হুগলি: বর্তমান সময়ে দাঁড়িয়েও মধ্যযুগীয় চিন্তা ভাবনা৷ প্রাণ হারাল ফুটফুটে এক চার বছরের শিশু। হুগলির পোলবা গ্রামে মর্মান্তিক ঘটনা। সাপে কামড়ানো এক শিশুকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বদলে নিয়ে যাওয়া হল ওঝার বাড়িতে৷ আর সেখানেই ঝাড়ফুঁকে সময় নষ্ট হওয়ায় প্রাণ হারাল সেই শিশু। এই ঘটনার পরেই এলাকায় কুসংস্কার দূর করতে তৎপর হয়েছে ব্লক প্রশাসন।
স্থানীয় সূত্রে খবর, পোলবার সুদর্শন গ্রামের চার বছরের ওই বাচ্চা বাড়ির কাছে একটি মাঠে খেলা করছিল। হঠাৎই একটি গর্তে হাত ঢুকিয়ে ফেলে সে। সঙ্গে সঙ্গে সেই গর্তে থাকা বিষধর একটি সাপ তাকে ছোবল মারে। স্থানীয় সূত্রের খবর, শিশুটির ঠাকুমা প্রথমে তাকে মনসা তলায় নিয়ে যান৷ সেখানে কিছুক্ষণ সময় নষ্ট হয়।
সেখানেই শেষ হয়নি৷ এর পরেও হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার বদলে বাচ্চাটিকে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় এক ওঝা বাড়িতে। কিন্তু সে সময় ওঝা বাড়িতে না থাকায়, এক দম শেষে গ্রামের অন্যদের সঙ্গে কথা বলে শিশুটিকে পোলবা ব্লক হাসপাতালে নিয়ে যায় তার বাড়ির লোকজন।
কিন্ত শেষরক্ষা হয়নি৷ শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া মাত্রই চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন অনেক আগেই তার মৃত্যু হয়েছে। পরিবারের লোকজন তারপরেও বিশ্বাস করেনি৷ এরপর তারা শিশুটিকে নিয়ে যায় চুঁচুড়া ইমামবাড়া জেলা হাসপাতালে। কিন্তু, সেখানেও চিকিৎসকেরা সেই একই কথা জানান। ময়নাতদন্তের পরে শিশুটিকে পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া দেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
সাপের ছোবলে শিশুর মৃত্যুতে প্রশ্ন ওঠে প্রশাসনের নজরদারি এবং গ্রামবাসীদের কুসংস্কার নিয়ে। কুসংস্কার দূর করতে গ্রামে পৌঁছয় পোলবা ব্লক হাসপাতালের ও পোলবা ব্লক প্রশাসনের একটি দল। সেই দলে ছিলেন সর্প বিশারদ চন্দন ক্লেমেন্ট সিং। গ্রামে গিয়ে এলাকার বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলেন প্রশাসনের কর্তারা।
জানান, সাপে কাটা রোগীকে তৎক্ষণাৎ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। কোনও ওঝা বাড়ি নিয়ে গেলে তার চিকিৎসায় অনেকটাই দেরি হয়ে যায়। তাই যত দ্রুত সম্ভব তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। চন্দন সাপের প্রকৃতি, কোন সাপ বিষধর, কোন সাপ কামরালে দ্রুত বিষ রক্তে মিশে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, সে সবই বিস্তারিত ভাবে বুঝিয়ে দেন তিনি।
পোলবা ব্লক স্যানিটারি ইনস্পেক্টর কুণাল মজুমদার জানান, হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই ওই শিশুর মৃত্যু হয়েছিল। সাপে কামড়ানোর অনেকটা পর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় শিশুকে। যখন নিয়ে যাওয়া হয় তখন অনেক দেরি হয়ে গিয়েছিল। গ্রামের মানুষদের বোঝানো হয়েছে যে সাপে কামড়ালে যত দ্রুত সম্ভব তাকে হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে। সেখানে ওষুধ মজুত রাখা আছে। তারা যদি আগে শিশুটিকে হাসপাতালে নিয়ে যেতেন তাহলে এই ঘটনা এড়ানো যেত। স্বাস্থ্য দফতরের পক্ষ থেকে এলাকায় সচেতনতার প্রচার করা হয়।আমরা চাই একজন সাপে কাটা রোগিও যেন বিনা চিকিৎসায় মারা না যায়।
রাহী হালদার
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Hooghly news