#হাওড়া: মাকড়দহ চৌধুরীপাড়ার শ্রীনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় থাকেন প্রায় তিনশো বছরের পুরানো পৈত্রিক দোতলা বাড়িতে। বিশাল বাড়ি সামনের অংশ বেশ কিছুটা ফাঁকা জায়গা সেখানে বেল টগর জবা সহ কিছু ফুলের গাছ। বাড়ির চতুর্দিক কংক্রিটের প্রাচীর পিচ রাস্তা লাগোয় মেন গেট। ওই বাড়িতে শ্রীনাথ বাবু ও তার নব্বই বছর বয়সী মা থাকেন। একাধিকবার শ্রীনাথ বাবুর মা তাঁর বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন বিয়ে না করার জন্য বহুবার অশান্তি হয়েছে মা ছেলের মধ্যে।তবুও শেষমেষ তিনি বিয়ে করেননি। বেসরকারি একটি কোম্পানিতে চাকরি করতেন শ্রীনাথ বাবু। সাত-আট বছর হল সেই কাজ ছেড়ে এখন বাড়িতেই থাকেন। শ্রীনাথ বাবু রামকৃষ্ণ মিশনের দীক্ষিত সেখান থেকেই জীবের প্রতি নিষ্কাম ভালোবাসা। গুরু মহারাজদের দেখে শিখেছেন কিভাবে শিব জ্ঞানে জীব সেবা করতে হয়। ১৪বছর আগে রাস্তা থেকে অসুস্থ কুকুরকে তুলে নিয়ে নিজের বাড়িতে আশ্রয় দিয়ে তাকে সেবা শুশ্রূষায় সুস্থ করে তোলেন।
মুমূর্ষ প্রাণকে সেবা-শুশ্রূষার মধ্যে বাঁচিয়ে তুলে কতটা সুখ তৃপ্ত আনন্দ পেয়েছিলেন তা জানতে হলে আসতে হবে শ্রীনাথ বাবুর বাড়ি হাওড়া মাকড়দহ চৌধুরী পাড়ায়। তাঁর বাড়ির তেরোটি ঘর এখন ওদের, দুর্ঘটনাগ্রস্ত ও অসুস্থ কুকুর-বিড়ালের সংখ্যা এখন ৫০-৫৫ টি। শ্রীনাথ বাবুর নিজে হাতে গড়া ওদের জন্য সেবাশ্রম। প্রতিদিন ভোর থেকে উঠে পরিস্কারের কাজ চলে তারপর সকালের আলো ফুটতে না ফুটতেই বিস্কুট, ক্যাটফুডস, পেডিগ্রি নিজে হাতে খেতে দেন। তারপর ব্যাগ হাতে চলে যান বাজারে, বিড়ালদের জন্য দেশি মাছ কুকুরের জন্য মাংস পেঁপে গাজর।
শ্রীনাথ বাবু ও তার মায়ের খাবার আসে হোটেল থেকে। তবে লক্ষ্মী সুন্দরীদের জন্য প্রতিদিন তার রান্নাঘরে কাজের মাসি মাছ ও মাংসের ঝোল এবং ভাত তৈরি করেন। দিনে তিন থেকে চার বার খাবার দিতে হয় নিয়ম করে। শ্রীনাথ বাবু জানান, কেউ পথদুর্ঘটনায় গুরুতর আহত হয়ে এসেছে, কাউকে স্থানীয় বাজার থেকে দিয়ে গেছে আবার কেউ নিজে থেকেই তার বাড়িতে এসে হাজির হয়েছেন। ওদের খাবার মজুদ রাখার জন্য রয়েছে আলাদা ফ্রিজ। তার বাড়ির তেরোটি ঘরের মধ্যে প্রায় সবকটি ওদের দখলে, বাড়ির বাথরুম পর্যন্ত ওদের দখলে।
শ্রীনাথ বাবুর বাবা তৎকালীন কেন্দ্রীয় সরকার অধীনস্থ ডাক্তার ছিলেন। চাকরির সূত্রে তার বাবা থাকতেন আন্দামানে, সে সময় তাদের বাড়িতে বিভিন্ন পশু পাখি পোষা ছিল তাঁর বাবার । তখন থেকেই পশুদের প্রতি আলাদা প্রেম। কিশোর বয়সে পরিবারের সঙ্গে হাওড়া মাকড়দহ চলে আসেন শ্রীনাথ বাবু। মায়ের পেনশন এবং তার সঞ্চয়ের টাকা দিয়েই খরচ চলে। প্রতি মাসে খরচ হয় প্রায় ৬০ হাজার টাকা।
শ্রীনাথ বাবু জানান, আগে ছাড়াই থাকত প্রত্যেকেই কম-বেশি অসুস্থ পর্যবেক্ষণ করতে দারুণ সমস্যা পড়তে হত আবার কখনও নিজেদের মধ্যে মারামারি করত। এখন তাই আলাদা আলাদা খাঁচার মধ্যে রাখছি। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করতে অসুবিধা হয় বটে তবে পর্যবেক্ষণে দারুণ সুবিধা। অসুস্থ দুর্ঘটনাগ্রস্ত কুকুর বিড়াল অনেকেই নিয়ে আসেন খাঁচা খালি থাকলে তাদেরকে রেখে দিই। গত বছর কলকাতা থেকে এক দম্পতি বিড়াল রাখতে এসেছিলেন। শ্রীনাথ বাবুর এই কর্মকাণ্ড দেখে এলাকার অনেকেই অনুপ্রাণিত হয়েছেন। অনেকেই আবার দূর-দূরান্ত থেকে তার বাড়িতে ছুটে আসেন নিয়মিত।
রাকেশ মাইতি
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Bangla News, Howrah news