#কলকাতা: করোনার প্রকোপে সমস্যায় প্রতিটি শিল্প। তবে পারফর্মিং আর্ট- মানে গান, নাচ বাদ্যযন্ত্র নাটকের সঙ্গে যুক্ত মানুষদের, খুবই করুণ অবস্থা। মঞ্চের শিল্পীদের আয় প্রায় বন্ধ। অনলাইন ক্লাস চালু হওয়ার সুবাদে, কয়েকজন শিল্পী প্রশিক্ষণ দিতে পারছেন ঠিকই। অনলাইন কনসার্ট, ডিজিটাল ক্লাস, এটাই কী দীর্ঘস্থায়ী হতে চলেছে? এই ধরনের সব প্রশ্নের উত্তর দিলেন স্বনামধন্য হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীত শিল্পী শুভা মুদগল। তাঁকে প্রশ্ন করলেন অপর সঙ্গীত শিল্পী কৌশিকী চক্রবর্তী। উঠে এলো নেপোটিজম প্রসঙ্গ। প্রভা খৈতান ফাউন্ডেশন আয়োজিত ওয়েবিনারে আড্ডা দিলেন দুই শিল্পী। শুনলো নিউজ 18 বাংলা।
শুভা মুদগলের মা-বাবা ছিলেন অধ্যাপক। ছোট থেকে সৃজনশীল কাজ ভাল লাগতো তাঁর। ছোটবেলা কত্থক শিখতেন শুভা। সঙ্গে শুরু হলো শাস্ত্রীয় সঙ্গীত চর্চা। রামাশ্রেয়া ঝাঁ-এর কাছে তালিম নিতে শুরু করলেন তিনি। বাড়ি থেকে কখনওই কোনও চাপ দেওয়া হতো না শুভাকে। স্নাতকতার পরীক্ষা দেওয়ার পর একদিন, শুভার মা ভবিষ্যৎ নিয়ে তাঁকে প্রশ্ন করেন। সঙ্গীতের প্রতি শুভার প্রেমের কথা মা জানতেন। কিন্তু শিল্পী হওয়ার জন্য যে ত্যাগ প্রয়োজন। তা তিনি করতে পারবেন কী না, সেটা ভেবে জানাতে বলেন। ভাবার জন্য এক বছর সময় দেন মা। এক মাসের মধ্যেই শুভা মাকে জানিয়ে দেন, যে সঙ্গীত নিয়েই এগোতে চান তিনি। এই ভাবেই যাত্রা শুরু।
ডিজিটাল দুনিয়ায় গুরুর কাছে তালিম নেওয়া কতটা গুরুত্বপূর্ণ। কৌশিকীর এই প্রশ্নের উত্তরে শুভা বলেন, ‘এখন অনেক কিছুই ইন্টারনেটে পাওয়া যায়। তবে গুরুর কাছে, শাসন মেনে শেখার উপকার অনেক। শিল্পী হওয়ার যাত্রাটা প্রয়োজন। ছাত্র অনুযায়ী গুরু তাঁর শিক্ষা দানের পদ্ধতি পাল্টান। রাগ, তাল, বন্দিস ছাড়াও, গুরুর সান্নিধ্যে থাকলে অনেক কিছু শেখা যায়। প্রবীন শিল্পীদের কেমন করে সন্মান করতে হয়, তাও গুরুই শেখান।’
কৌশিকীর পরের প্রশ্ন, ঘারনায় কতটা বিশ্বাস করেন তিনি? শুভার কথায়, ‘হিন্দুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের ক্ষেত্রে, ঘারনা খুবই জরুরি। ঘারনা গায়কী তৈরি করে। তবে ঘারনার মধ্যেও নিজস্বতা বজায় রাখা যায়। পণ্ডিত ভীমসেন জোশি ও গঙ্গুবাই হাঙ্গাল একই ঘারানার। কিন্তু দু’জনের গান গাওয়ার ধরন একেবার পৃথক।’
হিনদুস্থানি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের সঙ্গে ওতপ্রত ভাবে জড়িয়ে রয়েছে খানদান। এক সময় কোনও সঙ্গীত খানদানের সম্পর্কিত কেউ না হলে, তাবড় গুরুরা নাকি শিক্ষা দিতেন না। কৌশিকী নিজেও পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর মেয়ে। সেই একই প্রথা কোথাও যেন ফিরে এসেছে, শিল্পীদের মধ্যে। নেপোটিজম ঝড় বইছে সিনে ও শিল্প জগতে। এই নিয়ে কথা বললেন শুভা। ‘আমি মনে করি, কারও ছেলে-মেয়ে কিংবা ছাত্র হলেই লোকে তাঁর সঙ্গীত শুনতে চাইবেন না। প্রথম সুযোগ মিলতে পারে, দ্বিতীয় সুযোগ মিলতে পারে, তৃতীয়ও হয়তো পাওয়া যায়। কিন্তু মেধা না থাকলে, মানুষ নাকচ করেন। দর্শকের পছন্দ হলেই শিল্পী বেঁচে থাকতে পারেন।’
বর্তমান পরিস্থিতিতে, ওয়েব ক্যামের দিকে তাকিয়ে গান গেয়ে চলেছেন শিল্পীরা। এটাই কী ভবিষ্যৎ? শুভা জানালেন, ৩-৪ ঘণ্টা ব্যাপী কনসার্ট কবে সম্ভব, তা জনা নেই। অনলাইন কনসার্ট এই সময় অনিবার্য। তবে তা করতে হবে স্বল্প মেয়াদের। একজন শিল্পী ওয়েবে, আধ ঘণ্টা করে পারফর্ম করলে তা একঘেয়ে লাগবে না। অতীতে রেডিওতে সঙ্গীত পরিবেশন করার সময়, শিল্পীরা ১৫ মিনিটের বেশি সময় পেতেন না। অডিও ক্যাসেট আসার পর, ৩-৪ মিনিট করে হতো একটা পারফরমেন্সের রেকর্ডিং। সেটাও করেছেন তিনি। তাই নতুন বাস্তবের সঙ্গে তাল মেলাতে অসুবিধে হচ্ছে ঠিকই, তবে অসম্ভব মনে হচ্ছে না শুভার।
শুভা মুদগল একজন ইন্ডি পপ স্টার। বেশ কয়েকটি বলিউড ছবিতে গেয়েছেন তিনি। তবে ছবিতে গাওয়ার প্রসঙ্গে, শুভার একটি মত রয়েছে। তাঁর কথায়, ‘প্লে ব্যাক ভীষণ কঠিন একটা জিনিস। সেটা গান জানলেই সম্ভব হয় না। ছবিতে চড়া পিচে গান গাওয়ানোর একটা প্রথা রয়েছে। যখন নায়ক-নায়িকারা কথা বলছেন, তখন ভারী নরম গলা তাঁদের। গাইলেই গলা চড়া হয়ে যায়। এটা একটু অদ্ভুত। আর আমি তো বলিউডের জোগন। ওরকম গানই নাকি আমার গলায় মানায় ভাল।’