হোম /খবর /বিনোদন /
Exclusive: ‘‌খুব সম্ভবত বুদ্ধদা ইন্টারনেট-এ আমার ছবি দেখেছিলেন’‌ বললেন ইন্দ্রনীল

Exclusive: ‘‌খুব সম্ভবত বুদ্ধদা ইন্টারনেট-এ আমার ছবি দেখেছিলেন’‌ বললেন ইন্দ্রনীল

প্রবাসী হলেও তিনি মনে প্রাণে বাঙালি। মডেলিং থেকে ছবি, তাঁর যাত্রাটা আর পাঁচজন মডেল টার্ন্ড অ্যাক্টর-এর মতো নয়। শুকরিয়া জানিয়ে ১৯২০–তে অটোগ্রাফ দিয়েছিলেন তিনি। অভিনেতা ইন্দ্রনীল সেনগুপ্ত, সবসময় প্রথা ভাঙতে চেয়েছেন। সম্প্রতি মুক্তি পেয়েছে তাঁর ওয়েব সিরিজ 'অভয় ২'। অভিনয়, চিত্রনাট্য বাছাই, এই সবকিছু নিয়ে News18 বাংলার সঙ্গে আড্ডা জমালেন ইন্দ্রনীল।

আরও পড়ুন...
  • Share this:

প্রশ্ন- আপনি প্রবাসী হলেও বাঙালি, বাংলা বোঝেন, বাংলা ছবিতে কাজ করেন। বাংলাতেই কথা বলছি, তাহলে।

হ্যাঁ নিশ্চয়ই। বাংলায় বলুন। আমার টানা মাতৃ ভাষা বলতে কোনো অসুবিধে হয় না।

প্রশ্ন- সম্প্রতি আপনাকে দেখা গিয়েছে 'অভয় ‌২'-তে। চরিত্রটা ভীষণ ডার্ক। পর্দায় এরকম মানুষ হয়ে ওঠার প্রস্তুতি কেমন ছিল?

আসলে আমাদের নানা পাত্রের আকার নিতে হয়। অভিনেতা হিসেবে এটাই আমার কাজ। নিঃসন্দেহে এটা খুবই কঠিন চরিত্র। নিজের মধ্যে খোঁজ চালাতে হয়েছে। কিন্তু আমার কাছে ভাল একটা চিত্রনাট্য ছিল। একজন দক্ষ পরিচালকের সাহায্য পেয়েছি। এরকম চরিত্র আমি এর আগে করিনি। আমি নিজের সেরাটা দিয়েছি, বাকিটা দর্শকের ওপর।

প্রশ্ন- আচ্ছা খুব ডার্ক চরিত্র করলে কি সেই মানসিক অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসা কঠিন হয়, মানে সুইচ অফ করা?

সুইচ অফ করা আমার ক্ষেত্রে খুব কঠিন, এমনটা নয়। আমার সমস্যাটা অন্য জায়গায়। এত ডার্ক চরিত্র তো, পর্দায় একটু কম বা বেশি হলে, খুব খারাপ দেখায়। ওই মাপটা করাই মুশকিল। অতিরঞ্জিত যাতে না লাগে, সেটা নিয়ে একটু ভয়ে ছিলাম।

প্রশ্ন- এই সিরিজের কাস্ট তো দারুণ। কুণাল খেমু, রাম কাপুর, চাঙ্কি পাণ্ডে, সকলে দারুণ অভিনেতা। কাজ করে কেমন লাগলো?

অসাধারণ অভিজ্ঞতা ছিল। কুণালের সঙ্গেই আমার অধিকাংশ দৃশ্য ছিল। এই যুগের অন্যতম ভাল অভিনেতা কুণাল। শুধু অভিনেতা কেন, আশা নেগী, বিদিতা বাগ সিরিজের অভিনেত্রীরাও তাঁক লাগানোর মতো কাজ করেছেন। এই রকম একটা কাজের অংশ হতে পেরে খুব খুশি আমি।

প্রশ্ন- আপনাকে একটু পুরোনো কথা জিজ্ঞেস করি। যেই ফ্যাশন শো-এ জন আব্রাহম বিজয়ী হয়েছিলেন আপনি দ্বিতীয় স্থান পেয়েছিলেন। এত বছর কেটে গিয়েছে। আপনার এই সফরের ব্যাপারে কী বলবেন?

