#প্যারিস: সত্যি বলতে কী, এই নিয়ে বিশ্বে মোটে তৃতীয় বার উদযাপিত হচ্ছে ওয়ার্ল্ড ব্রেইল ডে। ইউনাইটেড নেশনস জেনারেল অ্যাসেম্বলি সবার প্রথমে ২০১৮ সালে এই দিনটি পালন করার প্রয়োজনীয়তা স্বীকার করে নিয়েছিল। তার ঠিক পরের বছর অর্থাৎ ২০১৯ সাল থেকে ওয়ার্ল্ড ব্লাইন্ড ইউনিয়নের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে দিনটির উদযাপনের প্রথা শুরু হয়।
ব্রেইলকে বলা হয়ে থাকে দৃষ্টিহীনদের আত্মা। আত্মা না থাকলে আমাদের শরীর যেমন পৃথিবীর কোনও কিছুই উপভোগ করতে পারে না, দৃষ্টিহীনদের ক্ষেত্রে ব্রেইল না থাকাটাও অনেকটা সে রকমই! এ আসলে এক শিক্ষাপদ্ধতি। যা অনুসরণ করে, অক্ষরের উপরে আঙুল বুলিয়ে সম্পূর্ণ ভাবে দৃষ্টিহীন এবং আংশিক দৃষ্টিহীনেরা কোনও লেখা পড়ে উঠতে পারেন। স্বরলিপি তৈরির জন্যেও এই ব্রেইল পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
শুনতে আশ্চর্য লাগলেও সত্যি যে একজন ১৫ বছরের অন্ধ কিশোর নিজের এবং তার মতো মানুষের স্বার্থে উদ্ভাবন করেছিলেন এই শিক্ষাপদ্ধতি। তাঁর নাম ছিল লুই ব্রেইল। ১৮০৯ সালের ৪ জানুয়ারি ফ্রান্সে জন্ম নিয়েছিলেন তিনি। বলা বাহুল্য, জনকের নামেই পরিচিত হয়েছে এই শিক্ষাপদ্ধতি। আর তাঁর জন্মদিনটি স্মরণে রাখতেই প্রতি বছর এই তারিখে পালন করা হয় ওয়ার্ল্ড ব্রেইল ডে। অস্বীকার করার উপায় নেই যে, সারা বিশ্বের সময়প্রবাহে অমর হয়ে গিয়েছে ব্রেইলের নাম। তাঁর আবিষ্কৃত ৬টা বিন্দুর মতনই!
আসলে মাত্র ৬টি বিন্দুই ব্রেইল শিক্ষাপদ্ধতির মূল কথা। এই ৬টি বিন্দুকে নানা বিন্যাসে স্থাপন করে তার দ্বারা একেকটি অক্ষরকে চিহ্নিত করা হয়। আর পাতায় আঙুল বুলিয়ে, সেই ৬টি বিন্দুর নকশা বুঝে যে কোনও কিছু পড়ে ফেলতে পারেন দৃষ্টিহীনেরা। এখানেই এই অভিনব পদ্ধতির সার্থকতা।
ব্রেইল শিক্ষাপদ্ধতি নিয়ে নানা ত্রুটির কথাও অবশ্য বলে হয়ে থাকে। সাধারণ বইয়ের চেয়ে অক্ষরবিন্যাসের কারণে ব্রেইল বই অনেক ভারি হয়। ফলে, তা স্থানান্তরে নিয়ে যাওয়া একটু হলেও সমস্যার ব্যাপার! যদিও এই ত্রুটির জায়গা থেকে হালফিলে ছোট আকারের ব্রেইল ব্যবহার করা হচ্ছে, যা পকেটেও রাখা যায়। একে বলা হয় ব্রেইল স্লেট।
পাশাপাশি, শুধু পড়াশোনার বই নয়, নানা গল্পের বইও অনেক বেশি করে ব্রেইলে রূপান্তরিত করার কাজ চলছে। প্রসঙ্গত, হ্যারি পটার সিরিজের সব ক'টি বই ব্রেইলে পাওয়া যায়। ২০২০ সালের বড়দিনে তারই এক খণ্ড পেয়ে কেমন আপ্লুত হয়ে পড়েছিল দৃষ্টিহীন বালিকা এমরি, সে খবর এখন ভাইরাল!