#টোকিয়ো: কথায় বলে একজন মানুষ কতটা ভাল থাকবে তা নির্ভর করছে তাঁর ডায়েটের উপরে। পেট থেকে হার্ট, ত্বক থেকে চুল- সবটাই প্রাকৃতিক ভাবে ভাল থাকতে পারে যদি ডায়েট ভালো হয়। আর এই ডায়েটের ফলে জাপানের মানুষদের গড় আয়ু ৮৪ বছর পর্যন্ত বলে মনে করা হচ্ছে। গড় আয়ু এতটা বেশি হওয়ার পিছনে অন্য কারণও আছে ঠিকই, কিন্তু মুখ্যত ডায়েটের সঙ্গে এর লিঙ্ক অবশ্যই রয়েছে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।
অর্গানাইজেশন ফর ইকোনমিক কো-অপারেশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর রিপোর্ট অনুযায়ী, জাপানে মানুষজনের গড় আয়ু বর্তমানে ৮৪ বছর, যেখানে বিশ্বের বাকি জনসংখ্যার গড় আয়ু ৭২.৬ বছর। জাপানে বর্তমানে ২৯ শতাংশ সিনিয়র সিটিজেন রয়েছে। যার মধ্যে সবই ৬৫-বছরের বেশি বয়সী এবং স্বাস্থ্যের দিক থেকে তারা অনেক এগিয়ে রয়েছে, সুস্থ রয়েছে বিশ্বের সমবয়সী নাগরিকদের তুলনায়।
এই দেশের তানাকা কানে বিশ্বের সব চেয়ে বয়স্ক মানুষ। জানুয়ারির ২ তারিখ এই খেতাব অর্জন করেন তিনি। বর্তমান বয়স ১১৮ বছর। গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান দ্বারা স্বীকৃতির পরই তাঁকে এই খেতাব দেওয়া হয়। এবং সরকারি ভাবে জানানো হয় বিশ্বে তিনিই ১১৮ বছরে গণ্ডিতে আসা তৃতীয় ব্যক্তি।
সমীক্ষা বলছে, এর নেপথ্যে রয়েছে মানুষের ডায়েট ও লাইফস্টাইল। এখানকার মানুষজন হাইজিনের কথা মাথায় রেখে চলেন। ডায়েটে পুষ্টিকর খাবার রাখেন ও ব্যায়াম করেন, ফলে সুস্থ থাকে অনেকটা বয়স পর্যন্ত। এই পুরো বিষয়টা তাদের অনেক ছোট বয়স থেকেই শেখানো হয়। ফলে বেশিরভাগ মানুষের মধ্যেই এই অভ্যাস রয়েছে।
তবে, ১৯৭০-র সময়ে একদম উল্টো ছিল বিষয়টা। সেই সময় মৃত্যুর হারের নিরিখে অনেকটাই সামনের সারিতে ছিল জাপান। OECD-র রিপোর্ট বলছে, সেরেব্রোভাসকুলার ডেথ-এর হার অনেক বেশি ছিল এখানে। এই সমস্যা তখনই হয়, যখন মাথায় রক্ত পৌঁছাতে পারে না। এই রোগের পাশাপাশি ক্যানসার ও হার্টের সমস্যাও বেড়েছিল সমান তালে।
তবে, পরে এই ক্ষেত্রে অনেকটা বেশি সচেতন হয় মানুষজন। ১৯৭০ সালের পর বিশেষ করে ১৯৯০-র পর থেকে এই ধরনের সমস্যা নিয়ে ভাবনা-চিন্তা শুরু হয় এবং বর্তমানে বিশ্বের প্রথম সারির দেশগুলির মধ্যে অন্যতম দেশ জাপান, যাতে বয়স্ক মানুষদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের প্রবণতা অনেকটাই কম।
বেশ কিছু সমীক্ষা বলছে, জাপানের মানুষজন মাংস ও ডেয়ারি প্রোডাক্ট ডায়েটে খুবই কম রাখে। জাপানে প্রায় ১২০০ বছর ধরে মাংস নিষিদ্ধ ছিল,ফলে হার্ট ডিজিজের সম্ভাবনা কমেছে। পাশাপাশি যাঁরা এখানে মাংস খানও, তাঁদেরও খুব কম মাংস খাওয়ারই পরামর্শ দেওয়া হয়। তাই কোলেস্টেরলের মাত্রা নিয়ন্ত্রিত থাকে ও শরীর সুস্থ থাকে।
২০১৬ সালে প্রকাশিত ন্যাশনাল সেন্টার ফর গ্লোবাল হেল্থ অ্যান্ড মেডিসিন-এর সমীক্ষা বলছে, জাপানের মানুষজনের সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকার পিছনে ডায়েট একটা বড় বিষয়। সমীক্ষাটি প্রায় ৮০ হাজার মানুষের খাদ্যাভ্যাসের ধরনের উপরে তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং সেখান থেকেই এই চাঞ্চল্যজনক সিদ্ধান্তে পৌঁছানো হয়েছে বলে জানা গিয়েছে।