হোম /খবর /কলকাতা /
মন কী বাত শোনায় শুভেন্দুর নন্দীগ্রামই প্রথম? বিজেপি-র অন্দরেই সংশয় আর প্রশ্ন

BJP: 'মন কী বাত' শোনায় শুভেন্দুর নন্দীগ্রামই প্রথম? বিজেপি-র অন্দরেই সংশয় আর প্রশ্ন

প্রধানমন্ত্রীর শততম ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের সব তথ্য সরল অ্যাপের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পৌঁছেছে।

  • Share this:

কলকাতা: প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির মন কি বাত আয়োজনের হিসেব আবার বিপাকে ফেলল বঙ্গ বিজেপিকে?  সদ্য সমাপ্ত মন কি বাতের আয়োজনের হিসেব বলছে, রাজ্যে প্রায় ৬০ হাজার বুথে পৌঁছে গিয়েছে বিজেপি। অথচ, বুথ সশক্তিকরণ কর্মসূচির হিসেবে তা মেরেকেটে ৪০ হাজার। বুথের হিসেবে গোঁজামিলটা তাহলে কোথায়?  খুঁজে বার করতে গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত কার্যত ‘মাথার চুল ছিঁড়লেন’ নেতারা।

 বিজেপির বৈঠক সূত্রে জানা গিয়েছে, বুথ কমিটি গড়ার লক্ষ্যে পরপর তিন বার ‘বুথ সশক্তিকরণ’ অভিযান করে এখনও পর্যন্ত ৪০ হাজার বুথে কমিটি করতে পেরেছে বিজেপি। শতাংশের হিসাবে যা ৫৬ শতাংশের মতো। যদিও, অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তৈরি এই হিসেবের বেশির ভাগটাই নাকি খাতায় কলমে। বাকি ৫৪ শতাংশ বুথের কোন তথ্য নেই দলের কাছে।

আরও পড়ুন: সরানো হল তনুজাকে, বিজেপি মহিলা মোর্চার নতুন সভাপতি ফাল্গুনী পাত্র! কেন এমন সিদ্ধান্ত?

 বুথ সংগঠন শক্তিশালী করতে রাজ্যের প্রতিটি বুথে, বুথে কমিটি গড়তে মোট তিন দফায় অভিযান করল বিজেপি। প্রথম দুই দফার রিপোর্ট হতাশা জনক হওয়ায়, তৃতীয় ও শেষ দফায় তা পূরণ করতে রাজ্যকে সময়সীমা বেঁধে দিয়েছিল কেন্দ্র। সেই হিসেবে গত ২৮  এপ্রিল শেষ হয় চূড়ান্ত সময়সীমা। সময়সীমা পেরনোর পর গতকাল কেন্দ্র ও রাজ্য, নেতৃত্বের সঙ্গে পর্যালোচনা বৈঠক হয়। সেই বৈঠক সূত্রেই উঠে এসেছে এমন খবর।

শুধু তাই নয়, লোকসভা ভিত্তিক সংগঠনের প্রকৃত অবস্থা দেখতে লোকসভার দায়িত্বও কিছু বদল করা হয়েছে। বৈঠকে থাকা এক নেতার মতে, যা রিপোর্ট নেতারা দিচ্ছেন তাতে ‘জল মেশানো’ থাকতে পারে বলে মনে করছেন রাজ্যের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেন্দ্রীয় নেতারা। তাই  বিধানসভা গুলিতে বুথের প্রকৃত অবস্থা,  সেখানকার সংগঠন, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, দলীয় কর্মসূচি কেমন  সাড়া পাওয়া যাচ্ছে, লোকসভা ভোটে স্থানীয় ইস্যু কি হতে পারে তা দেখতে ৪২টি লোকসভার দায়িত্ব বেশ কিছু রদবদল করা হয়েছে। নব নিযুক্ত কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষকরা তাঁদের  লোকসভার অধীন বিধানসভা কেন্দ্রগুলিতে সংগঠনের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে রিপোর্ট দেবেন।

আরও পড়ুন: ‘আমার কেশাগ্র স্পর্শ করতে পারেনি’, ইডি-সিবিআই নিয়ে বিস্ফোরক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়!