অনেক কিছু চোখের সামনে ভেসে উঠল। মডেল হিসেবে কাজ শুরু করেছিলাম। তারপর অভিনয় করতে আসি। অনেক পর অভিনয় বিষয়টা বুঝতে শুরু করলাম। আশপাশের অনেকের মতো হতে চাইতাম। সময়ের সঙ্গে তাঁদের থেকে ভাল হতে চাইতাম। চিত্রনাট্য বাছার ধরন বদলালাম। প্রতিদিন কিছু শিখছি। নিজেকে উন্নত করার চেষ্টা করছি। এটা চালিয়ে যাব। আমি সত্যি ভাগ্যবান যে আমি এই সময়ের অভিনেতা। আশপাশে কত গুণী অভিনেতারা কাজ করছেন। ওয়েব আসার পর, কত ভাল কাজ হচ্ছে। জীবনে এত কিছু ঘটবে, সেটা ফ্যাশন শোয়ের দিন ভাবিনি।

প্রশ্ন- মডেলিং-এর দিনগুলোর সময়ই ঠিক করে নিয়েছিলেন যে অভিনেতা হবেন?

সত্যি বলতে না। একেবারেই না। অনেকটা পরে ঠিক করি।

প্রশ্ন- মানে যখন ফাল্গুনী পাঠক বা জগজিৎ সিং-এর মিউজিক ভিডিও করেছিলেন, তখনও অভিনয় করবেন ভাবেননি?

তখনও নয়। জানেন ভারতে একটা প্রথা রয়েছে। মডেলরা কিছুটা সময় কাটার পর অভিনয়ে ঢুকে পরেন। আর এটাও তো সত্যি কতদিন মডেলিং করা যায়। মডেল মানেই সুন্দর চেহারা, সুন্দর গঠন, সেটা কতদিন ধরে রাখবেন? আমিও তেমন মডেলিং করতে করতে অভিনয়ে ঢুকে পরি। কয়েকটা ছবি করার পর অভিনয় ভাল লাগতে শুরু করল। তারপর অভিনেতা হিসেবে আমার মধ্যে বদল ঘটে।

প্রশ্ন- 'শুকরিয়া', 'মুম্বাই সালসা' এই দুটো ছবির পর, চিত্রনাট্য বাছার ধরন পাল্টে ফেলেন। তাই না?

সেই সময়, সবে মাত্র মডেলিং ছেড়ে ছবি করতে এসেছি। এক কথায় হিরো হতে এসেছি। লোকজনও আমাকে ওই চোখেই দেখতো। আমি নিজেকেও সেভাবে দেখতাম। তখন চেহারা সুন্দর, ফিজিক ভাল, রোম্যান্টিক নায়ক হব, ওটাই ভাবতাম। তারপর একঘেয়ে লাগতে শুরু করল। বুঝলাম বেশিদিন এক জিনিস করা যাবে না। পাশাপাশি শৈলিটা বুঝতে শুরু করলাম। নিজেকে চ্যালেঞ্জ করতে ভাল লাগলো। এই ভাবেই গ্রো করলাম।

প্রশ্ন- আপনি বাংলা-হিন্দি দুই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতেই সমানতালে কাজ করেন। চিত্রনাট্য বাছার মাপকাঠি কী?

আমি খুব লাকি জানেন তো, বিভিন্ন ধরনের চরিত্র করার সুযোগ পেয়েছি। আর আমার মনে হয়, আমি প্রথম থেকেই সাহসী সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এখনকার অভিনেতারা অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। আমি যখন কাজ শুরু করেছিলাম, তখন কিন্তু সকলে নায়ক হতে চাইতেন। কিন্তু আমি ওই হিরো ব্র্যাকেটটার থেকে দূরে থাকতে চেয়েছি। নায়ক হতেই এসেছিলাম। কিন্তু নায়ক হওয়ার মোহ পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে দেয় না। আপনি নিরাপদ থাকতে চান। ফর্মুলা ছবি করার দিকে ঝোঁকেন। অন্য কিছু করলেও সেটা কমফোর্ট জোনের বাইরে নয়। তবে আমি এটার থেকে দূরে থাকতে চেয়েছি। মনে হয় পেরেছি। আমার মনে হয়, অভিনেতার কোনো ইমেজ থাকা উচিত না। আমি গরিব, বড়লোক, মেয়েলি পুরুষ, খলনায়ক, সমকামী সব ধরনের চরিত্র করেছি। আমার কোনো ইমেজ নেই।

প্রশ্ন- চরিত্রের মেয়াদ আপনাকে আকৃষ্ট করে না, তাই হয়তো 'মুল্ক'-এ কয়েক মিনিটের চরিত্র করতে রাজি হয়েছিলেন।

