#কলকাতা: চলচ্চিত্রে অভিনয় করার ডাক পেলেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায়! তার আগে যা অভিনয় করেছেন, সবই মঞ্চে! কম রিহার্সাল , ছোট ছোট শট-এ অভিনয়, তাড়াছা ফিল্মের শুটিং কাহিনীর ক্রমানুসারে হয় না, আগের দৃশ্য মধ্যে কি মধ্যের দৃশ্য পরে শুট হতে পারে, এর ফলে চরিত্রের ফিলিংস ব্যাহত হতে পারে... এইসব ভেবে ভয়ে বুক দুরুদুরু! সৌমিত্রের ভাষায়, '' এই সব আশঙ্কা কাটিয়ে দিয়ে আমার মানসিকতাকে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের উপযোগী করে তুলেছিলেন আমার পরিচালক সত্যজিৎ রায়।''শুরু হল 'অপুর সংসার'-এর শুটিং। তেমন কোনও একটা রিহার্সালের ব্যবস্থা ছিল না। কিন্তু সত্যজিৎ রায় খুব ধীরে ধীরে এবং অনেকটা অলক্ষিতভাবেই সৌমিত্রকে অপুর চরিত্রের জন্য তৈরি করে নিয়েছিলেন। 'পথের পাঁচালি'র পরে সত্যজিৎ রায় যখন 'অপরাজিত'-র অপুর জন্য কিশোর অভিনেতা খুঁজছেন, তখন তাঁরই একজন সহকারী সৌমিত্রকে রায়ের কাছে হাজির করেছিলেন। কিন্তু অপুর জন্য সৌমিত্রর বয়সটা বেশি ছিল, তাই নির্বাচিত হননি। অনেক পরে সৌমিত্র জেনেছিলেন, ট্রিলজির তৃতীয় পর্বে যুবক অপুর চরিত্রে অভিনয় করার জন্য তখন থেকেই সত্যজিৎ তাঁর কথা ভেবে রেখেছিলেন।'অপুর সংসার' করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর সৌমিত্রকে ডেকে পাঠালেন সত্যজিৎ। বললেন, বিভূতিভূষণের মূল উপন্যাসটা ঝালিয়ে নিতে। জানালেন ক্যামেরা টেস্ট ও ভয়েস টেস্ট-ও হবে! সৌমিত্রর ভাষায়, '' এই টেস্ট নেওয়ার ব্যাপারটা নিয়ে তখন বিশেষ কিছু ভাবিনি। মনে হয়েছিল সিনেমা তৈরি যে-দুটি যন্ত্রের ওপর প্রধানত নির্ভর করে, সে-দুটোর নিরিখে আমার উপযুক্ততা যাচাই করে নেওয়ার ইচ্ছেটা তো পরিচালকের পক্ষে খুবই স্বাভাবিক। কিন্তু বহু পরে আমার মনে হয়েছে যে সত্যজিৎ রায়ের মতো শিল্পীর অভিজ্ঞ চোখকে ক্যামেরা টেস্ট-এর জন্য নিশ্চয়ই অপেক্ষা করতে হয়নি-- আমার ছবি ক্যামেরায় কেমন আসবে তা বোঝার জন্য! ভয়েস টেস্টের ক্ষেত্রেও সেই একই কথা খাটে। আর সত্যিসত্যি যখন সত্যজিৎ রায় আমার ভয়েস টেস্ট নিলেন, তখন আসল শুটিং শুরু হতে আর বেশি দেরি নেই এবং তার আগে আমি জেনেই নিয়েছি যে আমি ওই চরিত্রের মনোনীত অভিনেতা। তাও যে ক্যামেরা টেস্ট নিয়েছিলেন, তার কারণ, একজন নবাগত যাতে ক্যামেরার সামনে অভিনয় করতে গিয়ে মানসিক অস্বাচ্ছন্দ্য বোধ না করে, ক্যামেরা যন্ত্রটার সঙ্গে তার যাতে একটা পরিচয় ঘটে, এই কথা ভেবেই। আমাকে চলচ্চিত্রের অভিনেতা হিসেবে প্রস্তুত করে নেওয়ার ওটা ছিল অন্যতম প্রক্রিয়া।''