#কলকাতা: বিধানসভার স্পিকার বিমান বন্দোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে 'অনাস্থা প্রস্তাব' আনার হুঁশিয়ারি দিয়ে এখন থেকেই সুর চড়াতে শুরু করল বিজেপি। সোমবার বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ''এই পরিস্থিতি চলতে থাকলে, বিধানসভার আসন্ন বাজেট অধিবেশনে আমরা স্পীকারের বিরুদ্ধে'অনাস্থা ' আনার কথা ভাবব।'' যদিও, শুভেন্দুর এই হুঁশিয়ারiর জবাবে, শাসক দলের এক মন্ত্রী বলেন, '' বাজেট অধিবেশন এখন বহুদূর। এখনি এসব ঘোষনা কেন করছে বিজেপি? স্পিকারের ওপর চাপ বাড়াতে গিয়ে নিজের ওপর চাপ বাড়াচ্ছেন না তো শুভেন্দু?''
চলতি অধিবেশনে এ'পর্যন্ত চারটি মুলতুবি প্রস্তাব এনেছে বিজেপি। বিধানসভার অধিবেশনের শুরুতেই রাষ্ট্রপতিকে অপমান করার অভিযোগে মন্ত্রী অখিল গিরিকে মন্ত্রীসভা থেকে বরখাস্ত করার দাবি জানিয়ে মুলতুবি। ডেঙ্গি দমনে রাজ্য সরকারের ব্যার্থতা ও তথ্য চেপে যাওয়ার অভিযোগ তুলে মুলতুবি। কৃষিতে সারের কালোবাজারি র জন্য শাসক দল ও প্রশসনকে দুষে মুলতুবি প্রস্তাব এবং আজ শিক্ষক নিয়োগে মন্ত্রী সভার ' অবৈধ ' সিদ্ধান্ত নিয়ে আলোচনা চেয়ে মুলতুবি প্রস্তাব আনে বিজপি।
প্রথম তিনটি মুলতুবি সভায় পাঠ করার সুযোগ পেলেও, আলোচনার দাবি খারিজ করে দেন স্পিকার। তার উপর, আজ বিধানসভার উল্লেখপর্বে উপস্থিত থেকেও, তাতে অংশ না নিয়ে অধিবেশন কক্ষেই দলের প্রতিবাদে সামিল হন বিজেপির সেলিব্রিটি বিধায়ক হিরণ চট্টোপাধ্যায়-সহ ৪ বিধায়ক। এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ স্পিকার ওই চার বিধায়ককে চলতি অধিবেশনে আর কোনও 'মেনশন' করতে পারবেন না বলে নির্দেশ দেন। স্পিকারের এই নির্দেশের পরেই বিরোধী দলনেতা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এভাবে বিধানসভা চললে, আগামী বাজেট অধিবেশনে স্পিকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার কথা ভাববে বিজেপি।
বিরোধী দলনেতার এই হুঁশিয়ারিকে কটাক্ষ করেছে তৃণমূল। শাসক দলের এক মন্ত্রী বলেন , " স্পীকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার আগে ওঁর দলের কতজনের ওঁর উপর আস্থা আছে, সেটা একবার বাজিয়ে দেখে নিন। " যদিও, বিরোধী দলনেতার এই হুঁশিয়ারিকে সমর্থন করেছে দল। বিজেপি মুখপাত্র শমীক ভট্টাচার্য বলেন, '' পরিষদীয় দলের সিদ্ধান্ত নিয়ে বিরোধী দলনেতার সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত। বিধানসভার অভ্যন্তরে স্পিকারই শেষ কথা। কিন্তু, সেই স্পিকার মুকুল রায়কে পিএসি-র চেয়ারম্যান করা নিয়ে যে রায় দিয়েছিলেন, তারপর আর নিরপেক্ষতা নিয়ে এই অধ্যক্ষের উপর আস্থা রাখা যায় না।''
যার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার কথা বলেছেন, শুভেন্দু, বিধানসভার সেই অধ্যক্ষ বিমান বন্দোপাধ্যায় রসিকতার সুরে বলেন, '' ভালই তো, আমার বিরুদ্ধে অনাস্থা আনলে, আমারই গুরুত্ব বাড়বে।"
ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বিরোধী রাজনৈতিক দল হিসাবে, স্পিকারের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তুলতেই পারে বিজেপি। অতীতে বাম জামানায় বিরোধী তৃণমূলও একাধিকবার স্পিকার ও মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অনাস্থা এনেছে। এটা সংসদীয় গনতন্ত্রের অঙ্গ। বিশেষত, চার বিধায়কের বিরুদ্ধে স্পিকারের রুলিং নিয়ে বিজেপি-র ক্ষোভ থাকতেই পারে। তবে, অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে অনাস্থা আনার সুযোগ কি আদৌ পাবে বিজেপি?
নিয়ম অনুযায়ী, স্পিকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে গেলে, অনাস্থা প্রস্তাব বিধানসভার বিজনেস অ্যাডভাইজরি কমিটিতে আলোচনার জন্য আসার সময় যেন অন্তত ১৪ দিন অধিবেশন জারি থাকে এবং প্রস্তাবের পক্ষে (রাজ্য বিধানসভার সদস্য সংখ্যার হিসাবে) অন্তত ৩০ জন বিধায়কের সম্মতি থাকে। এক্ষেত্রে, বিজেপির পক্ষে ২য় শর্তটি মানা সম্ভব হলেও, প্রথমটি নির্ভর করবে শাসক দলের ওপর। ফলে, হুঁশিয়ারি দিলেও, তা কতটা কার্যকর করা যাবে, তা নিয়ে সংশয় থাকছে।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Suvendu Adhikary