#কলকাতা: প্রয়াত সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়৷ টানা ৪০ দিনের লড়াই শেষ৷ বেলভিউতে ভর্তি ছিলেন প্রবীণ অভিনেতা৷ করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন৷ করোনামুক্ত হওয়ার পরও অবস্থার অবনতি হতে থাকে৷ তবে শেষ পর্যন্ত মাল্টি অরগ্যান ফেলিওর ও ব্রেন ডেথ হয় অভিনেতার৷ শেষ রক্ষা হল না৷ অগণিত ভক্ত, অসংখ্য অনুরাগীর প্রার্থনায় সাড়া দিলেন না তাঁদের প্রিয় অপু৷
অসম্ভব ফাইটিং স্পিরিট ছিল সৌমিত্রবাবু৷ যা ধরা পড়েছে শেষ দিন পর্যন্ত৷ ছবিতে যেমন কোনিকে লড়াই করতে বলেন তাঁর কোচ খিদ্দা, তেমনই নিজের জীবনেও শেষ পর্যন্ত লড়াই চলিয়েছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়৷ টানা ৪০দিন জীবন-মৃত্যুর মাঝে বারবার বাঁচার ইচ্ছে দেখিয়েছেন অভিনেতা৷ সাড়া দিয়েছেন চিকিৎসকদের নানা চেষ্টায়৷ তবে ক্লান্ত শরীর যেন আর সঙ্গে দেয়নি তাঁকে৷ করোনা আক্রান্ত ও পরবর্তীতে একে একে অকেজো হয়েছে তাঁর শরীরের একাধিক অঙ্গপ্রত্যঙ্গ৷ অভিনেতার মস্তিষ্ক খুব অল্পমাত্রায় কাজ করছিল৷ হৃদযন্ত্রের সমস্যা দেখা যায়, হার্ট রেটও অনেকটা বেড়ে যায়৷ রক্তচাপ স্বাভাবিক করতে আলাদা সাপোর্ট দেওয়া হয় বর্ষীয়ান অভিনেতাকে। হাসপাতাল সূত্রে জানানো হয়, সৌমিত্রর কিডনি ঠিকমত কাজ করছে না। প্লাজমাফেরেসিসেও কোনও উন্নতি হয়নি।
তবে লড়াইটা ছিল কঠিন এবং দীর্ঘও৷ প্রায় দেড় মাস সময় ধরে বেলভিউ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়। কখনও শারীরিক অবস্থা খানিক উন্নতি তো কখনও সঙ্কটজনক অবস্থার খবর মিলছিল৷ শুক্রবার আচমকাই তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়। মস্তিস্কের স্নায়বিক সমস্যা বাড়ে। রক্তজমাট বেধেছে কি না, তা জানতে এ দিন সিটি স্ক্যান করা হয় অভিনেতার। ইউএসজিও করা হয়। শেষ কয়েকদিন ভেন্টিলেশনেই ছিলেন সৌমিত্র, বাড়াতে হয়েছিল অক্সিজেনার মাত্রা। কিডনির সমস্যার কারণে বেশ কয়েকবার ডায়ালিসিসও করতে হয়।
করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর প্রথম কয়েকদিন সৌমিত্রর শারীরিক অবস্থার লক্ষ্যনীয় উন্নতি হয়েছিল। হঠাৎ করেই দিন পাঁচেক পর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। প্রথমে আই টি ইউ, পরে ভেন্টিলেশনে দিতে হয়। মস্তিষ্কে সংক্রমণ কোনওমতেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয়নি। বরং কিডনি কাজ করা বন্ধ করে দিতে থাকে। শুরু হয় ডায়ালিসিস। কিন্তু তাতেও অবস্থার উন্নতি হয়নি। এমনকী তাঁর হিমোগ্লোবিন এবং প্লেটলেট মাঝে মধ্যেই কমে যেতে থাকে। বারবার করে রক্ত দিয়েও অবস্থার খুব একটা উন্নতি না হওয়ায় প্লাসমাফেরেসিস বা প্লাসমা শোধন করা হয়। প্রাথমিক ভাবে উন্নতি নজরে আসলেও শুক্রবার দুপুরে তাঁর শারীরিক অবস্থার তীব্র অবনতি হয়।
শুক্রবার দুপুরের পর থেকে অভিনেতা সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়ের শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে। হার্ট স্বাভাবিক ভাবে কাজ করা বন্ধ করে। হার্ট রেট অনেকটাই বেড়ে যায়, অনেকটা কমে যায় রক্তচাপ । ভেন্টিলেশনে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে হয়। মস্তিষ্কে স্নায়ুর সাড়া দেওয়ার সূচক গ্লাসগো কোমা স্কেল অনুযায়ী ৫ এ পৌঁছে যায় যা স্বাভাবিক ১৫ এবং তা যদি ৩- এ নেমে যায়, তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানের নিয়ম অনুযায়ী ব্রেন ডেথ ঘোষণা করা হয়। মিরাকেলই একমাত্র তাঁকে বাঁচাতে পারেন সৌমিত্রবাবুকে৷ এমনই জানিয়ে দেন চিকিৎসকরা৷ তবে শেষরক্ষা হল না৷ থামল খিদ্দার লড়াই৷