#ঢাকা : বুলেটিন শেষ হওয়ার পর সহকর্মীদের শুভেচ্ছা বার্তা কানে পৌঁছচ্ছিলো না তানসুভার। কাঁপছিলেন থর থর করে! আলো নিভতেই ষ্টুডিওতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। সেই কান্না আনন্দের, সেই কান্না অনেক হেনস্থা আর কটূক্তি পেরিয়ে নিজের স্বপ্নকে সত্যি হতে দেখার স্পর্ধার! অনেক ধাক্কা খাওয়ার পর, দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ার পর, ঘুরে দাঁড়ানো আত্মবিশ্বাসের গল্প বলছিল ওই চোখের জল।
ছোট্ট থেকেই চারপাশের সমাজটার সঙ্গে লড়তে হয়েছে তানসুভাকে। তখন তাঁর নাম ছিল কমল হুসেন শিশির৷ তারপর ক্রমশ নিজের সত্তাকে চেনা, বদলে ফেলা নিজেকে। বহু চড়াই উৎরাই পেরিয়ে তানসুভা পৌঁছে গিয়েছেন ক্যামেরার সামনে। আশা, রূপান্তরকামীদের নিয়ে এই সমাজের মননের চোরা কুঠুরিতে লুকিয়ে থাকা বদ্ধমূল ধারণাগুলিকে বদলে দেবেন একদিন। বহু বছর ধরে দেখা সেই স্বপ্নপূরণের পথেই এক নতুন পদক্ষেপ তাঁর সংবাদপাঠ। বাংলাদেশের প্রথম রূপান্তরকামী তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ হিসেবে টেলিভিশনে সংবাদ পাঠ করলেন ঊনত্রিশ বছর বয়সী তানসুভা। আর্ন্তজাতিক নারী দিবসের দিনে দেশের মাটিতে গড়লেন এক নয়া ইতিহাস।
এখানেই শেষ নয়। আরও অনেক পথ হাঁটতে হবে তানসুভাকে। আর সেপথে তিনি এক নন। সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, বাংলাদেশে এই মুহূর্তে কমপক্ষে ১১,৫০০ জন তৃতীয় লিঙ্গের মানুষ রয়েছেন। যদিও LGBTQ সমানাধিকারের প্রবক্তাদের মতে, ১৬০ মিলিয়ন জনসংখ্যার এই দেশে সংখ্যাটা প্রায় এক লাখ।
দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছরে, আন্তর্জাতিক নারী দিবসে 'বৈশাখী টিভি'র পর্দায় দেখা গেল তানসুভাকে। পেশায় মডেল ও অভিনেত্রী তানসুভাকে সংবাদ পাঠে নিয়োগের পাশাপাশি আরেক রূপান্তরকামী নুসরাত মৌ-কেও চ্যানেলের একটি নাটকে অভিনয় করতে দেখা যাবে আগামী দিনে। চ্যানেল কর্তৃপক্ষের তরফে জানানো হয় দেশের কিছু অংশের মানুষের বিরোধিতা সত্বেও এই সিদ্ধান্ত নিতে তারা বদ্ধপরিকর ছিলেন।