হাওড়া: জাতীয় স্তরের মহিলা ফুটবলে পরিচিত মুখ বাংলার শেফালি চৌধুরী। তাঁর জীবন সংগ্রাম হার মানাবে সিনেমার গল্পকে। মহিলা ফুটবলার হিসাবে সফল তিনি, দীর্ঘ খেলোয়াড় জীবনে বিভিন্ন পুরস্কারের পাশাপাশি মিলেছে সন্মান। কিন্তু বর্তমানে সেই প্রতিভাবান খেলোয়াড়ের জীবন দাঁড়িয়ে রয়েছে প্রশ্নচিহ্নের মুখে, দেখা দিয়েছে দারুন অর্থ সংকট।
সে সময় প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে উঠে আসা দরিদ্র কৃষক শ্রমিক পরিবারের মেয়ে শেফালি। একসময় যে কথা কেউ কল্পনা করতে পারেনি সেই গ্রাম থেকেই প্রতিভাবান ফুটবলার হিসাবে আত্মপ্রকাশ। গ্রাম থেকে কলকাতার ময়দান হয়ে তিনি পৌঁছেছেন জাতীয় স্তরে। এখন তাঁর বয়স চার দশক পেরিয়েছে, তবে খেলা থেকে সরে দাঁড়াননি তিনি। শেফালি জানান, দোকানে কাজের পাশাপাশি আমন্ত্রণমূলক ম্যাচ খেলছি। দিন কয়েক হল কলকাতা এবং হাওড়ায় পরপর দু'টি ফ্রেন্ডলি খেলায় অংশগ্রহণ করলাম।
এই বয়সে এসেও খেলার প্রতি যেমন আগ্রহ তেমন রয়েছে মনে বল। সে সময় তরুণী মহিলা ফুটবলার শেফালি। নয় এর দশকের শুরুতে কলকাতার ময়দানে সাফল্য অর্জনের কয়েক বছরের মধ্যে জাতীয় স্তরে অংশগ্রহণ। তারপর একের পর এক জাতীয় স্তরে পদক লাভ। তাঁর ঝুলিতে দু-দুটি সিলভার মেডেলও রয়েছে। মনিপুর, ব্যাঙ্গালোর, পঞ্জাব আবার কখনও ফুটবলের টানে পৌঁছেছেন বাংলাদেশ।
আরও পড়ুন- কেন্দ্রের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ, আজ থেকে ধর্নায় বসছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আরও পড়ুন: সাধারণ মানুষের অসাধারণ কৃতিত্বকে সম্মান, আজ থেকে শুরু ‘Rising India’ সামিটশেফালি জানান, নিজের একটা ঘর নেই। কোনও রকমে টালির ছাউনির নিচে বারান্দায় থাকি। খেলোয়াড় জীবনে পাওয়া শুধুমাত্র সার্টিফিকেটগুলোই রয়েছে নিজের কাছে। ট্রফি, মেমেন্টো বিভিন্ন পুরস্কার প্রিয়জন বা স্থানীয় মানুষ ভালবেসে আবদার করেন তাদের কাছেই সেই সমস্ত রাখা আছে। সে সময়ের মহিলা ফুটবল তারকা শেফালি চৌধুরীর দিন কাটছে আর্থিক অভাব অনটনে। বর্তমানে প্রায় এক বছর হল। একটি ফলের দোকানে দিনমজুরের কাজ করে কোনও মতে একার সংসার চলে শেফালির। সকাল ন'টা থেকে সন্ধ্যা সাতটা-সাড়ে সাতটা পর্যন্ত কাজ করার পর, দিন শেষে হাতে পান মাত্র ১৫০ টাকা। কাজের চাপে বন্ধ হয়েছে ফুটবল প্র্যাকটিস। তবে কলকাতা থেকে ডাক এলেই ছুটে যান খেলার মাঠে।
সমস্যায় পড়তে হয় এই চড়া মূল্যের বাজারে। মাত্র ১৫০ টাকা উপায়ে সংসার চালাতে। বাংলা মহিলা ফুটবলদলের একসময়ের নক্ষত্রের মুখে বিষাদের সুর। শেফালি জানালেন, খেলার জন্য সবকিছু ত্যাগ করেছি। কখনও ভাবিনি এই দিন আসবে। সাত ভাই বোন, চার দাদা আলাদা, তাঁদেরও কোনও রকমে সংসার চলে। বড় দুই দিদি বিবাহিত। বর্তমানে শেফালির করুণ অবস্থা, তবে কারও বোঝা হতে চান না শেফালি। জোটেনি একটি ঘর, এক দাদার ঘরের সামনেই একটি কাঠের খাটিয়াতে কোন রকমের রাত কাটে তাঁর। ঝড় বৃষ্টির দিনে এক প্রকার জেগেই কাটাতে হয়।
আক্ষেপের সুরে শেফালি চৌধুরী জানান, এক সময় পিছনের দিকে না তাকিয়ে শুধু খেলাধুলার প্রতি মনোযোগ দিয়েছি। অনেক স্বপ্ন দেখেছি। তবে এক সময়ে খুব আশা করতাম একটা সরকারি কোনও কাজ পাব। কিন্তু নিরাশ হয়েই থাকতে হয়েছে। বাবা মা- মারা যাওয়ার পর মাথার উপর ছাদটাই যেন সরে গেল। তার পর এমন দিন আসবে কখনও ভাবিনি। জানি না সামনের দিনগুলো আরও কতটা কঠিন।
রাকেশ মাইতি
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Sports