হাওড়া: প্রায় তিন দশক পর আবার ডিহি মন্ডল ঘাটে দেখা মিলল ছোট নৌকার। ২০২২ সালের অক্টোবর মাসে হাওড়া শ্যামপুর ব্লকের রূপনারায়ণ তীরবর্তী ডিহি মন্ডল ঘাটে বৃটেনের সংস্থার (EMKP) হাত ধরে ছোট নৌকার কাজ শুরু। নৌকাটি তৈরি করতে প্রায় এক মাস সময় লাগে। নভেম্বরে কাজ শেষ হলে মাঝিদের নিয়ম মেনে পুজো করে পরীক্ষামূলকভাবে নদীতে নামানো হয়েছিল। তারপর এক এক করে ছয় মাস পার। নৌকাটি অবহেলিত ভাবেই পড়ে রয়েছে ডিহিমন্ডল ঘাটে।
নৌকাটি তৈরি করেন দক্ষ ছোট নৌকা কারিগর স্থানীয় পঞ্চানন মন্ডল। তিনি তার চার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে নৌকো তৈরীর কাজে হাত লাগান। যদিও পঞ্চানন বাবু নিজে কাজে সেভাবে হাত দেননি। দাঁড়িয়ে থেকে চার ছেলেকে দিয়ে কাজ করিয়েছেন। কয়েক দশক আগে পর্যন্ত ডিহি মন্ডল ঘাট স্থানীয় মাঝিদের প্রধান নির্ভর ছিল ছোট নৌকা। কিন্তু চর পড়ে নদীর প্রকৃতি বদলে যাওয়ার ফলে ভি আকৃতির ছোট নৌকা ধীরে ধীরে অচল হয়ে পড়ে। বড় ঢেউ এবং উত্তাল নদীতে এই ছোট নৌকা অনেক বেশি সুরক্ষিত। নদীর চরবৃদ্ধির ফলে মাছ বোঝাই নৌকা ফেরার পথে নদীর চড়ে আটকে বিপদে পড়ত মাঝিরা। ফলে ধীরে ধীরে এই ছোট নৌকার চল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
স্থানীয় বহু মানুষ এই ছোট নৌকার সঙ্গে পরিচিত। আবার নতুন করে ছোট নৌকো তৈরি হতে দেখে স্থানীয় মানুষও বেশ আনন্দিত হয়েছিল। কিন্তু বর্তমানে স্থানীয়দেরও মন খারাপ। কয়েক দশক আগে পর্যন্ত ছোট নৌকা তৈরি হয়েছে এলাকায়। কিন্তু নদীতে এই নৌকার চল বন্ধ। দক্ষ শ্রমিক হয়েও ছোট নৌকা তৈরীর কাজ নেই পঞ্চানন মন্ডলের মত দক্ষ কারিগরদের হাতে। প্রায় তিন দশক হল শেষবারের মত দেখা গিয়েছিল শ্যামপুর ডিহিমন্ডল ঘাট এলাকায় ছোট নৌকা চলতে। এতদিন পর আবার নৌকা তৈরীর বরাত পেয়ে দারুণ খুশি হয়েছিলেন পঞ্চানন বাবু। তিনি আরও খুশি হয়েছিলেন তাদের হাতে তৈরি নৌকাটি স্থান পাবে গুজরাটের ন্যাশনাল মেরিটাইম মিউজিয়ামে।
কিন্তু বর্তমানে সেই পঞ্চানন বাবু এবং তার ছেলেদের মুখে আর হাসি নেই। যদিও তারা পারিশ্রমিক হিসেবে যা পাওয়ার ছিল সবটুকুই পেয়েছেন। পঞ্চানন মন্ডল জানান,”নৌকাটি যাওয়ার কথা ছিল গুজরাটের মিউজিয়ামে। কিন্তু এখনও ডিহিমণ্ডল ঘাটে যেখানে তৈরি হয়েছিল সেইখানে খোলা আকাশের নিচে পড়ে রয়েছে।” তিনি আরও জানান,”এই কয়েক মাসে নৌকার উপরের লাল রঙ ফিকে হয়েছে। যদিও এখনও সেভাবে ক্ষতি হয়নি। তবে ক্ষতি হয়ে যাবে এভাবে থাকলে।” এই প্রজেক্ট এর প্রধান ছিলেন, প্রফেসর জন কুপার। অ্যাসিস্ট্যান্ট ডা: জিসান আলী শেখ। এছাড়াও ছিলেন হরিয়ানা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির প্রফেসর বসন্ত সিন্ধে। যিনি স্থানীয়ভাবে পুরো বিষয়টি দেখাশোনা করেছেন। তিনি হলেন অ্যান্থোপলিজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়ার ভিজিটিং ফেলো স্বরূপ ভট্টাচার্য।
এ প্রসঙ্গে স্বরূপবাবু জানান, প্রায় ছয় মাস অতিক্রান্ত রোদ বৃষ্টিতে নষ্ট হচ্ছে নৌকাটি। EMKP প্রজেক্টে ডিহি মন্ডল ঘাটে নৌকাটি বানানো হয়। মূল কাজ ছিল নৌকা তৈরীর সমস্ত ঘটনা পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে ডকুমেন্ট করা এবং তারের ডিজিটাইস। ডিজিটালস মেটেরিয়ালটি থাকবে ব্রিটিশ মিউজিয়ামের আরকাইভে। এবং নৌকাটি বানানো হলে নিয়ে যাবে গুজরাটের ন্যাশনাল মেরিটাইম মিউজিয়াম। কিন্তু ২০২২ সালের নভেম্বরে দশ তারিখ নৌকাটির কাজ শেষ হলেও, ন্যাশনাল মেরিটাইম মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ এখনও আসেনি।
স্বরুপ বাবু জানান, “প্রায় ছ’ মাস কেটে গেল। এটা আমাদের কাছে অত্যন্ত বেদনাদায়ক এবং ভয়ের বিষয়। যারা নিজে হাতে নৌকাটি তৈরি করেছেন। পঞ্চানন মন্ডল এবং অমর মন্ডল ও তার তিন ভাই চোখের সামনে দেখছে, নৌকাটি অবহেলায় পড়ে রয়েছে। তাদের কাছেও ভীষণ কষ্টকর।” তাদের দাবি, যত দ্রুত সম্ভব এই নৌকাটি গুজরাটের ন্যাশনাল মেরিটাইম মিউজিয়াম কর্তৃপক্ষ নিয়ে যাক।
রাকেশ মাইতি
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Gujarat, Howrah, Howrah news, Museum