#কলকাতা: মিটু মুভমেন্টের দু বছর পরে কতটা পাল্টেছে বলিউডের অভিনেত্রীদের অবস্থান? শকুন্তলা দেবী এখন রিলিজ করেছে অ্যামাজন প্রাইম ভিডিওতে মুম্বইয়ে নিজের বাড়ি থেকে শর্মিলা মাইতি-র সঙ্গে খোলামেলা আলাপচারণে নিজেকে ধরা দিলেন বিদ্যা বালন।
ষোল বছরে প্রথমবার এমন ইন্টারভিউ! লকডাউনে যখন বাইরে বেরনো বারণ করোনার উৎপাতে, তখন ভার্চুয়ালই ভরসা। প্রগতিশীল চির-চলমান্ টেকনোলজিতে এখন সেলিব্রিটি ইন্টারভিউ নিজের বাড়িতে এরগনমিক রিভলভিং চেয়ারে বসে আছেন শকুন্তলা দেবী। দ্য হিউম্যান কম্পিউটার। বিদ্যা বালান। হ্যান্ডলুম কালো তাঁত শাড়িতে চওড়া সোনালি সোনালি পাড় ৷ সত্যি দারুণ লাগছিল দেখতে জুম চ্যাট সেশনে বাড়ি থেকেই চলল দারুণ আলাপচারণ, মাঝে মাঝেই প্রিয় ভাষা বাংলায় কথা বলছিলেন ৷
বলিউডে যখনই পাওয়ারফুল উওম্যান-এর দরকার হয়, তখনই ডাক পড়ে বিদ্যা বালানের। কোথায় স্টোর করে রাখেন এত এনার্জি?
হাসলেন বিদ্যা।. ফরসা গালে মিষ্টি টোল পড়ল। এখনও যে মনে পড়ে সেটাই তো দারুণ, না? ভগবানই এর জন্যে দায়ী। এখনও যে এত ছবি পাচ্ছি যেখানে নারী চরিত্রই সর্বেসর্বা, এজন্য তাঁর কাছে কৃতজ্ঞ! পাওযারফুল উওম্যানের সংজ্ঞাটা আমি একটু বদলাতে চাই সব নারীর মধ্যে অপার শক্তি থাকে, অভিনেত্রীর ধর্ম সেই শক্তিকে বের করে আনা। চরিত্র পেলে সেটাই চেষ্টা করে যাই।
লকডাউন শুরু থেকেই বাড়িতে ছিলেন বিদ্যা। অনেক দিন পর স্বামী সিদ্ধার্থের সঙ্গে বেশিরভাগ সময় কাটাচ্ছেন। একসঙ্গে ভাগ করে নিচ্ছেন বাড়ির কাজ। করোনা আবহে গৃহপরিচারিকারাও ছুটিতে। তাই নতুন করে সংসারের নানা দায়িত্ব পালন করছেন। এত নারীপ্রধান চরিত্র করছেন দীর্ঘদিন ধরে, কখনও মনে হয়নি যে, ,'নারীশক্তির উত্থান' এই দর্শনটাই ভুল!. ধরেই নেওয়া হয় যে, নারী হচ্ছে 'উইকার সেক্স' নারীসত্তাকে ছোট করা হয়, শ্রদ্ধা নয়।
বিদ্যা বললেন, "অনেককে বলতে শুনেছি, এমপাওয়ারিং উওম্যান কথাটার কোনও মানে নেই. আমাদের আলাদা করে সচেতন করার দরকার নেই. কিন্তু আমি জানি, নিজের অভিজ্ঞতায় দেখেছি, সব নারীর সামাজিক অবস্থান সমান হয় না. এখনও বহু নারী শিক্ষার আলো পান়নি, সারা জীবনটা তাদের কাটে বহু কষ্টে আর অনেকখানি অজ্ঞতায়।" বলে চলেন বিদ্যা, " অগ্রণী নারীদেরই এগোতে হবে, তাদের আলো দেখাতে হবে।. ইন ফ্যাক্ট আমি বিশ্বাস করি, "এমপাওয়ারড উওম্যান এমপাওয়ার উওম্যান" তত্ত্বে। মেয়েরা যত এদেশে, ততই এগিয়ে নিয়ে যাবে পিছিয়ে পড়া মেয়েদের. এই যে শকুন্তলা দেবীর চরিত্রটা পেলাম, আমি বলব, আমি 'এমপাওয়ারড' হলাম একজন বলিষ্ঠ নারীর সংস্পর্শে এসে। এত দৃঢ়চেতা, উচ্চশির মহিলা আমি আগে দেখিনি। স্ক্রিপ্টটার ছত্রে ছত্রে যেন আগুন! এক মেধাবী, জিনিয়াস নিজেকে প্রতিষ্ঠা করছেন।