#কলকাতা: একদিকে করোনার জন্য টানা লকডাউন আর তার সঙ্গে আমপান ঘূর্ণিঝড়ের তাণ্ডব। দুইয়ে মিলে ত্রাহি ত্রাহি রব রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায়। তিলোত্তম্মা কলকাতাও তার ব্যতিক্রম নয়। বেলগাছিয়া এলআইজি আবাসন। ৩২২টি ফ্ল্যাট রয়েছে এই আবাসনে। ১০০০ এর ওপর মানুষের বসবাস এই আবাসনে। অনেকেই বৃদ্ধ - বৃদ্ধা। এখানকার জি ব্লকের ৩ তলায় থাকেন অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষিকা শুভ্রা ঘোষ এবং তার স্বামী বেসরকারি সংস্থা থেকে অবসরপ্রাপ্ত পরেশ ঘোষ তাদের মেয়ে আমেরিকায় থাকেন। সত্তরোর্ধ্ব স্বামী-স্ত্রী লকডাউন এর জন্য এমনিতেই বেশ সমস্যায় রয়েছে। আর তারপর আম্পান ঘূর্ণিঝড় তাদের বাঁচার আশাই কার্যত শেষ করে দিয়েছে।
শুভ্রা দেবী প্রায় বছর ১৫ ধরে সুগারের সমস্যায় ভুগছেন। আর গত ২ বছর ধরে তার অত্যধিক সুগারের জন্য ইনসুলিন নিতে হয়। তিনি যে ইনসুলিন নেন, তা আবার অস্পাশে পাওয়াও যায় না। আনতে হয় শ্যামবাজার থেকে। ফলে লকডাউন শুরু হওয়ার আগের দিনই প্রায় ৩ মাসের ইনসুলিন কিনে ফ্রিজে মজুত করে রাখেন। এদিকে আমপান শুরু হওয়ার সময় থেকেই বুধবার বিকাল থেকে বিদ্যুৎহীন ফ্ল্যাট। ভেবেছিলেন সব ঠিক হওয়ার পর বিদ্যুৎ চলে আসবে। কোথায় কী! শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত বিদ্যুতের কোনও দেখাই নেই। সিইএসসি, লালবাজার কন্ট্রোল রুম, নবান্ন হেল্প লাইন নম্বর সর্বত্রই বারবার যোগাযোগ করেছেন, কিন্তু বৃথা চেষ্টা। বেশিরভাগ সময়ই কেউ ফোন তোলে নি, অথবা বলা হয়েছে, দেখছি। এমনকি স্থানীয় কাউন্সিলরকে অনেকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেছেন, কিন্তু সেখানেও ব্যর্থ মনোরথ হতে হয়েছে।
বিদ্যুতের সঙ্গে গোদের ওপর বিষ ফোঁড়া জল। বিদ্যুৎ না থাকায় আবাসনের পাম্প চালানো সম্ভব হচ্ছে না। ফলে পানীয় জল তো দূরের কথা বাথরুমের জলও মিলছে না। আর কর্তা গিন্নির পক্ষে আর অনেকের মত তিনতলা থেকে নিচে নেমে রাস্তায় জল আনতে যাওয়াও একপ্রকার অসাধ্য। ফলে বাধ্য হয়েই কোনওরকমে জল কিনতে হচ্ছে। তবে সব থেকে চিন্তার বিষয় ইনসুলিন। বিদ্যুৎ না থাকায় ইনসুলিন ফ্রিজের ভিতরে গোলে যাচ্ছে, নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আর আতঙ্ক আরও দানা বাঁধছে ঘোষ পরিবারের।
স্বামী পরেশ ঘোষও সুগারের রোগী। তবে তাকে ইনসুলিন নিতে হয় না, এটাই রক্ষ্যে! তবে তার আবার হার্টের ব্যামো আছে। ফলে স্বামী স্ত্রী একপ্রকার অসহায় অবস্থার মধ্যে আছে। এর সঙ্গে বিদ্যুৎ না থাকায় মোবাইলও চার্জ দিতে পারছেন না তারা। ফলে আমেরিকায় থাকা মেয়ের সাথে যোগাযোগও বন্ধ। অন্য আত্মীয় স্বজনদের সাথেও যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। একপ্রকার বিচ্ছিন্ন দ্বীপের অধিবাসী হয়ে আছেন তারা। আর শুভ্রা ঘোষ প্রমাদ গুনছেন মৃত্যুর। ইনসুলিনের অভাবে তার যে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।
সিইএসসি বলছে আবাসনের ভিতরে বিদ্যুতের তারের ওপর যে গাছ পড়েছে, তা আগে পুরসভাকে কাটতে হবে, তবেই তারা বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে পারবে, আর অন্যদিকে পুরসভার কোনও উচ্চ বাচ্য নেই, ফলে অকূল পাথারে পড়েছে এই ঘোষ পরিবার। বিদ্যুৎ, জল হীন স্বামী স্ত্রী এখন মৃত্যুর সময় গুনছেন।
ABHIJIT CHANDA
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Amphan disaster, Cyclone Amphan, Electricity