#কলকাতা: প্রথমজন বলেছিলেন 'রাজনীতি' তাঁর জায়গা নয়, মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের কথাতেই তাঁর বিধায়ক হওয়া। যদিও ঘনিষ্ঠ মহলে বলেছিলেন, প্রার্থী না হলে রাজনীতিকে বিদায়। দ্বিতীয়জন অবশ্য বরাবরই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুগত সৈনিক। সম্প্রতি বিজেপিকে আক্রমণ শানাতে কুমড়ো নিয়ে গানও বেঁধেছেন। দু'জনকেই নিরাশ করলেন না তৃণমূল নেত্রী। প্রথমজন চিরঞ্জিৎ চক্রবর্তীকে সেই বারাসাত থেকেই প্রার্থী করলেন মমতা, আর দ্বিতীয়জন, মদন মিত্রকে ফিরিয়ে দিলেন তাঁর পুরনো আসন কামারহাটি।
রাজনৈতিক মহলের মতে, বিজেপি এবার যেভাবে রুপোলি পর্দার তারকাদের প্রার্থী করতে উঠে-পড়ে লেগেছে, সেখানে চিরঞ্জিতের মতো জিতে আসা বিধায়ক তথা তারকা মুখকে সরিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি নিতে চাননি মমতা বন্দ্য়োপাধ্য়ায়। দিন কয়েক আগেই নিজমুখে অভিনেতা বলেছিলেন, 'রাজনীতির লোক নই আমি, তাও সিট বাড়ানোর জন্য নির্বাচনে দাঁড় করিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এবার অব্যাহতি চাই রাজনীতি থেকে।' বকলমে অবশ্য বুঝিয়ে দিয়েছিলেন, প্রার্থী না হলে আর রাজনীতিতে থাকবেন না তিনি। এরপর নড়েচড়ে বসে তৃণমূল নেতৃত্ব। তাঁর কাছে সবুজ সংকেত যায় মমতার থেকে। তাঁকে ফের যে প্রার্থী করবে দল, তা স্পষ্ট করে দেন দলনেত্রী। এরপরই বিজেপির বিরুদ্ধে সম্মুখসমরে লড়তে ভোট যুদ্ধের প্রস্তুতি হিসাবে করোনার টিকাও নেন তিনি। প্রার্থী হচ্ছেন বুঝেই যে টিকা নেওয়ার সিদ্ধান্ত তা স্পষ্ট করে দিয়েই তিনি বলেন, 'প্রথমে ভেবেছিলাম রাজনীতি ছেড়ে আবার নিজের মূলস্রোতে ফিরে যাব। কিন্তু বর্তমানে যা অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, সেই কারণে মমতা দিদি আমাকে যেতে দেননি।'
অপরদিকে, প্রার্থী হবেন কিনা, নিশ্চিত না হয়েও তৃণমূলের হয়ে দিনের পর দিন মাঠে ময়দানে ঘুরে বেড়িয়েছেন মদন মিত্র। নিজের একসময়ের বিধানসভা এলাকা কামারহাটিকে তিনি ভোলেননি, যাতায়াত করে গিয়েছেন নিত্য়। স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিতেই 'ওহ লাভলি'র সুরে কুমড়োর ঘ্যাঁটও পরিবেশন করেছিলেন। আর ভোটের নির্ঘণ্ট ঘোষণা হতেই তিনি বলে দেন, 'গেম অন'। বঙ্গ রাজনীতিতে এখন প্রবল চর্চিত ট্রেন্ড 'খেলা হবে'। ভোটের দিনক্ষণ প্রকাশ হতেই সেই 'খেলা হবে' গান বাজারে নিয়ে আসেন মদন। স্টুডিওতে গানের রেকর্ড সেরেই বিজেপিকে চ্য়ালেঞ্জ জানিয়ে বলেন, ‘হুইসল বেজে গিয়েছে। খেলাও শুরু হয়ে গিয়েছে। এবারে খেলা হবে চটি-শাড়ির, আর হার হবে চোরের সাদা দাড়ির।’
উল্লেখ্য, সারদাকাণ্ডে দীর্ঘদিন জেলবন্দি থাকার পর তৃণমূলের সঙ্গে সাময়িক দূরত্ব তৈরি হয়েছিল মদনের। কিন্তু তা মিটতে বিশেষ সময় লাগেনি। মমতার দীর্ঘ সময়ের অনুগত মদন তাই দলনেত্রীর নির্দেশেই 'কঠিন' ভাটপাড়া উপনির্বাচনেও প্রার্থী হয়েছিলেন। হেরেছিলেন, কিন্তু মনোবল হারাননি। এদিন প্রার্থী তালিকায় মদনের নাম রেখে মমতা যেন সেই আস্থারই দাম দিলেন মদনকে। এদিন প্রার্থী হওয়ার পর মমতাকে ধন্য়বাদ দিয়ে মদন বলেন, 'আমি মরেই যেতাম। বাঁচিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও দল। আমি তাঁর কাছে অনেক পেয়েছি। এবার দক্ষিণেশ্বরে গিয়ে মমতার নামে পুজো দেব।'