এ দিন বৈঠকে ছিলেন কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল, মঙ্গল পাণ্ডে, সহ পর্যবেক্ষক আশা লকড়া, অমিত মালব্য, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদাররা। ময়নায় ধর্মঘটের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত থাকায় ওই বৈঠকে নামমাত্র সময় উপস্থিত থেকে বেরিয়ে যান শুভেন্দু।

এ দিকে, প্রধানমন্ত্রীর শততম ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠানের সব তথ্য সরল অ্যাপের মাধ্যমে কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে পৌঁছেছে। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের মতে,  সেই তথ্য যদি সত্যি হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে পশ্চিমবঙ্গের সাংগঠনিক অবস্থা উত্তরপ্রদেশের থেকেও ভাল। কারণ অ্যাপের তথ্য অনুযায়ী দেশের মধ্যে ‘মন কি বাত’ অনুষ্ঠান আয়োজনের নিরিখে এ রাজ্য রয়েছে সপ্তম স্থানে। উত্তর প্রদেশ এক ধাপ পিছিয়ে অষ্টম স্থানে রয়েছে।

এক প্রশ্নের জবাবে গতকাল, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছিলেন, “সরল অ্যাপের তথ্য অনুযায়ী গত ৩০ য এপ্রিল, প্রধানমন্ত্রীর মন কি বাত শুনেছে রাজ্যের ১৯ হাজার ৭৭৮ টি বুথ। ” দেশ জুড়ে মোদির শততম মন কি বাত এর অনুষ্ঠান যাতে ব্যাপক প্রচার হয় তার জন্য চেষ্টার কোনও কসুর করে নি দল। বঙ্গ বিজেপির তরফেও মোদীর মন কি বাত যাতে সর্বাধিক সংখ্যক বুথে অনুষ্ঠিত হয়,তার জন্য সবাত্মক চেষ্টা করা হয়েছিল।

রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “কেন্দ্রীয় নির্দেশিকা অনুযায়ী প্রতি বিধানসভার অন্তত ১০০টি বুথে এই কর্মসূচি করার কথা ছিল। অর্থাৎ, প্রতি তিনটি বুথ পিছু একটি কর্মসূচি। এই হিসেবে আমরা প্রায় ২০ হাজার বুথে এই কর্মসূচি করেছি। অঙ্কের হিসাবে, তাই মন কি বাত আয়োজন করা গিয়েছে প্রায় ৬০ হাজার বুথে।” যেটা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

 যদিও, বঙ্গ বিজেপির এই দাবি মানতে রাজি নন দলেরই একাংশ। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক রাজ্য নেতা বলেন, ”অঙ্কের হিসেব আর বাস্তবের হিসেব এক নাও হতে পারে। সব ক্ষেত্রেই যে প্রতিটি মন কি বাত কর্মসূচিতে তিনটি বুথকে নিয়ে একটি কর্মসূচি হয়েছে এমনটা সঠিক নয়। মন কি বাত এর অনুষ্ঠান নিয়ে এই অঙ্কের হিসেব ঠিক হলে এত কাঠখড় পুড়িয়ে মাত্র ৫৬ শতাংশ বুথে কমিটি হত না। “

এরই মধ্যে বিড়ম্বনা বাড়িয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর নন্দীগ্রাম। মন কি বাত আয়োজনে সারা দেশের মধ্যে নন্দীগ্রামের ১ নং ব্লক দেশের মধ্যে প্রথম স্থান অধিকার করেছে বলে তমলুক বিজেপি দাবি করলেও, রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “সরল অ্যাপের তথ্যই সরকারি তথ্য। এই তথ্য অনুসারে, আমরা সারা দেশের মধ্যে সপ্তম স্থানে। অবশ্যই প্রথম স্থানে গুজরাত। কিন্তু, আমরা উত্তরপ্রদেশের থেকে এগিয়ে। কিন্তু, ব্লক ভিত্তিক কোনও রিপোর্ট আমরা এখনও পাইনি। তমলুক সাংগঠনিক জেলার আই টি সেল এই রিপোর্ট কোথা থেকে পেল খোঁজ নিয়ে দেখব। ” সুকান্তের মন্তব্যে, মন কি বাতের আয়োজন নিয়ে দেশের মধ্যে সেরার শিরোপা দাবি করাকে কেন্দ্র করে নতুন বিতর্ক তৈরি হল বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Published by:Debamoy Ghosh
First published:

Tags: BJP