#কলকাতা : স্বামী বিবেকানন্দ জন্মদিনের দিন বিক্ষোভরত শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের ধস্তাধস্তি ও গার্ড রেলের ব্যারিকেড ভাঙার যে দৃশ্য এই শহর সাক্ষী থাকল তা কার্যত বলা যায় নজিরবিহীন ঘটনা | শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ তরফে অর্ধবস্ত্র মিছিলের অনুমতিকে কেন্দ্র করে খণ্ডযুদ্ধ আকার নিল ধর্মতলার শহিদ মিনার চত্বরে |
সোমবার বিক্ষোভরত শিক্ষকদের সঙ্গে পুলিশের গন্ডগোলের প্রতিবাদে মঙ্গলবার তাঁরা বেলা ১ টায় অর্ধবস্ত্র পরে মিছিলের আয়োজন করেন | কিন্তু বেলা ১২টা ২৩মিনিট নাগাদ ডিসি সাউথ সুধীর কুমার নীলকন্ঠম অবস্থান তথা অনশন মঞ্চে এসে সাধারণ সম্পাদক মঈদুল ইসলাম এর সঙ্গে কথা বলে বোঝাতে চেষ্টা করেন | পুলিশের দাবি, কলকাতার রাজপথে এভাবে মিছিলের পারমিশন দেওয়া সম্ভব নয় | তখন পাল্টা শিক্ষকদের তরফে ৩ টি শর্তের কথা বলা হয় | প্রথমত, ১৩ তারিখের পর বিক্ষোভরত শিক্ষকদের কলকাতা অন্যত্র অবস্থান বিক্ষোভের জন্য জায়গা নির্ধারিত করে দিতে হবে | দ্বিতীয়ত, আজ অর্ধবস্ত্র মিছিল যদি না করতে দেওয়া হয় তবে তাঁরা ডোরিনা ক্রসিং হয়ে কলকাতা রাজপথে মিছিল করবেন বিভিন্ন জায়গাতে ঘুরে | তৃতীয়ত, মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁদের কথা বলে এই সমস্যার সমাধান করতে হবে | তাঁদের দাবি, সমকাজে সমবেতন |
পুলিশের পাল্টা দাবি, তাঁদের এই শর্ত পুলিশের পক্ষে মেনে অর্ধবস্ত্র মিছিলের অনুমতি দেওয়া সম্ভব নয় | দুপক্ষের কথাতে সুরাহা হয়নি | এরপরই ডিসি সাউথ বেরিয়ে যান | শহিদ মিনারের পাদদেশে যে মাঠে তাঁরা অবস্থান বিক্ষোভ করছেন সেখানে চারদিকে বেরোনো পথ কলকাতা পুলিশ গার্ড রেল দিয়ে আটকে দেয় |
এরপরই ১২ টা ৪৩ মিনিট নাগাদ ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে বিক্ষোভরত শিক্ষকেরা | তাঁরা ধর্মতলা বাস স্ট্যান্ডের দিকে ডোরিনা ক্রসিং যাওয়ার পথে মাঠের গার্ড রেল লাথি মেরে টেনে হিচড়ে ভেঙে দেন | ধস্তা ধস্তি শুরু হয় বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের | গার্ড রেলের ব্যারিকেড সরিয়ে ফেলেও হয়নি, এমনকি ওই গার্ড রেলে বাঁশ দিয়ে পিটিয়ে দুমড়ে ভেঙে ফেলা হয় |এরপর বিক্ষোভকারী শিক্ষকেরা মাঠ থেকে ছুটে চলে যান মাঠের ওপর দিকে | যেখানে মেয়ো রোড বেরোনোর পথে গার্ড রেলের দ্বিস্তরীয় নিরাপত্তা বলয় দিয়ে আটকে দেওয়া হয়েছিল পুলিশের তরফে | সেখানে বিক্ষোভরত শিক্ষকেরা গার্ড রেল ভাঙার নিরন্তর চেষ্টা করেন |
একদিকে পুলিশের কমব্যাট ফোর্স আটকানোর চেষ্টা ও গার্ড রেলের অন্যদিকে শিক্ষকেরা ভাঙার চেষ্টা করতে থাকেন গার্ড রেল | শেষ পর্যন্ত একটি গার্ড রেলের স্তর সরাতে পারলেও দ্বিতীয় স্তর ভাঙা সম্ভব হয়নি | কার্যত পুলিশের সঙ্গে ধস্তা ধস্তি ও খন্ড যুদ্ধ শুরু হয় | এই ঘটনায় বিক্ষোভরত শিক্ষক পুলিশের ধস্তা ধস্তিতে একজন অসুস্থ হয়ে পড়েন | তাকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় | পুলিশের বিশাল বাহিনী ঘিরে ফেলেন গোটা শাহিদ মিনার চত্বরের মাঠ | কিছুক্ষণ পর বেলা দেড়টা নাগাদ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে | শিক্ষকেরা ফের অবস্থান মঞ্চে ফিরে যান |
শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ সাধারণ সম্পাদক মঈদুল ইসলাম বলেন," পুলিশ শোভন বৈশাখীদের ও অন্যদের মিছিলের অনুমতি দিতে পারে | আর আমাদের রুজি রোজগারের বিষয় যেখানে সেখানে পারমিশন দিতে পারেনা পুলিশ | আমরা আগামীকাল ফের বৃহত্তর আন্দোলনে নামবো | আমাদের দাবি পূরণ না হয়ে পর্যন্ত আমরা পিছু হটব না | আমরা হাঙ্গার স্ট্রাইক করছি | লড়াই চলবে | "
তবে সোমবারের নবান্ন অভিযানে ধুন্ধুমারের পর ফের পুলিশের সঙ্গে অনশনরত শিক্ষকদের ধস্তা ধস্তি ও গার্ডরেল ব্যারিকেড ভাঙার যে দৃশ্য এ শহর দেখল তা নজিরবিহীন ঘটনা বলাই বাহুল্য |
অর্পিতা হাজরা