেই শহর সেজে ওঠে আলোকমালায়।
কলকাতার দুর্গাপুজো এখন আর শুধু পুজো কনসেপ্টে আটকে নেই। তা এখন সেই গণ্ডি অতিক্রম করে শিল্প সৃষ্টির অন্যতম মাধ্যম। পুজো দেখতে এখন বিদেশ থেকে পর্যটকরা শহরে ভিড় জমান। উদ্যোক্তা থেকে শিল্পীদের কথায়, পুজোর সঙ্গে যেমন মানুষের আবেগ মিশে রয়েছে, ঠিক তেমনই পুজো এখন বহু মানুষের রুটি-রুজি আর স্বপ্ন। এমন বহু মানুষ আছেন, যাঁরা পুজোর মুখ চেয়ে বসে থাকেন সারা বছর। এবারে তাঁদের সকলের কপালে ভাঁজ। কি হবে ? কবে হবে ? কীভাবেই বা হবে প্রাণের উৎসব ? তা নিয়ে চলছে নানা জল্পনা।
কিন্তু এই করোনার আবহে কীভাবে 'মা'কে আবাহন করবেন পুজো উদ্যোক্তারা। সময় যত গড়াচ্ছে, শহরের নামী-অনামী পুজো উদ্যোক্তাদের দুশ্চিন্তা বাড়ছে। মহালয়ার একশো দিন আগেও শহরের সিংহভাগ পুজো কমিটি নিশ্চিত করে জানাতে পারছে না, কী তাদের পরিকল্পনা! উত্তরের উত্তর টালা বারোয়ারির এবারে ১০০ বছর। ফলে পরিকল্পা ছিল বিস্তর। ক্লাবের অন্যতম উদ্যোক্তা অভিষেক ভট্টাচার্য বলেন, ' ১০০ বছরের মতো সেলিব্রেট আর হবে না, কিন্তু পাড়ার সবাইকে নিয়ে কঠিন পরিস্থিতিতেও পুজো হবেই।" অভিষেকের সংযোজন, "সঙ্কটকালেই শিল্পবিপ্লবের মতো পরিস্থিতি দেখা গিয়েছে ইতিহাসে। আমার বিশ্বাস, এবারের পুজোয় একেবারে অন্যরকমের শিল্পকলা দেখবে শহরবাসী।'
রাসবিহারী সংলগ্ন ৬৬ পল্লির অন্যতম উদ্যোক্তা প্রদ্যুম্ন মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘পরিস্থিতি অনেকটাই প্রতিকুল। বাজেট অনেক কমানো হয়েছে। তাও প্রশাসনের বেঁধে দেওয়া সব নিয়ম মেনে পুজো হবেই। দর্শকদের সুরক্ষার জন্যও সব ব্যবস্থা রাখব আমরা মণ্ডপে।' একই কথা জানিয়েছেন বেহালা ২৯ পল্লির পুজো উদ্যোক্তাদের অন্যতম সৌরভ ঘোষ। তাঁদের পুজোতেও এবারে কমানো হয়েছে বাজেট।
দক্ষিণ কলকাতার অন্যতম মূল আকর্ষণ নাকতলা উদয়ন সঙ্ঘ। কিন্তু তাঁদের এখনও পুজোর কোনও পরিকল্পনাই হয়নি। ক্লাব সভাপতি বাপ্পাদিত্য বন্দ্যোপাধ্যায়-সহ পুজো কমিটির সকলেই ব্যস্ত করোনা পরিস্থিতি সামাল দিতে। বাপ্পাদিত্য বলেন, 'পুজোর পরিকল্পনা করার মতো সময় বা পরিস্থিতি তৈরি হয়নি আমাদের। করোনা আর আমফান নিয়ে কাজ চলছে এখনও। আগামী রবিবার ক্লাবের মিটিং আছে। তারপর পুজো নিয়ে ভাবনা চিন্তা শুরু হবে।"
উত্তর কলকাতার প্রাণকেন্দ্র হাতিবাগানের পুজো, হাতিবাগান সর্বজনীনের সর্বময় কর্তা শাশ্বত বসু বলেন, ' আমরা সবাই একটা খারাপ সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছি। এই পরিস্থিতিতে ঘটা করে পুজো করা সম্ভব নয়। তবে সবাইকে নিয়ে পুজো হবে।" একই কথা জানিয়েছেন হরিদেবপুর অজেয় সংহতির ক্লাব সদস্যেরা। তাঁদের এবারে ৬০ বছরের পুজো। কিন্তু পরিস্থিতি প্রতিকূল হওয়ায় বহু পরিকল্পনার পড়েও বাজেট কমাতে হয়েছে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Durga Puja 2020, Kolkata