#কলকাতা: শুভেন্দুকে অধিকার করলেন অমিত শাহ। মেদিনীপুরে পদ্মাসনে শুভেন্দু থিতু হতেই শাসককে স্বমেজাজে তিরবিদ্ধ করতে শুরু করলেন শাহ। ২১ বছরের সম্পর্ক ত্যাগের কারণে শুভেন্দুকে যখন মীরজাফর বলছে তাঁর পুরনো দল, ব্যাটন ধরলেন শাহই। ইতিহাসের বাঁক ঘুরে এসে বললেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তো জার্সি বদলেছিলেন। কতদূর সত্যিই অমিত শাহের উবাচ? ফিরে দেখতে হয় বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসের সারণিই।
চালু তত্ত্ব অনুযায়ী, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ভোটে সোমেন মিত্র মমতাকে হারিয়ে দিতেই ক্ষুব্ধ হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু এটুকু বললে কিছুই বলা হয় না প্রায়। নব্বইয়ের দশকে একের পর এক অন্তর্ধান কাণ্ড ঘটছিল বাংলায়, তাই নিয়ে গলা তুলে প্রচারের আলো শুষতে শুরু করেন মমতা। ১৯৯৬ সালেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এক ধর্ষিতাকে নিয়ে চলে যান রাইটার্স বিল্ডিংয়ে। মমতাকে সেদিন স্বাগত জানায়নি রাইটার্স। পুলিশ ডেকে চুলের মুঠি ধরে তাঁকে বের করে দেওয়ার ছবিটা দেখেছিল গোটা বাংলার মানুষ। এই ছবিই বাংলার মানসে প্রধান বিরোধী মুখ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেদিন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝতে পারেন বাংলায় সিপিএম বিরোধিতা করতে হলে কংগ্রেসের ছাতার তলায় থেকে করা যাবে না। সেদিনই কংগ্রেসকে নিয়ে স্লোগান প্রসব- বাংলায় কুস্তি দিল্লিতে দোস্তি।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জেলায় জেলা কর্মী সম্মেলন করতে থাকেন। সম্মেলনগুলিকে বলা হত কংগ্রেসের তৃণমূল স্তরের কর্মীদের সম্মেলন। সংগঠনের মজবুত বুনিয়াদ তৈরি করে, একটি জোরালো বার্তা নিয়েই পুরনো ব্যাটন নামিয়ে রেখেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বার্তাটা আর কিছুই নয়. সর্বাত্মক সিপিএম বিরোধিতা।
একাদশ, দ্বাদশ লোকসভার সন্ধিক্ষণে মমতা বুঝতে পারেন এটাই দল তৈরির মাহেন্দ্রক্ষণ। সেই সময়ের সাক্ষীরা অনেকেই মনে করতে পারেন, সে সময়ে নেতাজী ইন্ডোরে কংগ্রেসের সম্মেলন ভিতরে। বাইরে অজিত পাঁজারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দলগঠনের প্রস্তুতি নিতে থাকেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সেদিন প্রধান সঙ্গী হিসেবে পেয়ে গিয়েছিলেন সুব্রত বক্সী, শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়দের। রাসবিহারী কেন্দ্রের কংগ্রেস বিধায়ক হৈমী বসুর মৃত্যুতে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য ডেকে নেন মমতা।
রাতারাতি লোগো এঁকে ফেলেন মমতা নিজে। তৃণমূল নয়, ফুলগুলি ও ঘাস, এই নামে লোগোর রেজিস্ট্রেশনের জন্য সেদিন ছুটেছিলেন মমতার একসময়ের সবচেয়ে বিশ্বস্ত সৈনিক মুকুল রায় (তৃণমূলের ভাঙনের চাণক্যও তাঁকেই বলে রাজনৈতিক মহল)। অবশেষে ১৯৯৮ সালের ১লা জানুয়ারি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূলের যাত্রা শুরু।
কাজেই শুভেন্দু-সঙ্গে অমিত উবাচ সর্বৈব সত্য নয়, যুক্তি হিসেবেও ক্লিশে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দল গড়েছিলেন নিজের হাতে, কোনও দলেই ভেড়েননি। রাজনৈতিক মহলের অনেকেই বলছেন,শুভেন্দু এদিন মঞ্চ থেকে বিজেপিতে যোগদানের যে যুক্তিগুলি বলছেন, তাও কিছুটা ফিকে। শুভেন্দুর উল্টোপক্ষের যুক্তি হল, যদি অনুন্নয়নই দলত্যাগের কারণ হয়, তবে পরিবহণ মন্ত্রিত্বে থাকার সময় তিনি প্রশ্ন তোলেননি কেন!