, গন্ডি পেরিয়ে সারা বিশ্বের কাছে পৌঁছতে চাইছেন।, চূড়ান্ত সফল। দর্পভরে বলতে পারেন, "আমি নর্ম্যাল মেয়ে কেন হব, যখন আমি দারুণ হওয়ার সব ক্ষমতা রাখি? শকুন্তলা দেবী শুধু অসামান্যা ছিলেন না, তাঁর চরিত্রও ছিল রঙিন. নানা রকম মাত্রা ছিল তাঁর চরিত্রে…"
প্রশ্ন ছিল, অঙ্কে অসামান্য ক্ষমতার অধিকারী হয়েও কিন্তু শকুন্তলা দেবীকে একটা প্রাচীর সারা জীবন ভাঙার চেষ্টা করে যেতে হয়েছে। মেয়েদের অন্দর আর বাহির। হোম অ্যান্ড দ্য ওযার্ল্ড । আপনার 'ডার্টি পিকচার' থেকে 'তুমহারি সুলু ' হয়ে 'মিশন মঙ্গল', সব চরিত্রের কাছেই ফ্যামিলি একটা চ্যালেঞ্জ। ঘরটা কায়দা করে সামলাতে হয… কীভাবে পারেন? কী ইনপুট দেন যে বার বার আপনার কথাই ভাবা হচ্ছে?
আবার প্রশ্রয়ের হাসি, আমি তো চাই সব পরিচালকই আগে আমার কথা মাথায় রাখুন তার পর চরিত্রগুলো ভাবুন। হ্যাঁ, শকুন্তলা দেবীকে ইতিমধ্যেই যাঁরা দেখেছেন, তাঁরা জানেন তিনি সারাজীবন নিজের খ্যাতি, প্রতিপত্তির পাশাপাশি ভাল মা হওয়ার চেষ্টাটাও সমানে করে গিয়েছেন। পারেননি।, নিজের মেযের সঙ্গে তুমুল তর্কাতর্কি, অশান্তি তো বটেই, মামলাও হয়েছিল।. আমার দায়িত্ব অভিনেত্রী হিসেবে এই সূক্ষ্ম ঘরোয়া বিষযগুলো তুলে ধরা আমার চ্যালঞ্জ
বলিউডে আসি, আপনার কোনও ব্যাকিং ছিল না সবাই জানে। মনে অদম্য ইচ্ছে ছিল বলিউডের সিনেমা জগতে কিছু করে দেখানোর। মেয়েদের কীভাবে লড়াই করে নিজের জায়গা করে নিতে হয়?
একমুহূর্তও সময় না নিয়ে বললেন বিদ্যা. "যতই উঁচুতে উঠুক না কেন,এখনও মেয়েদের কষ্ট করেই যেতে হয়,. ছেলেদের থেকে অনেক বেশিই কষ্ট করতে হয়, এটাই নিয়ম। আমি কখনও কাস্টিং কাউচের খপ্পরে পড়িনি। তবে শুনেছি অনেকেই সেটা এক্সপিরিয়েন্স করেছেন। অনেক মেয়েই ভেঙে পড়ে, বলিউড ছেড়ে অন্য জীবন বেছে নেয়। তবে সোশাল মিডিয়ায মি-টু মুভমেন্ট একটা সিঁড়ির ধাপ উঠিয়ে দিয়েছে।. অন্তত আগে মেয়েরা মুখ বুজে থাকত এখন তা করে না সোচ্চার হয়ে দুঃখের কথা, কষ্টের কথাটুকু বলে। ব্যস ওইটুকুই।" থামলেন বিদ্যা।
তখনও মুখের হাসিটা অম্লান।