ERON ROY BURMAN
#কলকাতা: ইতিহাসের গা বেয়ে ঝড় বয়ে গিয়েছে। তবু ইতিহাস দাঁড়িয়ে আছে অটুট হয়েই। শুধু তার আশপাশের জনজীবন লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। আমফানে দক্ষিণ দমদমে প্রাচীন ক্লাইভ হাউসের কোনও ক্ষতি হয়নি। তবে গাছ পড়ে ভেঙে গিয়েছে ক্লাইভ হাউস লাগোয়া কয়েকটি বাড়ি। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাটছে দিন প্রায় দু'ডজন পরিবারের।
ওঁরা জানেন, ওঁরা ঘর করেন ইতিহাসের সঙ্গে। অবসর সময়ে আজও কানে আসে, কথা বলছেন ইংরেজরা। ইতিহাস ওঁদের চোখের সামনেই। দক্ষিণ দমদমের ক্লাইভ হাউস লাগোয়া জমিতে ওঁরা অনেকদিন থাকেন। সেই দেশভাগের কিছু পর থেকেই। আমফানের তাণ্ডবে ক্লাইভ হাউস লাগোয়া এলাকাই এখন লন্ডভন্ড। সাত দিন পরেও দেখে যেন মনে হচ্ছে, ঝড় এইমাত্র বয়ে গেল। সব ধ্বংস করে দিল। প্রাচীন ক্লাইভ হাউস লাগোয়া জমিতে ২০-২২ টি পরিবার থাকে। সেদিন ঝড়ে কোথা থেকে কী হয়ে গেল। দু’টো বিরাট বটগাছ ও আরও একটা গাছ উপড়ে বাড়ির উপর পড়ে। কারও পুরো বাড়িই ভেঙে গেছে। অনেকের আবার গাছের ফাঁকে বাড়ি আটকা পড়ে গিয়েছে। বিপদ আন্দাজ করেই ঝড়ের সময় মন্দিরের চাতালে আশ্রয় নিয়েছিলেন ৫০-৬০ জন এই অঞ্চলের মানুষজন। তাই সে যাত্রায় প্রাণে বাঁচা সম্ভব হয়েছে।
আশ্রয়হীন ভাঙা একটি বাড়ির বাসিন্দারা আশ্রয় পেয়েছেন পাশের মন্দিরের ঠাকুরমশাইয়ের বাড়িতে। লকডাউন উপেক্ষা করেই বয়স্ক মানুষদের থাকতে দিয়েছেন সে ঠাকুরমশাই। আরেক বাড়িতে এমনভাবে গাছ পড়েছে যে, গাছ না টপকে বাড়িতেই ঢোকা যাচ্ছে না। অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে আত্মীয়ের বাড়িতে রেখে এসেছন বাড়ির কর্তা। নিজে বটগাছ টপকে মই দিয়ে নেমে কোনওরকমে বাড়িতে ঢুকছেন প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে।
এই এলাকায় ঝড়ের দাপটে একটি বাড়ির মাথায় গাছ পড়েছে। সেই বাড়িতে থাকেন একজন প্রাথমিক শিক্ষক। ছেলে ডাক্তারিতে সুযোগ পাওয়ার জন্য পড়াশোনা করছে। বাড়িতে গাছ পড়ে বিরাট ফাটল। ভেঙে গিয়েছে ল্যাপটপ। বইপত্র ভিজে একসা। এতদিনের স্বপ্ন নিমেষে নষ্ট হতে বসেছে। স্থানীয় প্রশাসন পরিস্থিতি দেখে আশ্বাস দিয়ে গিয়েছে। কিন্তু এক সপ্তাহ পরেও সমাধান হয়নি। ১৭৫৭ সালে পলাশীর যুদ্ধে বাংলার নবাব সিরাজৌদোল্লাকে পরাজিত করে এই বাড়ির দখল নেন রবার্ট ক্লাইভ। তখন থেকেই নাম ক্লাইভ হাউস। ক্ষয়িষ্ণু বাড়িটি অবশ্য ঝড়ের ধাক্কা সামলেেছ। তবে ধ্বংসলীলা থেকে রেহাই পায়নি লাগোয়া বাসিন্দারা।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।