'মূল্ক'-এর চিত্রনাট্য অসাধারণ। হোক না ছোট চরিত্র, এরকম একটা কাজের অংশ হতে কে চাইবে না, বলুন? আর অনুভব সিনহার সঙ্গে আমি আমার জীবনের প্রথম মিউজিক ভিডিও শ্যুট করেছিলাম। তাই ওঁকে না বলা সম্ভব নয়। তাছাড়াও ওয়েবে কী সব দারুণ কাজ হচ্ছে বলুন তো। অভিনেতারা একটা দুটো সিন করতে আসছেন। ওইটুকুই হয়ে যাচ্ছে হাইলাইট পয়েন্ট। আজকের দিনে স্ক্রিন টাইমটা বড় নয়। আপনি পর্দায় কী করছেন, সেটা বড়। আর আমি একটু অন্যরকম ভাবে ভাবি।

প্রশ্ন- ভেঙে বলুন।

এমন একটা কাজ করলাম যেটা করে মনে হল, নতুন কিছু করলাম সেটাই আমার কাছে আসল। অর্থ প্রয়োজন। কিন্তু আত্মসন্তুষ্টি না হলে চলে না। টাকা কামানো লক্ষ্য নয়। শুধু অর্থের জন্য অভিনয় করলে তা এক ঘেয়ে হয়ে যাবে।

প্রশ্ন- তা ঠিক। তবে আপনি দারুণ সব পরিচালকদের সঙ্গে কাজ করেছেন। ঋতুপর্ণ ঘোষ, বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, আপনি সত্যি ভাগ্যবান।

নিঃসন্দেহে। ঋতুদার সঙ্গে ছবি করা, এক ফ্রেমে অভিনয় করা, কী বলব। যে কোনো অভিনেতার স্বপ্ন। আমার ক্ষেত্রে সেটা বাস্তব হয়েছে।

প্রশ্ন- 'জানালা'-র প্রস্তাব, মানে বুদ্ধদার সঙ্গে যোগাযোগ কী করে হল?

'জানালা' আমার প্রথম অভিনীত বাংলা ছবি। যদিও 'অংশুমানের ছবি' আগে মুক্তি পেয়েছে। কিন্তু ওটার শ্যুটিং পরে হয়েছে। বুদ্ধদার সঙ্গে কাজ করে যে কত কিছু শিখেছি, বলে বোঝাতে পারবো না। সেই সময় আমি কলকাতায় থাকতাম না। টেলিভিশন করতাম। তখন আমার বাংলায় প্রচণ্ড টান ছিল। তাও তিনি আমায় নিয়েছিলেন এটাই বড়। তাপসদা, স্বস্তিকা অসম্ভব ভাল সব অভিনেতাদের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল।

প্রশ্ন- কিন্তু বুদ্ধদা আপনাকে দেখলেন কোথায়?

খুব সম্ভবত উনি ইন্টারনেট-এ আমার ছবি দেখেছিলেন। ওঁর আমার চোখ দুটো খুব পছন্দ হয়েছিল। চাহনিতে সততা আছে, বুদ্ধদার এমনটা মনে হয়েছিল। এটা আমি পরে শুনেছি।

প্রশ্ন- লকডাউনের মধ্যে স্ত্রীয়ের সঙ্গে তো একটা ওয়েব সিরিজ করলেন। কেমন লাগলো গৃহিনীর (বরখা বিস্ত সেনগুপ্ত) সঙ্গে কাজ করে?

ওঁর সঙ্গে আগেও কাজ করেছি। তবে লভ অ্যান্ড অ্যাফেয়ারস' স্পেশ্যাল। লকডাউনের মধ্যে পুরোটাই বাড়িতে শ্যুট করেছি। একেবারে অন্যরকম অভিজ্ঞতা।

প্রশ্ন- শেষ প্রশ্ন, করোনা পরিস্থিতি থেকে কী শিখলেন। অভিনেতা হিসেবে বদলেছেন?

অভিনেতা হিসেবে হয়তো কোনো বদল হয়নি। কিন্তু বাড়িতে শ্যুট করার দরুণ ছবি বানানোর প্রসেসটার আরো গভীরে যেতে পারলাম। এবার কোনো ছবি করলে শুধু নিজের পাঠ টুকু করে বাড়ি ফিরবো না। ছবি বানানোর ভিন্ন দিকগুলোর দিকে নজর দেব।

ARUNIMA DEY

Published by:Uddalak Bhattacharya
First published:

Tags: Tollywood