হোম /খবর /কলকাতা /
ফুটপাথ থেকে মানসিক হাসপাতাল, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শিক্ষিকা শ্যালিকার এমন জীবন!

Buddhadeb Bhattacharjees Sister in Law: শিক্ষিকা থেকে ফুটপাথ হয়ে মানসিক হাসপাতাল, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শ্যালিকার জীবন সিনেমাকেও হার মানায়

ইনিই সেই ইরা বসু

ইনিই সেই ইরা বসু

Buddhadeb Bhattacharjees Sister in Law: রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকা, মীরা ভট্টাচার্যের বোনের এ কী পরিণতি! সিনেমার চিত্রনাট্যও যেখানে বলে-বলে গোল খায়!

  • Last Updated :
  • Share this:

#বেলঘড়িয়া: ২৪ ঘণ্টা আগে পর্যন্তও তিনি থাকতেন ফুটপাথে। মলিন পোশাক, অপরিষ্কার চেহারা দেখে মনে হবে, 'ভিখারি' বুঝি। তবে সেই তিনিই সকাল-সকাল হাতে তুলে নিতেন ইংরেজি পত্রিকা। খুঁটিয়ে পড়তেন খবর, জেনে নিতেন দেশ-বিশ্বের খুঁটিনাটি। ফি-দিনে পথ চলতি মানুষ তাঁকে দেখে বলে যেতেন, 'স্নান না করে মাথায় জট পড়েছে দ্যাখো....', তিনি অবশ্য অপ্রয়োজনীয় কথা কানে তোলেন না। বরং মনোনিবেশ করেন নিজের 'কাজে'। এলাকার দোকান মালিকরাই খাবার দিতেন তাঁকে। কী ভাবছেন, বিনা পয়সায়? না, বৃদ্ধা মিটিয়ে দিতেন পাই-পয়সা। এর-ওর মুখ ঝামটা খেলেও পাত্তা দিতেন না। ডানলপের পথচারীরা কেউ কি বুঝতে পেরেছিলেন, ওই বৃদ্ধা আর কেউ নন, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের (Buddhadeb Bhattacharjee) শ্যালিকা ইরা বসু (Ira Basu)!

দৃশ্যত মানসিক ভারসাম্যহীন বৃদ্ধার ঝরঝরে ইংরেজি ও বাংলা বলা দেখেই গভীর শিক্ষার ছাপ স্পষ্ট বোঝা যায়। হবে নাই বা কেন, ভদ্রমহিলা নিজেই তো ছিলেন খড়দহ প্রিয়নাথ বালিকা বিদ্যালয়ের এক সময়ের জীবনবিজ্ঞানের শিক্ষিকা। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের শ্যালিকা, মীরা ভট্টাচার্যের বোনের এ কী পরিণতি! সিনেমার চিত্রনাট্যও যেখানে বলে-বলে গোল খায়!

'আমার জীবন আমি ঠিক করব' মন্ত্রেই ফুটপাথকে নিজের আশ্রয় করে নিয়েছিলেন ইরা বসু। শিক্ষিকা থেকে একেবারে পথের ভিক্ষুকের জীবন! এই জার্নির শিকড় কোথায়? বৃদ্ধা মুখ খুলতে চান না নিজে। তবে, চেনাপরিচিতরা বলেন, মানসিক সমস্যাই কাল হয়ে দাঁড়ায় ভদ্রমহিলার। অনেকেই বলেন, এক সময়ে বরাহনগরে থাকতেন বৃদ্ধা। এরপর ঠাঁই হয় শিয়ালদহ স্টেশন সংলগ্ন ফুটপাথে। সেখান থেকে চলে আসেন ডানলপ মোড়ের ফুটপাতে। সকলেই তাঁকে এখন চেনেন 'ভবঘুরে মাসীমা' বলে। মাঝেমধ্যে সাহায্যের হাত বাড়িতে দিতে চান অনেকেই। কিন্তু আত্মসম্মান বোধ এখনও প্রখর হয়ে রয়েছে ইরাদেবীর মননে। তাহলে চলে কীভাবে? নিজেই জানিয়েছেন, ব্যাংকে জমানো আছে টাকা। যখন প্রয়োজন পড়ে, তখন তুলে নেন।

যে স্কুলে এক সময় পড়াতেন তিনি, সেই প্রিয়নাথ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা কৃষ্ণকলি চন্দও জানিয়েছেন, ইরা বসু অবিবাহিতা। স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার বাড়িতেও বেশ কিছু বছর কাটিয়েছেন তিনি। তবে এ জীবনে কীভাবে গেলেন ইরাদেবী, তার তথ্য তাঁদের কাছে নেই। চাকরি জীবনের প্রভিডেন্ট ফান্ডের টাকা পেলেও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে না পারায় পেনশন পান না তিনি।

কিন্তু প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীর শ্যালিকার এই পরিণতি, সিপিআইএম নেতারা জানেন না? কামারহাটির প্রাক্তন সিপিআইএম বিধায়ক মানস মুখোপাধ্যায় বলেন, 'ওঁকে চিনি বহু বছর ধরে। ওনার শিক্ষা, রুচি, জীবন সম্পর্কে আমাদের সম্যক ধারনা আছে। আমরা চেষ্টাও করেছি তাঁকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু পারিনি। তিনি নিজেই চাননি।' এলাকার বাম নেতারা জানিয়েছেন, তাঁকে একবার মানসিক হাসপাতালে ভর্তিও করা হয়েছিল তাঁকে। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যেই সেখান থেকে নিরুদ্দেশ হয়ে যান তিনি।

ইরা বসুর অবশ্য নিজের জীবন নিয়ে বিশেষ আক্ষেপ নেই, আফসোসও নেই। তিনি চান না, তাঁর জন্য বুদ্ধ বাবু বা মীরা দেবীদের উৎকণ্ঠা তৈরি হোক। মোদ্দা কথা, জীবনের গতিপথে তিনি যে জায়গায় আজ পৌঁছেছেন, সেটাই তাঁর কাছে পরম প্রিয়, শ্রেষ্ঠ পাওনা। বহির্জগতকে এ বিষয়ে জবাবদিহি করতে চান না তিনি। তবে, বৃহস্পতিবার ইরা দেবীকে নিয়ে শোরগোল পড়তেই বরাহনগর থানায় খবর যায়। সিপিআইএম নেতারাও ফের একবার উদ্যোগী হন। শেষে বিকেলে ইরাদেবীকে লুম্বিনী পার্ক মানসিক হাসপাতালে নিয়ে যায় পুলিশ। তবে, পরবর্তীকালে এ নিয়ে কোনও পাকাপাকি সমাধান করা হবে কিনা, তা নিয়ে মুখ খুলতে চাননি সিপিআইএম নেতারা।

এখানেই কি শেষ ইরা বসুর জীবন-'সিনেমা', মানসিক হাসপাতালই কি তাঁর অন্তিম আশ্রয়? কে জানে, আকাশ থেকে মাটি ছোঁয়া জীবন নিয়ে কেই বা কবে হিসেব মেলাতে পেরেছে!

Published by:Suman Biswas
First published: