PARADIP GHOSH#কলকাতা: বয়সে ওরা পিঠো-পিঠি। দুষ্টুমিতেও একে অন্যকে টক্কর দেওয়ার মতোই। কৃষ্ণনগরের সোনা-পট্টি সেই সময়ে মাতিয়ে রাখত পুলু আর বুরু। দু’জনের বন্ধুত্ব অটুট ছিল শেষ দিন পর্যন্ত। দুজনেই দুজনকে চোখে হারাতো। পুলু কৃষ্ণনগর ছাড়লেও বুরুর সঙ্গে যোগাযোগ ছিল নিয়মিত। পুলু অর্থাৎ সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়, বাঙালির অতি প্রিয় ফেলুদা। আর বুরু অর্থাৎ সন্ধ্যা মজুমদার। বয়সে কয়েক মাসের ছোট-বড়। আশৈশব বন্ধু সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের কথা উঠলে তাই কৃষ্ণনগরের সোনাপট্টির বাড়িতে বসে আজও অনর্গল বুরু।
নিজের প্রিয় বন্ধুর কথা বলতে গিয়ে বুরু বলছিলেন, "রাশিয়ায় দোভাষীর চাকরি পেয়েছিল। কিন্তু অভিনয়ের এমন নেশা, ভাল চাকরিটা হাতছাড়া করল। কলকাতা ছেড়ে রাশিয়া গেল না। ছোটবেলায় স্কুলে পড়তে পড়তেই কৃষ্ণনগর থেকে হাওড়া চলে গেল। কিন্তু আমার সঙ্গে যোগাযোগ ছিল। দীপা বৌদি (সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের স্ত্রী) কত বার ওদের বাড়ি গিয়ে থাকতে বলেছে!"
ছোটবেলায় এক সঙ্গে কাটানো দিনগুলোর গল্প যেন ফুরোতেই ঢায় না। পলকা শরীরে আবছা স্মৃতির সিঁড়ি বেয়ে অতীতে ফিরে যান সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের ছোটবেলার বন্ধু বুরু মজুমদার। বলছিলেন, "একবার কী হয়েছিল জানেন! বিকেলে খেলতে বেরিয়ে দু’টো চপ কেনা হয়েছিল। আমরা তিনজন ভাগ করে খাব। আমি, পুলু আর পুলুর ভাই। ওরা দু’জনে বেশি বেশি খেয়ে নিল। আমাকে দিল অল্প একটু। পুলু(সৌমিত্র) আবার আমাকে বলল, বাড়িতে বলবি না পেঁয়াজ খেয়েছি। কিন্তু আমাকে চপের ভাগ অল্প দেওয়াতে রাগ তো হয়েছিল। আমি বাড়ি গিয়ে সবটা দিলাম বলে। কিন্তু বলে তো দিলাম! পুলু প্রচন্ড বকুনি খেল। আর তার পরে রাগে আমার মাথায় কালি ভর্তি দোয়াত ঢেলে দিয়েছিল।"
বন্ধু পুলুর পছন্দ-অপছন্দ আজও বুরুর ঠোঁটের গোড়ায়। কথা বলতে বলতেই আশি উর্ধ্ব সন্ধ্যা মজুমদার বলছিলেন, "জানো, খুব সাধারণ খাবার পছন্দ করত পুলু। ছোট মাছ খেতে দারুণ ভালবাসত। ভাত, ডাল, মাছ আর সাদা দই হলেই ওর খাওয়া হয়ে যেত।"
বন্ধুত্বের বাহুডোর ভেঙে পুলু আজ অনেক দূরে। হয়তো অজানা, অচেনা নিশ্চিন্দিপুরে। কিন্তু আপামর বাঙালির মতোই বুরুর মনে কিংবদন্তী সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় বেঁচে থাকবেন সেই ছেলেবেলার পুলু হয়েই।
নিউজ১৮ বাংলায় সবার আগে পড়ুন ব্রেকিং নিউজ। থাকছে দৈনিক টাটকা খবর, খবরের লাইভ আপডেট। সবচেয়ে ভরসাযোগ্য বাংলা খবর পড়ুন নিউজ১৮ বাংলার ওয়েবসাইটে।
Tags: Soumitra Chatterjee